বিজেএস পরীক্ষা

শেষদিনের প্রস্তুতি ও পরীক্ষার হলে করণীয়

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২১ পিএম, ০৩ মে ২০২৪

আগামীকাল ৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএস) প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মূল নির্ণায়ক লিখিত পরীক্ষার টিকিট পাবেন প্রার্থীরা। তাই প্রস্তুতির শেষদিন কোন কোন কোর্স বেশি পড়বেন ও পরীক্ষার হলে কী কী করবেন? নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তা বিস্তারিত জানাচ্ছেন ১৫তম জুডিশিয়ারিতে ‘সহকারী জজ’ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত নাজমুল হাসান। পরামর্শ নিয়েছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার

১. আইনের অংশে বেশি সময় দিন। আইনপাঠের এমসিকিউগুলো পড়ার কথা বলছি না, পড়বেন আইনপাঠের কনসেপ্ট রাইটিংগুলো। আগের পড়া রিভাইজ দিন, নতুন কিছু এখন না পড়াই ভালো।

২. আইনের মধ্যে কিছু আইন আছে, যেগুলো আপনি এখনো যদি মন দিয়ে রিভিশন দেন, আপনাকে ফেল করানো মুশকিল হবে। যেমন: সংবিধান, পারিবারিক আইন (মুসলিম আইন প্রাধান্য দিন), দণ্ডবিধি, সাক্ষ্য আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, স্পেশাল ল’ ১ এর সব আইন শেষ মুহূর্তে বারবার রিভিশন দিন।

৩. যারা সব সময় লিখে পড়ার অভ্যাস, তারা এদিন লেখা বন্ধ রাখুন। যত বেশি সম্ভব সংখ্যাভিত্তিক তথ্য মনে রাখার অনুশীলন করুন।

৪. এ মুহূর্তে মডেল টেস্ট দেওয়ার পক্ষে না আমি, কম নম্বর পেলে এটা আপনাকে নেতিবাচক মন-মানসিকতা নিয়ে হলে ঢুকতে বাধ্য করবে। প্রিলি পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাওয়াটা জরুরি।

৫. এ সময়ে এসে কোন বন্ধু কী পড়ছে, আপনি সেটা পড়ছেন কি না, না পড়ার কারণে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল—এসব ভাবার কিছু নেই। সার্কেলে প্যানিক সৃষ্টিকারী বন্ধু-বান্ধবী থাকলে তাদের সাথে যোগাযোগ না করার প্ল্যান করুন। একটা মাছিও এক বালতি দুধ নষ্ট করে দেয়, এটা মনে রাখবেন। আপনার মানসিক শান্তি ও শক্তি অন্য কেউ যেন নষ্ট না করে—এটা নিশ্চিত করুন।

৬. শেষ সময়ে জেনারেলে সময় দেওয়ার পক্ষে আমি না। কারণ এ অংশের সিলেবাসের নির্দিষ্ট কোনো পরিধি নেই, অথই সাগর। তবুও আপনার যদি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ থাকে যে, আইনের অংশে আপনার প্রস্তুতি বেশ ভালো, আইন না দেখলেও আইনে ভালো করবো, তাহলে সেক্ষেত্রে ১০-৪৬তম বিসিএস প্রিলির বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও আন্তজার্তিক অংশের এমসিকিউগুলোর ব্যাখ্যাসহ উত্তরগুলো পড়ুন। এগিয়ে থাকবেন।

৭. জাস্টিস হামিদুল হক স্যারের বইটি থেকে দেওয়ানি ও ফৌজদারী অংশের ধারা, অর্ডার ও রুলগুলো একবার চোখ বুলিয়ে যান, ৪-৫টিিএমসিকিউ সরাসরি কমন আসবে।

৮. নিয়মিত প্রার্থনা করুন। ভাগ্যবানের ভাগ্য, পরিশ্রমীর পরিশ্রম—কোনোটাই কাজে আসে না, যদি না আল্লাহ চান। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুণ ও পর্যাপ্ত ঘুমান। সুস্থ থেকে পরীক্ষাটি দিন।

পরীক্ষার হলে করণীয়
ক. প্রশ্নের শুরুতে যে কোর্সের প্রশ্ন থাকুক না কেন, শুরু করবেন আপনার স্ট্রং জোন দিয়ে। ধরুন, আপনার প্রশ্ন শুরু হলো সি আর পি সি দিয়ে। যদি আপনি বিশ্বাস করেন, আপনি এ কোর্সে দুর্বল, তাহলে এটি দিয়ে দাগানো শুরু করবেন না। আবার যদি আপনি বিশ্বাস করেন, আপনি পেনাল কোডে স্ট্রং। তাহলে প্রশ্নে কোথায় পেনাল কোড আছে, তা বের করুন। সেখান থেকে দাগানো শুরু করুন।

খ. একটি জোনে আপনি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন—এমনটা না-ও হতে পারে। ভুল হতেই পারে, আনকমন পড়তেই পারে—এটা মেনে নিন। এটা নিয়ে হলে বসেই প্যানিকড হওয়া যাবে না। এক ঘণ্টার পরীক্ষায় যদি আপনি ১০ মিনিট প্যানিকড থাকেন। আপনি এলিমেনেটেড হয়ে গেলেন অলরেডি। শক্ত থাকুন, প্রশ্নগুলো ও অপশনগুলো দ্রুত পড়ে ফেলুন।

গ. কিছু প্রশ্ন থাকবে খুবই অদ্ভুত ও জটিল প্রকৃতির, কিন্তু কমন টপিক থেকে। হতে পারে আইনের বা সাধারণ জ্ঞানের। এগুলো দেওয়া হয় আপনার সময় নষ্ট করার জন্য, ভীত করার জন্য, মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য। বাজারে এত এত মডেল টেস্ট, কিন্তু এরকম প্রশ্ন মডেল টেস্টগুলোতে তেমন নেই। যাই হোক, এ ধরনের প্রশ্ন দেওয়া হয় আপনাকে ফেল করাতে। এ প্রশ্নগুলো এড়িয়ে চলুন। আমার পরিচিত একজন, ৫ মিনিট সময় খরচ করে একটা ম্যাথ মিলিয়ে ছিল, পরে সব প্রশ্ন পড়তেও পারেননি। আপনি যেন এমনটা না করেন, এটি খেয়াল রাখবেন। মনে রাখতে হবে, প্রিলিমিনারি হলো বাদ দেওয়ার পরীক্ষা।

ঘ. কিছু প্রশ্ন আসবে Absolutely Clueless! কখনো এ প্রশ্ন আপনি কোথাও দেখেননি। এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দাগাবেন না। নেগেটিভ মার্কিং ট্রাপে আপনি পাসের জায়গায় ফেল করতে পারেন, তাই নিষেধ করলাম।

ঙ. ৫০/৫০ বা ৭৫/২৫% সিওর যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার মনে হচ্ছে, দাগিয়ে দিয়ে আসবেন। যে সমস্ত প্রিলি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক ০.২৫, সেসমস্ত পরীক্ষায় আপনাকে এ ঝুঁকিটা নিতে হবে।

চ. সাইডম্যান যেই পড়ুক, পরীক্ষা চলাকালে কোনো কথা বা তথ্য শেয়ার করবেন না। হলগার্ড খুব কড়া হয়। লেনদেন করতে গিয়ে ধরা পড়লে উত্তরপত্র বাতিল হতে পারে।

ছ. সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিটি এমসিকিউয়ের জন্য ৩৬ সেকেন্ড সময়। কোনো এমসিকিউতে বেশি সময় দিয়ে বা সময় নষ্ট না করে, প্রতিটি এমসিকিউ পড়তে হবে, উত্তর করবো, এ চেষ্টা করুন। সহজ এমসিকিউ আগেই বাছাই করুন। কনফিউজড এমসিকিউগুলোতে নিজে বিশেষ চিহ্ন দিন, যাতে পরে আবার খুঁজে পেতে সহজ হয়।

জ. ম্যাথ (সাধারণ গণিত ও ইনহেরিটেন্স) সবার শেষে দাগাবেন, শুরুতে দাগালে টাইম ওয়েস্ট হতে পারে। এক্সপার্ট হলে ভিন্ন ব্যাপার।

ঝ. কম হলে ৬০-৬৫টি দাগাবেন। যেখানে ১৫টি ভুল দাগাবেন না। ওভার সিওর না হলেও ৭৫-৮৫টি দাগিয়ে আসুন। কম দাগিয়ে ফেল করার চেয়ে, বেশি দাগিয়ে ফেল করা ভালো।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।