বিসিএস জয়
বারবার অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে: মোহন আহমেদ
মোহন আহমেদ ৪০তম বিসিএসে খাদ্য ক্যাডারে প্রথম হোন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার অভ্যাগতপাড়া গ্রামে। তিনি হাট গাঙ্গোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পান। এরপর হাট গাঙ্গোপাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতেও এ প্লাস পান। গণিতের প্রতি ভালো লাগা থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাথম্যাটিকস ডিসিপ্লিনে ভর্তি হোন। সেখান থেকে অনার্সে ১ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হোন।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪০তম বিসিএসে খাদ্য ক্যাডারে ১ম হয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন?
মোহন আহমেদ: সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ শুকরিয়া যে তিনি আমাকে প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিযুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করেছেন। আমার মা-বাবার অনুপ্রেরণা ছিল এ দীর্ঘ লড়াইয়ের পাথেয়। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যিনি মেধাকে প্রজাতন্ত্রে নিয়োগের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মোহন আহমেদ: বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক রেজাল্ট নিয়ে আমি কখনোই মাথা ঘামাইনি। ২০১৬ সাল থেকেই আমি ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম। আমার আব্বা ও আম্মা খুব করে চাইতেন যে আমি বড় চাকরি করি। তাদের অনুপ্রেরণা থেকে আমি মূলত একাডেমিক পড়াশোনাকে কম গুরুত্ব দিয়ে বিসিএস পড়াশোনা শুরু করি।
আরও পড়ুন: ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েই সফল হয়েছি: কোচ কাঞ্চন
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, পাশাপাশি প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?
মোহন আহমেদ: আমি ভার্সিটির বড় ভাইদের সঙ্গে হলের লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতাম। তাদের সাজেশন মতো পড়াশোনা করতাম। তবে যাত্রাটা অনেক কঠিন ছিল। চরম দরিদ্রতার মুখোমুখি হয়েছি তবু ভেঙে পড়িনি। ‘ডু অর ডাই’ টাইপ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল। ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত হলে পড়াশোনা করতাম। ২০১৮ সাল থেকে অনার্স পাসের পর দিন ও রাতে ঘুমানোর সময় ছাড়া পুরোটাই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান হলে কাটিয়েছি। প্রচণ্ড শীতেও কম্বল গায়ে দিয়ে রিডিং রুমে পড়াশোনা করেছি।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
মোহন আহমেদ: আমার প্রথম শিক্ষক আমার মা। তিনিই আমাকে হাতেকলমে শিক্ষা দিয়েছেন। আমার মা স্বল্পশিক্ষিত হলেও অত্যন্ত মেধাবী ও বিদ্যানুরাগী। পর্দার আড়ালে আমার আম্মা ও আব্বুই ছিল মূল কারিগর। পারিবারিক দরিদ্রতা নিরসন করবো—এর চেয়ে বড় কোনো অনুপ্রেরণা দরকার হয়নি। আমাদের পরিবারে আমিই একমাত্র সম্বল ছিলাম। কেননা আব্বুর অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল। তাই আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে সংসারের। এটাই ছিল আমার মানসিক শক্তি ও বড় অনুপ্রেরণা।
জাগো নিউজ: নতুনদের বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?
মোহন আহমেদ: যারা বিসিএস প্রস্তুতি নেবেন তাদের উচিত হবে কিভাবে পড়তে হবে, কী পড়তে হবে—এটা জানা। ইংরেজি, বাংলা ও গণিতে জোর দিতে হবে। ইংরেজি শব্দভান্ডার ও গ্রামারে দক্ষতা থাকতে হবে। গণিতে দক্ষতা আনার জন্য বারবার অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। অফিসে সব ক্ষেত্রেই বাংলা চর্চা করা হয়। তাই বাংলা ভালোভাবে শিখতে হবে। এটি পরে চাকরিজীবনেও কাজে লাগবে। যারা ক্যাডার হতে চান, তাদের প্রচুর পড়াশোনা করা উচিত। কমপক্ষে দিনে ৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করা উচিত। নিজেকে পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে আপডেট রাখতে হবে। বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয় পড়লে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যার বিশ্লেষণ ও সমাধান পাওয়া যায়। বিভিন্ন জাতীয় সমীক্ষা ও সূচকগুলো মনে রাখতে হবে। এতে বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও অন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ভালো করা সহজ হবে। উক্তি, গ্রাফ, চার্ট ফিগার ইত্যাদি আত্মস্থ করতে হবে। কেননা এসব ব্যবহার করলে বেশি মার্ক পাওয়া যায়। যারা ক্যাডার হয়েছেন, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে সাফল্য লাভ করা সহজ হবে। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়া উচিত। পরীক্ষা না দিলে নিজের দুর্বলতাগুলো বোঝা যাবে না। নিজের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর ওপর জোর দিলে দক্ষতা বাড়ে। বারবার অনুশীলন ব্যতীত দক্ষতা অর্জন সম্ভব নয়। বিসিএস পরীক্ষায় দক্ষতার পরিচয় দিতে পারলেই ক্যাডার পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে ভালো হয় যদি পড়াশোনাকে মুখ্য কাজ হিসেবে গ্রহণ করে বাকি সব কিছুকে গৌণ হিসেবে বিবেচনা করা। ক্যাডার হওয়ার পথ মসৃণ নয়। অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষার ফসল। The greater the sacrifice, the bigger the reward. আমার এমন হয়েছিল একটানা ৮ মাস বাড়ি যাইনি। বিসিএস প্রিপারেশন নেওয়ার সময় কোনো পিছুটান রাখা উচিত নয়।
আরও পড়ুন: আমার বিসিএস প্রস্তুতি শুরু হয় মাস্টার্সের পর: আনিসুর রহমান
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মোহন আহমেদ: দরিদ্রতাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাই সাধারণ মানুষের দরিদ্রতা দূরীকরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ; ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’—স্লোগানকে সামনে রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ বাস্তবায়ন করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখবো।বিসিএস (খাদ্য) ক্যাডারে নিজেকে নিয়োজিত রাখার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দরিদ্র্যতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। এছাড়া ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে বিদেশে গিয়ে অর্থনীতিতে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করার।
এসইউ/এমএস