নতুনরা যেভাবে বিসিএসের প্রস্তুতি নেবেন
আহমেদ আলী আদনান ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার নূতন অনন্তপুর গ্রামে। আদনানের বাবা-মা শিক্ষকতা করেন। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাস করেন।
এর আগে তিনি সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার (২০১৯ সাল ভিত্তিক) হিসেবে এবং বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি ৪৩তম বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন?
আহমেদ আলী আদনান: অনুভূতি অসাধারণ ছিল! যেদিন রেজাল্ট প্রকাশিত হয়; ওইদিন আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার অফিসেই ছিলাম। বিকেলে অফিস শেষে বের হবো, এমন সময় দেখি রেজাল্ট দিয়েছে। অনেক ভয়ে রেজাল্টের পিডিএফ ওপেন করি। কিন্ত একবারেই নিজের রোল সার্চ দেওয়ার সাহস হয়নি। প্রথমে জেনারেল ক্যাডারের মধ্যে যেসব ক্যাডারে পোস্ট তুলনামূলক কম; সেসব ক্যাডারে নিজের রোল খুঁজি। কিন্তু পররাষ্ট্র, ট্যাক্স, পুলিশ, কাস্টমস—কোথাও নিজের রোল না দেখে হতাশ হলাম। প্রশাসন ক্যাডারে যেহেতু ৩০০ জন, এতগুলো রোলের মধ্যে আর ম্যানুয়ালি খোঁজার চেষ্টা করা সম্ভব না ভেবে বাধ্য হয়ে ভয়ে ভয়ে সার্চ দিই। নিজের রোলটা যখন প্রশাসনে সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে দেখলাম, বিশ্বাসই হচ্ছিল না! যদিও জব পাওয়ার অনুভূতি ইতোপূর্বে দুইবার হয়েছে। কিন্ত বিসিএসের রেজাল্টশিটে নিজের রোল দেখার অনুভূতি অদ্বিতীয় এবং একইসাথে অসাধারণ!
জাগো নিউজ: বিসিএস দেবেন এমন ভাবনা মাথায় এলো কীভাবে?
আহমেদ আলী আদনান: বিসিএসের স্বপ্ন শুরুতে সেভাবে ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে থাকতে আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন সিনিয়র ভাই বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে ৭ম হোন। তিনি তখন আমেরিকায় পিএইচডি করতে গেছেন। কিন্ত যাওয়ার আগে একটা বিসিএসে ভাইভা দিয়ে গেছেন। তার সঙ্গে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে প্রিপারেশন নিয়ে কিছু কথা হয়। তখন প্রথম বিসিএস সম্পর্কে কিছু ধারণা পাই। ভাই পরে পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদান করেন। তখনই মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল, যদি আমি বাইরেও যাই—ভাইয়ের মতো একটা বিসিএস দিবো। পরবর্তীতে জিআরই দিলেও বাইরে যাওয়া হয়নি ব্যক্তিগত কারণে। পরে জবের প্রিপারেশন শুরু করি। জবের প্রিপারেশন নিতে গিয়ে লক্ষ্য করি, বিসিএসের প্রিপারেশন নিলে ব্যাংক ও অন্যান্য জবের প্রস্তুতি একসঙ্গেই হয়ে যায়। এজন্য শুরুতে বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রতিটি ধাপ পার হয়ে যাই!
- আরও পড়ুন
বিসিএস জয়ে গ্রুপ স্ট্যাডিকে প্রাধান্য দিয়েছি: ইমাম হোসেন
যত আগে প্রস্তুতি; তত আগে ক্যাডার: আলমগীর হোসেন
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
আহমেদ আলী আদনান: ২০২১ সালের শুরুর দিক থেকে মূলত ফোকাসড হয়ে জবের প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ৪৩তমের প্রিলিমিনারি টার্গেট করে পড়া শুরু করি। সত্যি বলতে, বিসিএসের প্রিলিমিনারি পড়তে গিয়ে দেখি, পড়ালেখার জীবনে পূর্বের অনেক পড়াই কাজে লেগে যাচ্ছে। সেই ক্যাডেট কোচিংয়ে বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা প্রথম পত্রের কবি পরিচিতি, ইংরেজি গ্রামার। সেই থেকে শুরু করে মাঝে জিআরইর জন্য পড়া ভোকাব্যুলারি ও ম্যাথের বেসিক কনসেপ্ট; এগুলো সবই বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। তাই প্রিলির প্রিপারেশনে খুব স্ট্রাগল করতে হয়নি। তবে অক্টোবরে যখন পরীক্ষা হলো, মার্কস আন্দাজ করে বুঝে গিয়েছিলাম যে প্রিলিমিনারি পাস করবো হয়তো। রিটেন প্রিপারেশনে এসে বিশাল এক সিলেবাস দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। রিটেনের জন্য একটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে কিছু এক্সাম দিয়েছি। রিটেনের সিলেবাস যেহেতু অনেক বড়, তাই সবগুলো বিষয়ে যে যে অংশে মিল খুঁজে পেয়েছি। সেগুলোকে আলাদা করে সিলেবাস কিছুটা ছোট করেছি। তারপর সে অংশগুলোতে জোর দিয়েছি। এতে সিলেবাস মোটামুটি কাভার হয়েছে। পরে ফাইনালি রিটেন এক্সামের ১১০০ মার্কসের সব লিখে দিয়ে আসার টার্গেট নিয়ে এক্সাম হলে যাই। মোটামুটি সবই লিখে দিয়ে আসতে পেরেছিলাম! এরপর ভাইবা পরীক্ষাও ভালো হয়।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
আহমেদ আলী আদনান: আমার মা! আমার জীবনে যতটুকু অর্জন, তার কৃতিত্ব আমি মহান আল্লাহর পর আমার বাবা-মাকেই দেবো। মায়ের নাম বিশেষ করে বলবো, কারণ আমার জন্য তিনি অনেক স্ট্রাগল করেছেন। যখনই হতাশ হয়েছি, তার দৃঢ় বিশ্বাস আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। শেষদিকে ভাইভার সময় আমার স্ত্রীও আমাকে সাহস জুগিয়েছে।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
আহমেদ আলী আদনান: যে কোনো বিষয়ের বেসিকের ওপর কাজ করতে হবে। বিসিএস বা যে কোনো এক্সামে বেসিক ভালো থাকলে এক্সামগুলো তুলনামূলক কম কঠিন লাগে। কিন্তু বেসিক খারাপ থাকলে দীর্ঘদিন পড়েও আশানুরূপ রেজাল্ট না-ও মিলতে পারে। নিয়মিত পেপার পড়া, ভোকাব্যুলারি বাড়ানো, ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং স্কিল বাড়ানো, নিজে নিজে বিভিন্ন টপিকে ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং অনুশীলন করতে হবে। যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সায়েন্স না বা যারা ম্যাথে কিছুটা দুর্বল তারা আগে থেকেই ম্যাথ প্রাকটিসের মধ্যে রাখতে পারেন।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আহমেদ আলী আদনান: ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা ভাবনা নেই। অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে যতটা কম ভাবা যায়; তত ভালো। আমি মনে করি, আমাদের প্রত্যেকের উচিত বর্তমান মুহূর্তে থাকা, বর্তমান মুহূর্তে থেকে নিজের কাজটুকু করে যাওয়া। তারপরও বলবো, ভবিষ্যতে সৎ থাকতে চাই। নিজে সৎ থেকে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে চাই।
এসইউ/এএসএম