বিসিএস প্রস্তুতি অনেকের মতো গোছানো ছিল না: নয়ন

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৫:৩৬ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২৫

মো. আশিকুর রহমান নয়ন ৪১তম বিসিএসে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডার পেয়েছেন। তিনি লাঙ্গলবাঁধ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং আদিল উদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ও এমএসসি সম্পন্ন করেন। তার বিসিএস যাত্রার গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—
মো. আশিকুর রহমান নয়ন: আমার জন্ম ও শৈশব কেটেছে একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার একদম শেষ প্রান্তে। লাঙ্গলবাঁধে আমাদের বাড়ি, যা ঝিনাইদহ, মাগুরা ও রাজবাড়ী জেলার সংযোগস্থলে অবস্থিত। আমার বাবা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং মা গৃহিণী। আমরা তিন ভাই বোন—আমি, আমার ছোট বোন এবং ছোট ভাই। শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেই। তবে গ্রামবাংলার খোলা পরিবেশ, সবুজ মাঠ আর মুক্ত আকাশের নিচে বড় হওয়াটা ছিল এক বিশেষ আশীর্বাদ। আমার ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সময়টুকু কেটেছে গ্রামেই। যেখানে প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর মানুষের সরলতা আমার বেড়ে ওঠার অন্যতম অংশ হয়ে আছে। তবে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মাঝেও পরিবার সব সময় আমাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: বিসিএসের ভাবনা মাথায় এলো কিভাবে?
মো. আশিকুর রহমান নয়ন: প্রথমদিকে বিসিএস নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ব্যক্তিগতভাবে আমি ব্যবসায়িক দিকটাই বেশি পছন্দ করতাম। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করি এবং আপওয়ার্কে বিশ্বের শীর্ষ ৩% ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে জায়গা করে নিই। পাশাপাশি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতেও কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকলেও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তুলনামূলক কম ছিল। পারিপার্শ্বিক চাপ ও কাছের মানুষদের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিসিএসের পথে আগানোর সিদ্ধান্ত নিই। এরই মাঝে কুয়েটে টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করি।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মো. আশিকুর রহমান নয়ন: আমার বিসিএস প্রস্তুতি অনেকের মতো গুছিয়ে নেওয়া হয়নি। আমি যেসব বিষয়ে বেশি দক্ষ ছিলাম; সেগুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য মূলত পূর্ববর্তী বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, সাম্প্রতিক জব সল্যুশন্স এবং একটি ডাইজেস্ট পড়েছিলাম। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মাত্র আড়াই মাস রিটেন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই। যেখানে অনেকেই ১ থেকে ১.৫ বছর আগে থেকেই রিটেনের জন্য পড়াশোনা শুরু করেছিল। করোনার কারণে প্রিলি পরীক্ষা নেওয়া এবং রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় সময় কম পেয়েছিলাম। তবে যতটুকু সময় পেয়েছি; সেটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। ভাইভার জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়নি। অনলাইনে বিভিন্ন তথ্য জানার চেষ্টা করতাম, যা ভাইভায় বেশ কাজে দিয়েছে। তবে আমি ভাগ্যের ওপর বিশ্বাসী। আল্লাহ ভাগ্যে রেখেছিলেন বলেই আজ এখানে আসতে পেরেছি। পরবর্তীতে ৪১তম বিসিএসে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে গেজেটেড হই এবং চাকরিতে যোগদান করি। তবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, ক্যাডার সার্ভিস মূলত অন্য চাকরির মতোই একটি চাকরি। বর্তমানে সামাজিক ও গণমাধ্যম প্রচারণার ফলে বিসিএসকে অতিমাত্রায় কাঙ্ক্ষিত ও বিশেষ কিছু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতা থেকে কিছুটা ভিন্ন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: ৪১তম বিসিএসে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
মো. আশিকুর রহমান নয়ন: অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডার আমার চতুর্থ পছন্দ ছিল। তাই শুরুতে এই ক্যাডার সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা ছিল না। ফল প্রকাশের পর প্রথমদিকে মনের মধ্যে কিছুটা হতাশা কাজ করেছিল। তবে পরবর্তীতে কয়েকজন অভিজ্ঞ সিনিয়রের সঙ্গে কথা বলে ক্যাডারটির গুরুত্ব ও সম্ভাবনার ব্যাপারে জানতে পারি, যা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। বিসিএসে যোগদানের পর ক্যাডারটির প্রকৃতি, দায়িত্ব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি। এখন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে গর্ব অনুভব করি। আমি মনে করি, দেশের আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পেয়েছি।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. আশিকুর রহমান নয়ন: আমার জীবনের প্রতিটি ধাপে অনেকের কাছ থেকেই প্রেরণা পেয়েছি। তবে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমার বাবা-মায়ের নিঃশর্ত বিশ্বাস, আস্থা এবং দোয়া। তাঁদের অব্যাহত সমর্থন আমাকে সব সময় এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার রেজাল্টের কিছুদিন আগেই আমি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। সেই সময় থেকে আমার স্ত্রী আমাকে সম্পূর্ণভাবে মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন। তিনি আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেছেন নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। কঠিন সময়গুলোতে তিনি পাশে ছিলেন, সাহস জুগিয়েছেন এবং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছেন। আমি এই মানুষগুলোর প্রতি চির কৃতজ্ঞ। কারণ তাদের ভালোবাসা, সমর্থন এবং অনুপ্রেরণাই আমাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মো. আশিকুর রহমান নয়ন: নতুনদের জন্য বিসিএস প্রস্তুতির পথ শুরু করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেকে জানা। নিজের শক্তি, দুর্বলতা এবং মানসিক সহ্য ক্ষমতা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। কারণ এই পথ দীর্ঘ এবং কঠিন। ধৈর্য, অধ্যবসায় ও মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজন হবে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করাই উত্তম। প্রথমেই বিসিএসের সিলেবাস ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। কোন কোন বিষয়ে নিজে দক্ষ, তা চিহ্নিত করে সেই বিষয়গুলোর প্রস্তুতি আগে নিতে হবে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহও টিকে থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এই দীর্ঘ পথচলায় ধৈর্য হারানো যাবে না। অধ্যবসায়ের সঙ্গে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে এবং কখনোই মাঝপথে হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম ও স্থির লক্ষ্য থাকলে সফলতা ধরা দেবেই।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. আশিকুর রহমান নয়ন: ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুব বেশি ভাবি না। বরং বর্তমানে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার দিকেই বেশি মনোযোগ দিই। তবে অ্যাকাডেমিকভাবে আরও এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। ব্যক্তিগতভাবে পরিবেশ বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করার প্রবল আগ্রহ রয়েছে, তাই ভবিষ্যতে এই বিষয়ে পিএইচডি করার পরিকল্পনা আছে। এর আগে ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট বা অডিট সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে মাস্টার্স করারও ইচ্ছে রয়েছে। যেখানে যেভাবেই থাকি, নিজের দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করাই আমার প্রধান লক্ষ্য।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।