বিসিএস জয়
ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে: নিয়ামুল কবীর উৎস
এস এম নিয়ামুল কবীর উৎস ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইল সদরের আকুর টাকুর পাড়া বটতলায়। ছেলেবেলায় অবসরে জেলা পরিষদের মাঠে ক্রিকেট-ফুটবল খেলে সময় পার করতেন। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। দুই বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। এরপর মা চাকরি করে সংসারের হাল ধরেন। তিনি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
এস এম নিয়ামুল কবীর উৎস: আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো সময় যাচ্ছে। এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু স্বপ্ন আজ বাস্তব। চারপাশে থেকে অনেক শুভেচ্ছা পাচ্ছি, মানুষ অনেক প্রশংসা করছে। পরিবারের সবাইকে সম্মান দিচ্ছে। এককথায় অসাধারণ।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
এস এম নিয়ামুল কবীর উৎস: আসলে আমার বড় মামা আমাকে সব সময়ই স্বপ্ন দেখাতেন এবং বিসিএস বিষয়ে সিরিয়াস হতে বলতেন। কিন্তু আমার মনে সুপ্ত ইচ্ছা থাকলেও সেভাবে চেষ্টা করা হয়নি। বরং মাস্টার্স করতে জার্মানি যাওয়ার প্রতি ঝোঁক ছিল। ২০২০ সালে কোভিডের সময় আমার মা যখন হসপিটালে ছিলেন; তখন মায়ের কথা চিন্তা করে বাইরে যাওয়ার কথা বাদ দিই। কারণ আমার পরিবারে আমি ছাড়া তার দেখভালের কেউ নেই। কোভিডের সময় আমি বুঝতে পারি, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে যত কথা বলুক; ডাক্তার, প্রশাসন, পুলিশ, ব্যাংকার, সাংবাদিকসহ আর কিছু গুটি মানুষ ছাড়া; এই বিপদের সময় কেউ ফ্রন্টে কাজ করেননি। তাই দেশে থাকার ক্ষেত্রে আমি বিসিএসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। আর তখনই সিদ্ধান্ত নিই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার। এভাবেই যাত্রা শুরু।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
এস এম নিয়ামুল কবীর উৎস: ২০২১ সালের ২৫ মার্চ, এই দিন থেকে আসলে সিরিয়াসলি বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করি। তার আগের দিন আমি ঢাকা থেকে একটি সরকারি পরীক্ষা দিয়ে ট্রেনে ফেরার সময় স্টেশনে বসে ভাবছিলাম, আমি আসলে কী চাই? আর আমি কী করছি। তখন আমি অনেক টিউশনি করতাম এবং ভাবনা ছিল, কোনোমতে একটা চাকরি হলেই হলো। পরে আমি টিউশন একেবারে বাদ দিই এবং নিজের সব মনোযোগ বিসিএসের দিকে দিই। প্রস্তুতির জন্য শুরুতেই একটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে থাকি। পাশাপাশি বাসায় শুরু করি বিসিএস প্রস্তুতির হাতেখড়ি। আমি যে কোনো একটা টপিক গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে পড়তেই পছন্দ করতাম। এজন্য একাধিক বই থেকে রেফারেন্স পড়াসহ নিজের নোট তৈরি করা এবং যে বিষয়গুলো কঠিন লাগতো, তা বারবার পড়া আর রিভিশন করা শুরু করতাম। একটা সময় পরে আমি পড়াশোনা উপভোগ করা শুরু করি এবং তারপর থেকে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। রিটেন দেওয়ার পর একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করা শুরু করি। পাশাপাশি ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের একটা ভাইভা দেওয়ার পর কিছুটা নিশ্চিত ছিলাম, হয়তো সৃষ্টিকর্তা নিরাশ করবেন না। সেটা হওয়ায় অনেক শুকরিয়া। বাবা মারা যাওয়ার পর মা চাকরি করে পড়াশোনা করিয়েছেন। খুব বেশি আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও মা পড়াশোনায় কমতি রাখেননি। মা চাকরিতে ব্যস্ত থাকায় ছোটবেলায় দাদির কাছে বেশি সময় কাটিয়েছি। তখন ইচ্ছা ছিল বৃত্তির টাকা দিয়ে দাদিকে একটা শাড়ি কিনে দেওয়ার। আমার জীবনে আমার মা আর দাদির ভূমিকা অনেক বেশি। যদিও দাদি আমার সফলতা দেখে যেতে পারেননি। তবে মায়ের ইচ্ছাপূরণ করায় ভীষণ খুশি। আর এখন নিজে চাকরি করছি, তাদের সব সমস্যায় আগলে রাখার সামর্থ এখন আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। আমি মনে করি, জীবনে দুঃখ-কষ্ট, অনিশ্চিয়তা থাকবেই। এজন্যই জীবনে চ্যালেঞ্জ নেওয়া উপভোগ করি।
আরও পড়ুন
• বিসিএসের জন্য ধৈর্য ধরে পরিশ্রম করতে হবে: জাহিদ হাসান
• বিসিএসে সেরা মেধাবীরা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী: আব্দুস সামাদ
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
এস এম নিয়ামুল কবীর উৎস: আসলে বিসিএসটা আমার কাছে ছিল নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশন। নিজের হারানো অবস্থান ফিরে পাওয়ার মিশন। আমার সবচেয়ে বড় মোটিভেশন ছিল আমার মা এবং পরিবার। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং তাদের ভালো কিছু দেওয়ার তাড়নাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এ ছাড়া বিসিএস জার্নিতে আমার বড় মামা, কাছের কিছু মানুষ সব সময়ই পাশে ছিলেন। বিভিন্ন সময় ভার্সিটির বড় ভাই এবং বন্ধুরা সাজেশন দিয়ে সহায়তা করেছেন। বন্ধু নিষাদের কথা বিশেষভাবে বলতে চাই, ওর দিকনির্দেশনা ছাড়া আমার প্রিপারেশন এত ভালো হতো না। এ ছাড়া আমার সহযোদ্ধা খলিল, জহির, সাব্বির; যারা এই সময়টা আমার সাথে ছিল এবং একসাথে গ্রুপ করে তাদের সাথে পড়াশোনা করেছি। আশাকরি তারাও একদিন সফল হবে।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
এস এম নিয়ামুল কবীর উৎস: আমার মতে, আগে মানসিকতাটা ঠিক করা উচিত। অনেকে বিসিএস প্রিপারেশনটাকে খুবই হালকাভাবে নেন এবং ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করে পড়াশোনা করেন না। এজন্য তারা অনেক জায়গায় ভালো করতে পারেন না। আমার মতে, নতুনদের মানসিকভাবে এ দিকটা ঠিক করতে হবে এবং নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ফোকাস করতে হবে। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নতুনদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। অনেকে অনেক ভুল পরামর্শে অনেক পিছিয়ে পড়েন। তাই যারা একদম নতুনভাবে শুরু করছেন, তারা অভিজ্ঞদের থেকে পরামর্শ নিয়ে পড়াশোনা করুন। যদি ধৈর্য আর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে আর ভাগ্য একটু সহায় থাকে; তবে বিসিএসে সফলতা আসতে বাধ্য।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
এস এম নিয়ামুল কবীর উৎস: সামগ্রিকভাবে দেশের যে সেক্টরেই কাজ করি, সেখানে সফলতার সাথে যেন দায়িত্ব পালন করতে পারি। দেশের পরিবর্তনের সফল অংশীদার হতে চাই। আর ব্যক্তিগত ভাবে, ভবিষ্যতে বাইরে থেকে পিএইচডি করার ইচ্ছে আছে। নিজের অর্জিত জ্ঞানকে দেশের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে চাই।
এসইউ/এএসএম