ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরামর্শ

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৫:৫৩ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০২৪
পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক প্রবাল চক্রবর্তী

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংকের ২০২১ সালভিত্তিক ‘অফিসার (জেনারেল)’–এর দুই হাজার ৭৭৫টি শূন্য পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৯ এপ্রিল। এ পদে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৫ হাজার ৪৭৬ জন।

অনেকের জন্য হয়তো এটাই প্রথম লিখিত পরীক্ষা। এই শেষ সময়ে নিজেকে একটু গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারলে লিখিত পরীক্ষায় সফল হওয়া সম্ভব। তাছাড়া লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে পরিশ্রমী ও কৌশলী হওয়া উচিত। শেষ সময়ে কীভাবে প্রস্তুতি নিলে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক প্রবাল চক্রবর্তী।

মান বন্টন

প্রথমেই লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফোকাস রাইটিং (ইংরেজি) ৩৫ নম্বর, ফোকাস রাইটিং (বাংলা) ৩০ নম্বর, কম্প্রিহেনশন ২০ নম্বর, সাধারণ জ্ঞান ৩০ নম্বর, গণিত ২৫ নম্বর, অনুবাদ (বাংলা হতে ইংরেজি) ২০ নম্বর, অনুবাদ (ইংরেজি হতে বাংলা) ২০ নম্বর, সামারি রাইটিং ২০ নম্বর। মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়।

ফোকাস রাইটিং

ফোকাস রাইটিংয়ে ইংরেজি এবং বাংলা দুইটি বিষয়ে মোট ৬৫ নম্বর রয়েছে। সাধারণত সমসাময়িক বিষয় হতে ফোকাস রাইটিং আসতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সমসাময়িক ইস্যুগুলো ভালোভাবে দেখে যাওয়া উচিত। বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি দিয়ে লেখা শুরু করতে পারলে লেখার উৎকর্ষ বৃদ্ধি পায় এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য উপাত্তের ব্যবহার ভালো নম্বর প্রাপ্তিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। ইংরেজি ফোকাস রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাকরণগত ভুল যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। এছাড়া punctuation এবং capitalization যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।

এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতের সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু, অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়সহ বাংলাদেশ ও বিশ্বের আলোচিত ঘটনা সম্পর্কে ধারণা থাকা ফোকাস লিখতে পারার জন্য সহায়ক হবে। যেমন- ব্যাংক একীভূতকরণ, সার্কুলার অর্থনীতি, স্মার্ট বাংলাদেশ, রেমিট্যান্স, হুন্ডির নেতিবাচক প্রভার, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিশ্ব অর্থনীতিতে যুদ্ধের প্রভাব, ব্যাংকখাতের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় দেখে যাওয়া যেতে পারে। ফোকাস রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই টাইটেল দেওয়া উচিত এবং চেষ্টা করা উচিত টাইটেলটি যেন গতানুগতিক না হয়ে আকর্ষণীয় হয়। ফোকাস রাইটিং লেখা শুরুর পূর্বে ১-২ মিনিট সময় নিয়ে কী কী বিষয় লেখা হবে এবং কোন পয়েন্টের পর কোন পয়েন্ট লেখা হবে তা ভেবে নিয়ে লেখা শুরু করলে খুব সুন্দর এবং গোছানো ফোকাস লেখা সম্ভব।

কম্প্রিহেনশন

এক্ষেত্রে একটা প্যাসেজ দেওয়া থাকে এবং তা হতে ৪-৫টি প্রশ্ন উত্তর করতে হয়। প্যাসেজ হতে সরাসরি কপি না করে প্রশ্ন বুঝে নিজের ভাষায় উত্তর করা উচিত। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর অন্তত দুই থেকে তিনটি বাক্যে লেখা উচিত। এই পার্টটুকু উত্তর করার সময় প্রশ্নে কোন টেনস (tense) আছে সে অনুযায়ী উত্তর করা উচিত। টাইটেল অব দ্য পেসেজের ক্ষেত্রে সরাসরি এক লাইনে টাইটেল না লিখে প্রাসঙ্গিক এক বা দুইটি বাক্য লিখে তারপর ঐ প্যাসেজের টাইটেল কী হতে পারে, তা লেখা যেতে পারে।

গণিত

লিখিত পরীক্ষায় শুরুতেই গণিতের উত্তর করা উচিত। কারণ পরীক্ষার শুরুতে মাথা ঠাণ্ডা থাকায় অপেক্ষাকৃত কম সময়ে গণিতের উত্তর করা যায়। তবে কোনো কারণে কোনো ম্যাথ পারা না গেলে সেটা নিয়ে সময় অপচয় না করে অন্য অংশে মনোযোগী হওয়া উচিত। শেষ সময়ে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিগত ২-৩ বছরের ব্যাংক পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমাধান এবং ৮ম-১০ম শ্রেণির বই হতে বিভিন্ন অধ্যায় যেমন- ত্রিকোনমিতি, পরিমিতি, সরল ও যৌগিক মুনাফা, লাভ-ক্ষতি, ঐকিক নিয়মসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অনুশীলন করা যেতে পারে। গণিতের ক্ষেত্রে ক্যালকুলেশনের সময় সতর্ক থাকা আবশ্যক, না হয় ছোট ভুলের বড় মাশুল দিতে হতে পারে।

অনুবাদ ও সামারি

অনুবাদের ক্ষেত্রে ভাবানুবাদের দিকে মনোযোগী হয়ে উত্তর করা উচিত। Tense, subject verb agreement এর দিকে লক্ষ রাখা উচিত। অনুবাদের জন্য শেষ সময়ে বিগত বছরের প্রশ্ন এবং বিভিন্ন প্রবাদ বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ অনুশীলন করা যেতে পারে। অনুবাদ বিশেষ করে বাংলা অনুবাদ করার ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল পদবিন্যাস যাতে রক্ষা করা যায় সেই চেষ্টা করা উচিত। এ ছাড়া সামারি রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে পুরো প্যাসেজ অন্তত দুইবার ভালোভাবে পড়ে মূলভাবটুকু খুব অল্প কথায় তুলে ধরতে পারলে ভালো নম্বর পাওয় যায়।

সাধারণ জ্ঞান

সাধারণ বিজ্ঞান ভালো নম্বর প্রাপ্তির একটি অন্যতম উপায়। ১০-১৫টি প্রশ্ন আসতে পারে যার জন্য মোট বরাদ্দকৃত নম্বর থাকে ৩০। এখানে যেহেতু গণিতের মতো নম্বর পাওয়া সম্ভব কাজেই এই অংশে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা বিশেষ করে বিগত ২-৩ মাসের সাম্প্রতিক দেখে গেলে পরীক্ষায় ভালো করা যাবে।

সময় বিভাজন

টাইম ম্যানেজমেন্ট লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নের মান অনুযায়ী কোন প্রশ্নে কতটুকু লেখা উচিত এবং কত সময় লেখা যেতে পারে, তা পরীক্ষার পূর্বেই পরিকল্পনা করে রাখা উচিত। সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনার যথাযথ প্রয়োগই পারে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে। এ ছাড়া প্রশ্নে যদি সিরিয়াল অনুসারে উত্তর করার কথা বলা থাকে, তবে অবশ্যই সিরিয়াল অনুযায়ী উত্তর করতে হবে। তাই প্রশ্ন এবং উত্তরপত্র উভয়ই হাতে পাওয়ার সাথে সাথে নিয়মাবলী দেখে নেওয়া উচিত। সবার পরীক্ষা ভালো হোক, সকলের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো।

এমআইএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।