বিসিএস প্রিলিমিনারি সবচেয়ে কঠিন ধাপ: সোয়েব মুহাম্মাদ

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৪৬ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৩

সোয়েব মুহাম্মাদ ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে (মেধাক্রম ১৯) উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ইটালি ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে। তিনি সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্র (আইবিএ) থেকে এমবিএ কোর্সে পড়াশোনা করছেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

জাগো নিউজ: বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার অনুভূতি কেমন?
সোয়েব মুহাম্মাদ: বিসিএস পুলিশ আমার স্বপ্নের ক্যাডার। এই পোশাকের প্রতি অনেক ভালো লাগা ছিল। দেশের জন্য, মানুষের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করার তীব্র ইচ্ছা ছিল। তাই আমার প্রথম পছন্দ ছিল বিসিএস পুলিশ। প্রথম বিসিএসেই প্রথম পছন্দের ক্যাডার পেয়েছি। রেজাল্ট দেখার পরে যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না! কয়েকজন বন্ধুকে দিয়ে রেজাল্ট চেক করিয়েছি। হাত-পা কাঁপছিল। এ এক অন্যরকম অনুভূতি, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।

আরও পড়ুন: কঠোর পরিশ্রম করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছি: সোহান

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
সোয়েব মুহাম্মাদ: বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন সিদ্ধান্ত নিই বাইরে যাবো না, দেশেই থাকবো। পরিচিত অনেক বন্ধু-বান্ধব দেশের বাইরে সেটেলড হওয়ার প্ল্যান করছিল। আমাকেও অনেকে সাজেশন দেন। দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার, তাই যেন বাইরে চলে যাই। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল যে দেশের মাটিতে আমার জন্ম, সেই দেশের মাটিতেই যেন আমার মৃত্যু হয়। এরপর ৪র্থ বর্ষ থেকে অল্প অল্প করে বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করি। তবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে পূর্ণোদ্যমে চলে পড়াশোনা।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই। প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?
সোয়েব মুহাম্মাদ: প্রিপারেশনের শুরুতেই একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। কোচিংয়ে যাওয়া-আসা করলে, ক্লাস করলে বা সেখানে পরীক্ষা দিলে সিলেবাস আয়ত্ত করতে যেমন সুবিধা হয়; তেমন পড়াশোনায় একটা গতি থাকে। অনার্স ৪র্থ বর্ষে থাকাবস্থায় প্রিপারেশন শুরু করি। তাই নিয়মিত কোচিংয়ে যেতে পারতাম না। তবে যতটুক সুযোগ হতো চেষ্টা করতাম। এভাবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগে সিলেবাসের ৫০-৬০% একবার পড়া হয়ে যায়। পাশাপাশি পুরো সিলেবাস সম্পর্কে একটা পাকাপোক্ত ধারণা হয়ে যায়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ২০২১ সালে এমবিএ ৬৩তম ব্যাচে ভর্তি হই। তখন ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি দিয়েছিলাম। আইবিএতে এত প্রেসার ছিল যে রিটেনের প্রিপারেশন নেওয়ার সময় বা সুযোগ কোনোটাই পেতাম না। প্রথম সেমিস্টার শেষ করেই কোর্স উইথড্র করার সিদ্ধান্ত নিই। সিদ্ধান্তটা অনেক কঠিন ছিল। হয়তো বিসিএসের মতো অনিশ্চিত যাত্রা, নয়তো আইবিএর মতো লোভনীয় জায়গা থেকে ডিগ্রি নিয়ে ভালো বেতনে চাকরিতে ঢোকা। আমি বিসিএসের অনিশ্চিত যাত্রাটাই বেছে নিছিলাম। এটি অনেক কঠিন একটা সিদ্ধান্ত ছিল। এখন মনে হয় সিদ্ধান্তটা শতভাগ সঠিক ছিল।

জাগো নিউজ: আপনার এই সফলতায় কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
সোয়েব মুহাম্মাদ: বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করার স্বপ্নটা আমার একান্তই নিজের। বাবা-মা সব সময়ই প্রথম শ্রেণির চাকরির স্বপ্ন দেখেছেন। এতটা পেয়ে যাবো বাবা-মা কল্পনাও করতে পারেননি। আমার স্ত্রী আমাকে সব সময়ই অনুপ্রেরণা দিয়েছে। বেকার অবস্থায় বিয়ে করেছিলাম, তবুও কখনো কোনো চাপ দেয়নি। বরং বলেছে ভালোভাবে পড়াশোনা করলে আল্লাহ ভালো কিছু দেবেন। সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তা, আমার শিক্ষক, বাবা-মা, স্ত্রীসহ সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

আরও পড়ুন: আমার বিসিএস প্রস্তুতি শুরু হয় মাস্টার্সের পর: আনিসুর রহমান

জাগো নিউজ: নতুনদের প্রস্তুতি নিয়ে আপনার সার্বিক পরামর্শ কী?
সোয়েব মুহাম্মাদ: বিসিএস পরীক্ষায় সফল হতে বেসিকের ওপরে গুরুত্ব দেওয়া খুবই জরুরি। সেটি বাংলা, ইংরেজি বা গণিত যে কোনো বিষয় হতে পারে। বিসিএস প্রিলিমিনারি সবচেয়ে কঠিন ধাপ। প্রিলিমিনারির প্রিপারেশনের ওপরেই সবার বেশি জোর দেওয়া উচিত। ৩-৪ লাখ পরীক্ষার্থীর মাঝে ১২-১৫ হাজার জনের মধ্যে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয়। প্রতি বিষয়ের অন্তত একটি বেসিক বই খুব ভালো করে পড়া উচিত। অজানা জিনিস না পারলে ক্ষতি নেই। কিন্তু কমন বা জানা জিনিস যেন ভুল না হয়—এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জানা বা পড়া জিনিস যদি সঠিকভাবে উত্তর করে আসতে পারেন, তাহলে প্রিলি পাস করতে পারবেন। রিটেনের ক্ষেত্রে যে কোনো টপিকে বাংলা বা ইংরেজিতে যারা অনায়াসে ২-৩ পাতা লিখতে পারবেন, তাদের ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ অনেক সময় বাংলা বা ইংরেজি রচনা কমন পাওয়া যায় না। বাংলায় ভাব-সম্প্রসারণ বা ইংরেজিতে প্যাসেজ কমন আসে না সাধারণত। তাই ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এ জায়গায় সবার নিয়মিত সময় দেওয়া উচিত। নিয়মিত পত্রিকা পড়া, ইংরেজি গ্রামার, অনুবাদ বা রিট্রান্সলেশন চর্চা করা জরুরি। বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বিজ্ঞান সিলেবাস ধরে ধরে প্রতিটি টপিক পড়া উচিত। যে কোনো টপিক থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোতে বেশি সময় দেওয়া উচিত।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সোয়েব মুহাম্মাদ: আল্লাহ আমার স্বপ্নপূরণ করেছেন। আমাকে সম্মানিত করেছেন। আমি বাকি জীবন তার সৃষ্টির সেবা করে যেতে চাই। একটি বৃদ্ধাশ্রম ও অসহায় শিশুদের জন্য এতিমখানা করার স্বপ্ন আছে। জানি না স্বপ্নপূরণ হবে কি না, তবে আমি চেষ্টা করে যাবো। সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী যেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারি।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।