শিক্ষার্থীর যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ২২ মার্চ ২০২৪

এমদাদুল হক মিলন

কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যোগাযোগে যাদের দক্ষতা আছে; তারা খুব সহজে সফলতা অর্জন করতে পারেন। কমিউনিকেশন শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘কমিউনিকেয়ার’ থেকে। যার অর্থ ‘ভাগ করে নেওয়া’। আরও সহজভাবে বললে—কথা বলা, লেখার বা অন্য কোনো মাধ্যমের সাহায্যে তথ্য সরবরাহ বা বিনিময় করাকে যোগাযোগ বলা হয়। সফলভাবে নিজের ধারণা অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া বা অনুভূতি ভাগ করে নেওয়াকেও কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ বলে।

কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা হলো অন্যের দেওয়া তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারা এবং নিজে যা বলতে চাই, তা অন্যকে সঠিকভাবে বোঝাতে পারা। এটি লিখে আর কথায়—দু’রকম ভাবেই হতে পারে। আমরা এখানে শুধু কথা বলার মাধ্যমে যে যোগাযোগ হয়, তার দক্ষতা নিয়ে কথা বলবো। খেয়াল করলে দেখতে পারবেন যে, যোগাযোগের দক্ষতার মূলত দুটি অংশ—অন্যের কথা বুঝতে পারা এবং নিজের কথা অন্যকে বোঝাতে পারা।

বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করার সময় আপনি যে ক্ষমতাগুলো ব্যবহার করেন, তা হলো কমিউনিকেশন স্কিল। কমিনিউকেশন স্কিলের সাতটি গুণ, যাকে আমরা কমিউনিকেশনের সেভেন সি হিসেবে জানি। ১৯৫২ সালে অধ্যাপক স্কট এম. কাটলিপ এবং অ্যালেন এইচ. সেন্টার এই সেভেন সি’র কথা উল্লেখ করেন। তা হলো: পরিপূর্ণতা, সংক্ষিপ্ততা, বিবেচনা, স্পষ্টতা, নির্দিষ্টতা, ভদ্রতা এবং শুদ্ধতা।

যোগাযোগের এই সাতটি নিয়ম মেনে চললে আপনি সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন। বর্তমান যুগটাই হচ্ছে যোগাযোগের যুগ। এ যুগে আপনি কোনো কাজে যত দক্ষই হোন না কেন, যদি আপনি সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ করতে না পারেন, তাহলে অনেক জায়গায়ই প্রাপ্য সম্মানটা থেকে বঞ্চিত হবেন।

কোনো কিছু বোধগম্য করে সহজ ও সুন্দরভাবে প্রকাশ করার যোগ্যতা হলো যোগাযোগ দক্ষতা। কথা বলা এবং লেখার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ ও তথ্য আদান-প্রদান তথা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। এই যোগাযোগের দক্ষতা মানুষের ব্যক্তি, পারিবারিক, কর্মজীবন, সামাজিক জীবন তথা রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য বিষয়। যোগাযোগ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য কাম্য যোগ্যতার পাশাপাশি দেখে শুনে, পড়ে বুঝে মনের ভাব বা নিজের কথা বিভিন্নভাবে লিখে বা বলে প্রকাশ করার দক্ষতার ওপর নির্ভর করেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেকাংশে সফল হয়ে ওঠেন অধিকাংশ মানুষ। যোগাযোগ দক্ষতার প্রধান দুটি ধাপ হচ্ছে—বুঝতে পারা ও প্রকাশ করতে পারা। এ দুটি ধাপ অতিক্রম করার জন্য ভাষার ব্যবহার অপরিহার্য। অর্থাৎ ভাষা আয়ত্ত করা ও প্রয়োগ করার দক্ষতাই যোগাযোগ দক্ষতা।

লিখে, বলে, এঁকে, ইঙ্গিতে বা অন্য কোনো ভাবে যার প্রকাশ ক্ষমতা যত সুন্দর ও সফল; তার অনুসারী তত বেশি। নেতা, কর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিক, উৎপাদক, ব্যবস্থাপক, শিক্ষক, ধর্মযাজক ইত্যাদি সবার ক্ষেত্রেই তা কম-বেশি প্রযোজ্য। আজকের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে যা-ই হতে চায় না কেন, যোগাযোগ দক্ষতার আরও বেশি প্রয়োজন হবে। অবাধ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ দক্ষতা ব্যতীত কোনো ক্ষেত্রেই কারো কাঙ্ক্ষিত সফলতা লাভের সম্ভাবনা নেই। তাই শিক্ষার্থীদের কোনো কিছু করার দক্ষতা অর্জন করার পাশাপাশি দেখে-শুনে পড়ে-বুঝে বিভিন্নভাবে বলার ও লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জন করা অত্যাবশ্যক।

আরও পড়ুন

বর্তমানে স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থীর জন্য কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট অত্যন্ত আবশ্যক। শুধু তাই নয়, মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে যোগাযোগ করতে পারাও ইংরেজি কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন শিক্ষার্থীর কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি করতে পারে এমন কয়েকটি উপায় হলো—শিক্ষার্থীদের প্রচুর বইপড়া, শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র দেখা, সঠিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা, সক্রিয় শোনার প্রবণতা তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিক স্তরে আগের মতো লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেক কিছু চিন্তা করে লেখার প্রয়োজনীয়তা তেমন ভাবে অনুভব করছে না। বিধায় দ্রুত চিন্তা করা, মনে করার ও লেখার অনুশীলনও হয়তো করছে না আগের মতো। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। বর্তমান দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রমের প্রত্যাশা অনুসারে শিক্ষার্থীদের কোনো কিছু করার দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে বলার ও লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সবার অর্জিত হচ্ছে কি না অর্থাৎ সবাই সঠিক ভাবে বলতে পারছে কি না এবং সবাই সঠিকভাবে লিখতে পারছে কি না—তা প্রতিনিয়ত গুরুত্ব সহকারে যাচাই করা উচিত।

বিশেষ করে নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা সঠিকভাবে অর্জিত হচ্ছে কি না, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। শিখন কালেই দেখতে হবে নির্ধারিত ভাষার প্রমিত শব্দ আত্মস্থ করায় ও প্রয়োগ করায় এবং সুন্দর বাক্য গঠনে ও সঠিক ভাব প্রকাশে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি উপযোগী পটু হয়ে উঠছে কি না। কোন পরিস্থিতিতে কোন কথাটি কীভাবে বলতে হবে অথবা বলতে হবে না তা বুঝতে পারছে কি না। আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক স্থাপন ও রক্ষা করতে পারছে কি না। এ ক্ষেত্রে যদি কারো ঘাটতি থাকে, তা পূর্ণ করার জন্য ওই শ্রেণিতেই নেওয়া উচিত যথাযথ ব্যবস্থা। কেননা এসব দুর্বলতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা এক বা একাধিক শ্রেণি অতিক্রম করে গেলে সবাই আর পূর্ণ করতে পারে না সেই ঘাটতি! প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বলার এবং লেখার কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জিত না হলে পরবর্তীতে কর্মে বা উচ্চশিক্ষায় গিয়ে তাদের ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

বর্তমানে নতুন কারিকুলামের আওতায় যেসব একক কাজ, জোড়ায় কাজ, দলীয় কাজ, পরিদর্শন, ভ্রমণ, অনুষ্ঠান ইত্যাদি করানো হয় সেগুলো সম্পর্কে ও অন্যান্য উপযোগী বিষয় সম্পর্কে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বতন্ত্রভাবে বলা উপস্থাপন করা এবং লেখানো আবশ্যক। অর্থাৎ ব্যবস্থাটি এমন হওয়া উচিত যে, প্রতিটি কাজ শিক্ষার্থী নিজে করবে এবং সে কাজের অভিজ্ঞতাসহ বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত বলবে ও লিখবে। তদুপোরি শ্রেণি উপযোগী অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ও সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কেও লিখবে-বলবে। অর্থাৎ শুধু করতে পারার মূল্যায়ন নয়, বলতে পারা এবং লিখতে পারার মূল্যায়নও ধারাবাহিকভাবে করা উচিত। যাতে পাঠ্যক্রম অনুসারে কোনো কিছু করতে পারার আগ্রহের মতো বলতে পারা এবং লিখতে পারার প্রতিও শিক্ষার্থীরা তাগিদ অনুভব করে, আগ্রহী থাকে। নতুন কারিকুলামে উপস্থাপনের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে, এখানে ছাত্রদের সঠিকভাবে কোনো কিছু উপস্থাপন করা শিক্ষার একটি অংশ। আমরা যারা ২১ শতকের শিক্ষক এবং ছাত্র আছি, তাদের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। যে সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা শিক্ষক, শুভাকাঙ্ক্ষী কিংবা বন্ধুদের কাছে দ্বারস্থ হয়ে থাকি। আমি মনে করি, যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার সঠিক দক্ষতা অর্জন করে নিজের বাস্তব জীবন পরিচালনার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের কাজে সঠিকভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।

অতীতে বর্তমান সময়ের মতো এত সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রচলন ছিল না। তাই বলে কি মানুষ যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করেনি? করেছে। আর যারা তা করতে পেরেছে, তারাই সফল হয়েছে। নতুন কারিকুলামে ফরমাল ও ইনফরমাল ভাষা বা যোগাযোগের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং মানুষ কীভাবে অবস্থান বুঝে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ দক্ষতার অভাবে জীবনের অনেক সুবিধা থেকে দূরে থাকতে হয়। ভাষার দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে যদি একজন শিক্ষার্থী যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি করে জীবন পরিচালনা করে। তাহলে তার যে কোনো কাজ বা সমস্যা সহজে সমাধান হবে বলে মনে করি।

আরও পড়ুন

তাই আসুন, প্রতিদিন যোগাযোগের দক্ষতা বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে ভবিষ্যতে নিজেকে মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলি।

লেখক: ইংরেজি শিক্ষক, সোনাপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।