পড়াশোনায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে: জাফর আহাম্মদ
৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে (মেধাক্রম-২১) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাফর আহাম্মদ। মা-বাবা ও দুই ভাইয়ের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন বাবা। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরঈশ্চর ইউনিয়নে। তিনি সুখচর মফিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর পাড়ি জমান চট্টগ্রামে। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে ৪৩তম বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন এই তরুণ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম-
জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
জাফর আহাম্মদ: আলহামদুলিল্লাহ, অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পুরোদিন অস্থিরতায় কাটিয়ে সন্ধ্যার আগে ফলাফলের পিডিএফে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর যখন দেখেছিলাম; তখন আমার পুরো শরীর কাঁপছিল। যে স্বপ্ন এতদিন দেখেছিলাম; সে স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিয়েছে এটা ভেবেই অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল।
জাগো নিউজ: বিসিএস দেবেন এমন ভাবনা মাথায় এলো কিভাবে?
জাফর আহাম্মদ: ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম। সবার মতো আমারও মেডিকেল বা বুয়েটে পড়ার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু গ্রাম থেকে হঠাৎ শহরের কলেজে এসে সঠিক গাইডলাইনের অভাবে এইচএসসিতে জিপিএ-৪.৯০ পাই। তখন থেকে বুয়েট, মেডিকেলে চান্স না পাওয়ায় ভেতরে চাপা ক্ষোভ কাজ করতো। অনার্স তৃতীয় বর্ষে এসে বিসিএস দেব বলে সিদ্ধান্ত নিই। আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি ডাক্তার হবো। সেটা পূরণ করতে পারিনি। পরে বাবা সব ভুলে বিসিএস দিতে অনুপ্রেরণা দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, বাবার এই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, পাশাপাশি প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
জাফর আহাম্মদ: ছোটবেলা থেকেই ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলাম। সরকারি, বেসরকারি অনেকগুলো স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। আমার ওপর সবার আশাও অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এইচএসসি এবং ভর্তি পরীক্ষায় আমি সবার আশা মেটাতে পারিনি। এটা আমাকে খুব পীড়া দিতো। পরে এক প্রকার জেদ নিয়েই আমি আমার হারানো অতীত ফিরে পাওয়ার জন্য একাগ্রচিত্তে বিসিএস প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতি চলতে থাকে। এরমধ্যে বাবার স্বপ্ন পূরণের বাসনা তো ছিলই। একটু আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করায় এক এক বিষয় করে গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে পেরেছিলাম। এজন্য একাডেমিক এবং জবের পড়া ব্যালেন্স করতেও বেগ পেতে হয়নি। বিসিএস যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদি আমি এক লাইনে বলি, ভর্তি পরীক্ষার সময় আমি যাদের সহপাঠী বানাতে পারিনি। আমার অদম্য ইচ্ছা, পরিশ্রম এবং সবার দোয়ায় এখন তাদের সহকর্মী বানাতে চলেছি।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
জাফর আহাম্মদ: আমার বাবা, মা, ছোট ভাই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আমার বাবা পড়াশোনা সচেতন মানুষ। নিজে বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু আমাকে যে কোনো ভাবেই হোক তিনি পড়াশোনা করাবেন এমন লক্ষ্য ছিল। আর মা বিসিএস পরীক্ষা কি সেটা বোঝেন না। কিন্তু জানেন তার ছেলে কোনো একটা পরীক্ষার জন্য মন-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে। আর সেই চেষ্টায় সফল হওয়ার জন্য সব সময়ই তিনি দোয়া করতেন এবং সাহস দিতেন। আমার ছোট ভাই সব সময়ই আমার প্রস্তুতি, পরীক্ষা এসবের খবর নিতো। দোয়া করতো। এই তিনজন মানুষের অনুপ্রেরণায় আমার এই সফলতা।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জাফর আহাম্মদ: নতুনদের বলবো, আপনি আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন সত্যিকার অর্থেই আপনি বিসিএস দিবেন কি না। বিসিএসের দীর্ঘ যাত্রায় পরিশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে অনেক ধৈর্যেরও প্রয়োজন। কিন্তু ভেঙে পড়া যাবে না। নিজের লক্ষ্যে অটুট থেকে পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে। পড়াশোনায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। একদিন ৮-১০ ঘণ্টা পড়ে আরেকদিন মোটেও পড়লেন না। এরকম না করে প্রতিদিন অল্প অল্প করে হলেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পড়তে হবে।
জাগো নিউজ: প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
জাফর আহাম্মদ: আমি প্রশাসন ক্যাডার প্রথম চয়েসে রেখেছিলাম। কারণ এ ক্যাডারে অনেক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি একদম মাঠ পর্যায়ে মানুষের জন্য কাজ করা যায়। ভবিষ্যতে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করে দেশের এবং মানুষের সেবা করে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখতে চাই।
জেএস/এসইউ/এএসএম