৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি কেমন হবে?

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০১:৩৪ পিএম, ৩০ জুন ২০২৪

৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসের দিকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সময়টুকু কাজে লাগিয়ে গুছিয়ে পড়লে প্রিলিমিনারিতে সফল হওয়া সম্ভব। প্রস্তুতি সঠিক মাত্রায় হলে তা লিখিত পরীক্ষার জন্যও ৬০-৭০ শতাংশ এগিয়ে রাখবে। ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির আদ্যোপান্ত নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী শানিরুল ইসলাম শাওন

সিলেবাস

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস জানা আছে সবার? আপনারা পিএসসির ওয়েবসাইটে বিস্তারিত বিষয়ভিত্তিক অধ্যায়ের নামসহ সিলেবাস পেয়ে যাবেন। প্রথমেই প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ২০০ নম্বরের ব্রেক ডাউনটুকু একবার দেখুন—
>> বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণ-৩৫ (সাহিত্য-২০, ব্যাকরণ-১৫)
>> ইংরেজি গ্রামার ও লিটারেচার-৩৫ (গ্রামার-২০, লিটারেচার-১৫)
>> বাংলাদেশ বিষয়াবলি-৩০
>> আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি-২০
>> ভূগোল-১০
>> গাণিতিক যুক্তি-১৫
>> মানসিক দক্ষতা-১৫
>> দৈনন্দিন বিজ্ঞান-১৫
>> কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি-১৫
>> নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন-১০

আরও পড়ুন

পড়াশোনা শুরু করবেন যেভাবে

১. প্রস্তুতির শুরুতেই প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ভালো ধারণা প্রয়োজন। তাই শুরুতেই বিগত বছরের প্রিলিমিনারি প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলুন। ভালো মানের একটি সহায়ক বই থেকে প্রশ্নগুলোর উত্তর আয়ত্ত করবেন, কেন এর উত্তর হলো তার ব্যাখ্যা পড়বেন আর অন্যান্য অপশন সম্পর্কে সম্পূরক তথ্যাদি পড়বেন। প্রথম প্রথম এগুলো ভালো মনে থাকবে না। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, প্রথমবারের পড়া আপনাকে প্রশ্নের ধরন ও বর্তমান চলমান ট্রেন্ডের সাথে পরিচিত করিয়ে দেবে।

২. ১০টির মধ্যে আপনার যে বিষয় পড়তে সবচেয়ে ভালো লাগে, সেটি দিয়েই শুরু করুন। তাহলে পড়ায় আগ্রহ তৈরি হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য বিষয় শুরু করবেন।

৩. সহায়ক বইয়ের যে কোনো অধ্যায় পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি কালো, নীল বা লাল কালিতে গুরুত্বভেদে দাগিয়ে রাখবেন। পরবর্তীতে পরীক্ষার আগে স্বল্প সময়ে রিভিশন দিতে তা খুবই সহায়ক হবে।

৪. প্রতিটি অধ্যায় পড়া শেষে তার বিগত বছরের সব চাকরি পরীক্ষায় আসা সব প্রশ্ন পড়বেন। উত্তর হওয়ার যৌক্তিকতা ও অন্যান্য ব্যাখ্যাও পড়ে নেবেন। যে প্রশ্নের উত্তর আপনি পারেননি, সেটি চিহ্নিত করে রাখবেন। রিভিশনের সময় তা দেখে আপনি সতর্ক হতে পারবেন।

৫. প্রস্তুতি শুরু করার পর ৩-৪ মাস অতিবাহিত হলে তখন ভালো মানের একটি ‘জব সল্যুশন’ পড়বেন। বইটি মূলত বিগত প্রায় ১৫ বছরের প্রায় সব চাকরি পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান ব্যাংক। এ বইয়ের এমসিকিউগুলো পড়ার সময় আপনার না জানা প্রশ্ন বা উত্তরগুলোর পাশে দাগিয়ে রাখবেন, যেন পরেরবার রিভিশন দেওয়া সহজ হয়। এই জব সল্যুশন বইটি ৩-৪ বার রিভিশন দেবেন। জব সল্যুশন পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন আসার হার বাড়িয়ে দেবে।

৬. জব সল্যুশন পড়ার সময় এবার বিগত ১০-৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্নগুলো আবার ব্যাখ্যাসহ পড়বেন। পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো পড়বেন। এবারের পড়াগুলো সহজে বুঝবেন এবং মাথায় গেঁথে রাখবেন। আর লিখিত প্রশ্নগুলো পড়লে আপনি প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসের বেশ মিল খুঁজে পাবেন। এ মিল আপনাকে লিখিত পরীক্ষার জন্যও কার্যকরী পড়া পড়তে সহায়তা করবে।

৭. পড়ার টেবিলের সামনে একটি বিশ্ব মানচিত্র টানিয়ে রাখবেন। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রামের সময় ম্যাপের দিকে তাকিয়ে অঞ্চল চেনার চেষ্টা করবেন। ম্যাপ যেন ভালোভাবে আয়ত্ত হয়।

৮. শুরু থেকেই দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রতিদিন বিশ মিনিটের মতো প্রথম পাতা, বিশ্ব পাতা, বাণিজ্য ও সরকারি খবর পড়বেন। সপ্তাহে ১-২ দিন ইংরেজি দৈনিক পড়বেন। মাসিক ম্যাগাজিনগুলো সংগ্রহ করে পড়বেন প্রতি মাসে। অনেক বিষয়ে আপডেট থাকতে পারবেন ও প্রতিনিয়ত অনুষ্ঠিত চাকরি পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান পাবেন।

৯. পড়ার সময় কঠিন মনে হওয়া বিষয়গুলো খাতায় ছোট ছোট করে নোট নিয়ে রাখবেন। চর্চাও হবে, আবার পরবর্তী রিভিশনে সহায়কও হবে।

১০. শুরুতেই একই বিষয়ের একাধিক বই কিনবেন না। একাধিক বইয়ের নানা তথ্যাদি আপনাকে বিভ্রান্ত করবে। তার চেয়ে শুরুতে একটি বই কিনে কমপক্ষে দুই-তিনবার পড়া শেষ হলে তারপর আরেকটি বই কিনে অতিরিক্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারেন। বইয়ের কোনো টপিক কঠিন মনে হলে ৮ম বা ৯ম-১০ম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে তা পড়ে নিতে পারেন। কারণ বোর্ড বইতে সহজ ভাষায় আলোচনা থাকে।

আরও পড়ুন

দৈনন্দিন জীবনযাপন

• পড়ার টেবিলে সময় দিতে হবে। জানার, শেখার আগ্রহ যেন থাকে। তবে শুরুর দিকে বেশিক্ষণ পড়তে পারবেন না। তাই প্রথমদিকে অল্প সময় (৪-৫ ঘণ্টা) টার্গেট সেট করে পড়বেন। প্রতি আধা ঘণ্টা পড়ার পর ৫ মিনিট ব্রেক নেবেন। এভাবে কিছুদিন পর দেখবেন নিজ থেকেই দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা আপনি পড়তে পারছেন।

• পড়া যেন কার্যকরী হয়। পড়ার সময় অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা, ফোন ব্যবহার, গান শোনা, ফোনে কথা বলা ইত্যাদি কাজ থেকে একদম বিরত থাকবেন।

• প্রস্তুতির দুই থেকে আড়াই বছর আপনার জীবনের উৎসর্গের কাল। তাই মুভি, সিরিজ দেখা, আউটিং ইত্যাদি বিষয়ে যথাসম্ভব কম মাত্রায় সময় ব্যয় করবেন।

• বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কম দেবেন। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে দেখা করলেও সময় মেপে তা করবেন।

• সমমনা কয়েকজন একসঙ্গে প্রিপারেশন নিতে পারেন। গ্রুপ-স্ট্যাডি অনেক ক্ষেত্রেই বেশ সাহায্যকারী হয়। দৈনন্দিন কথা-বার্তার মাঝে প্রশ্ন-উত্তর খেলা, কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বোধগম্য করে নেওয়া ইত্যাদি আপনার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

• কঠিন বিষয়গুলোর ব্যাপারে ইউটিউবে এবং ফেসবুকে শিক্ষণীয় ছোট ছোট ভিডিও বা আর্টিকেল পাওয়া যায়। দিনের শেষে তা ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন। ফেসবুকে শিক্ষণীয় কিছু গ্রুপ থাকে বিসিএস প্রস্তুতির। এগুলোতে পরিমিত মাত্রায় যুক্ত থেকে উপকৃত হতে পারেন।

• এ সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সাবধান থাকুন। রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং বিতর্কিত বিষয় থেকে নিজেকে সযত্নে এড়িয়ে চলুন।

• মনে রাখবেন ‘Self Investment is the Best Investment’। আর ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’। তাই প্রয়োজনবোধে বই কিনবেন। বই আপনার সব সময়ের বন্ধু।

• যদি টিউশন করাতেই হয় তবে ৮ম বা ৯ম-১০ম শ্রেণির স্টুডেন্ট পড়ানোর চেষ্টা করবেন। ছাত্র পড়ানোর সাথে সাথে আপনার প্রস্তুতিও এগোবে।

• অবশ্যই পরিবার, শিক্ষক ও বড়দের শ্রদ্ধা ও সম্মান করবেন। কারো সাথেই বিরোধে জড়াবেন না। আপনার সুশীল হওয়ার অনুশীলন শুরু হোক এখনই।

আরও পড়ুন

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি

১. বাংলা ব্যাকরণ অংশের জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণির বোর্ড বই পড়বেন। সাহিত্য অংশে প্রাচীন যুগের ১-২ নাম্বারের জন্য এই অংশে কম সময় দেবেন। আর অতীতে আসা প্রশ্নের সংখ্যা দেখে গুরুত্বপূর্ণ ৫০ লেখক নির্ধারণ করে পড়ে ফেলবেন।

২. ভোকাব্যুলারি দৈনন্দিন চর্চার বিষয়, ভালো করে লিখে লিখে পড়বেন। গ্রামার অংশ বুঝে পড়ার জন্য এবং অধিক অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনে পৃথক পৃথক দুটি বই ব্যবহার করতে পারেন। লিটারেচার অংশ কঠিন মনে হলে জাস্ট সব প্রিভিয়াস কোয়েশ্চেন আর গুরুত্বপূর্ণ ৭-৮ জন লেখক পড়ে ফেলবেন।

৩. বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ভৌগোলিক অবস্থান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, ১৯৪৭-১৯৭০, অর্থনীতি, সরকারের গঠন, সংবিধান, ইত্যাদি অধ্যায়গুলো ভালোভাবে কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে পড়বেন। সাথে সব অতীত প্রশ্ন পড়ে ফেলবেন।

৪. সাধারণ জ্ঞান অংশে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি তুলনামূলক কঠিন। এ বিষয়ে প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিতেই আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি অঞ্চল সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেবেন। প্রিভিয়াস সব প্রশ্ন আর পরীক্ষার পূর্বের ৫-৬ মাসের ঘটনাবলি সম্পর্কে ধারণা রাখবেন।

৫. ভূগোলের বেশিরভাগ পড়াই (প্রায় ৭০ শতাংশের মতো) বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বিষয়ে কভার হয়ে যাবে। বাকি অংশের জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণির ভূগোল বই ও সব প্রিভিয়াস কোয়েশ্চেন পড়বেন।

৬. বিসিএস পরীক্ষায় গাণিতিক যুক্তি অংশের মূলভিত্তি হলো ৯ম-১০ম শ্রেণির সাধারণ গণিত বই। এ বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক নিয়ম ধরে ধরে গণিত চর্চা করবেন। শর্টকাট মুখস্থ করতে যাবেন না। আগে ভালোভাবে নিয়মানুযায়ী গণিত করে ধারণা স্পষ্ট করে পরে তার শর্টকাট ব্যবহার করবেন।

৭. মানসিক যুক্তি অংশের বেশ কিছু পড়া বাংলা ব্যাকরণ আর ইংরেজি ভোকাব্যুলারি চর্চার মাধ্যমে কাভার হয়ে যাবে। আর কৌশলের জন্য ইউটিউবে অনেক ভালো ভিডিও পাবেন। এগুলো দেখে অনেক স্ট্র্যাটেজি জানতে পারবেন। গুগলে ‘Mental Ability Test’ লিখে সার্চ করলে অনেক সাইট পাবেন বিনা মূল্যে নিত্য নতুন প্রশ্ন চর্চা করার জন্য। এর পাশাপাশি পূর্বের সব প্রশ্ন চর্চা করে নেবেন।

৮. দৈনন্দিন বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক প্রশ্নগুলো কঠিন হয়। তাই ৯ম-১০ম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বোর্ড বই পড়ে ধারণা স্পষ্ট করে নিতে পারেন। পাশাপাশি সহায়ক একটি বই জোগাড় করে নেবেন যেটার ভাষা সহজ। কঠিন মনে হলে শুধু সব পরীক্ষার পূর্বে আসা প্রশ্নগুলো ভালোভাবে ব্যাখ্যাসহ পড়ে নেবেন।

৯. কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি অংশও সাম্প্রতিক পরীক্ষাগুলোতে কঠিন হয়। এ অংশের জন্য একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির আইসিটি বইটি পড়তে হবে। সহায়ক বই থেকে কনসেপ্ট স্পষ্ট করে পড়ার চেষ্টা করবেন। শুধু মুখস্থ করে কিন্তু মনে রাখতে পারবেন না। বিগত প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ পড়বেন।

১০. নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশ তুলনামূলক কঠিন। প্রশ্ন ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সব বিগত প্রশ্ন পড়ে নিলে ৩ নাম্বার কমন পাবেন। পাশাপাশি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন বইটি পড়তে পারেন কমন পাওয়ার হার বাড়ানোর জন্য।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।