ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েই সফল হয়েছি: কোচ কাঞ্চন

বেনজির আবরার
বেনজির আবরার বেনজির আবরার , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০২৩

‘সার্টিফায়েড হ্যাপিনেস কোচ’ শুনতে বেশ অবাক লাগে! বর্তমান মানসিক অস্থিরতায় নিজেকে খুশি রাখার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টার এক নাম হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা মুহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চন (কোচ কাঞ্চন)। তিনি একাধারে লেখক, উদ্যোক্তা ও হ্যাপিনেস কোচ। তিনি জীবনের কথা বলেন, জীবনকে নিয়ে ভাবার কথা বলেন। পাশাপাশি অর্গানিক ব্র্যান্ড ন্যাচারালসের ফাউন্ডার। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিজনেসকে নিয়ে গেছেন বহির্বিশ্বে। বাংলাদেশি গ্লোব্যাল ব্র্যান্ড গড়ে তোলার মিশনে ছুটে চলেছেন দেশ-বিদেশে।

সম্প্রতি নিজের ক্যারিয়ার, লেখালেখি এবং উদ্যোগ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—

জাগো নিউজ: প্রথমেই নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন—
মুহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চন: আমি একজন সুখী মানুষ। আমার জীবন নিয়ে তৃপ্ত ও কৃতজ্ঞ। তার মানে এই নয় যে, আমার কোনো দুঃখ নেই। আসলে দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতেই আমি বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক সার্টিফায়েড হ্যাপিনেস কোচ হয়ে উঠেছি। হার্ভার্ড প্রফেসর ড. টাল বিন শাহারের অধীনে আমেরিকার হ্যাপিনেস স্ট্যাডিজ একাডেমি থেকে সার্টিফায়েড হ্যাপিনেস কোচ হই। এরপর থেকে সবাই আমাকে ‘কোচ কাঞ্চন’ নামে চেনেন।

আমার নানা আদর করে নায়কের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রেখেছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। কিন্তু নামটি কেন যেন নিজের মনে হতো না। নিজেকে আলাদা পরিচিতি দিতেই কোচ কাঞ্চন হয়ে উঠি। আমি চেয়েছিলাম সিনেমার নয়, মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণার নায়ক হতে। তবে পথচলাটা সহজ ছিল না। শুরুটা হয়েছিল নিজের আনহ্যাপিনেস থেকে। জীবনটাকে বোঝা মনে হতো। নানা জটিলতায় আত্মহত্যার চিন্তাও উঁকি দিতো মাঝে মাঝে। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় শুরু হলো ইলিয়াস কাঞ্চন থেকে কোচ কাঞ্চন হয়ে ওঠার কঠিন অধ্যবসায়।

আরও পড়ুন: কঠোর পরিশ্রম করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছি: সোহান

নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, একজন স্বপ্ন দেখা মানুষের জন্য পৃথিবীটা কী কঠিন এক যুদ্ধক্ষেত্র! সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে কখনো লেখক হয়ে উঠেছি, কখনো আবার কিছু ব্র্যান্ডের ফাউন্ডার হয়ে গেছি। এ দেশের অগণিত উদ্যোক্তার সঙ্গে নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা, তিক্ততা, ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ভাগাভাগি করতে চেয়েছি। যাতে তারাও নিজেদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেন।

জাগো নিউজ: এ পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন, সে সম্পর্কে যদি বলতেন—
মুহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চন: উদ্যোগ ছিল অসংখ্য। কিছু উদ্যোগ বড় করতে পেরেছি, বাকিগুলো ঝরে পড়েছে। ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েই একেকটি উদ্যোগকে সফল করেছি। কিছু উদ্যোগ সবার ভালোবাসায়, অনুপ্রেরণায় মহীরুহ হয়ে উঠেছে। সফল উদ্যোগের কথা যদি বলি, তাহলে সবার আগে আসবে ন্যাচারালসের কথা। ‘সযত্নে রাখি সবার জীবন’—স্লোগানে মানুষকে অর্গানিক লাইফস্টাইলে উদ্বুদ্ধ করার জন্য, জীবনটাকে সুস্বাস্থ্যে রাখার জন্য ন্যাচারালসের পথচলা শুরু হয়েছিল। সবার ভালোবাসায় যা আজ একটু সুপরিচিত এবং অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। বিউটি ব্র্যান্ড পার্লের মাধ্যমে শুধু ত্বক কিংবা চুলের যত্ন নয়, নারীর ভেতরের সৌন্দর্যকে যেন সবাই উপলব্ধি করতে পারে, সে জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের অসংখ্য উদ্যোক্তার ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং সাপোর্ট দেওয়ার জন্য একঝাঁক ইন্ডাস্ট্রি প্রুভেন ক্রিয়েটিভ নিয়ে গড়ে তুলেছি ‘গেরিলা ডিজিটাল’ নামে ক্রিয়েটিভ এজেন্সি।

ব্যর্থতা থেকে ঘুর দাঁড়িয়েই সফল হয়েছি: কোচ কাঞ্চন

সবার মাঝে সুখকে ছড়িয়ে দিতে তৈরি করেছি কোচ কাঞ্চন একাডেমি। আমরা বিশ্বাস করি হ্যাপিনেস একটা স্কিল। আমাদের প্রত্যেকের জীবনই জটিলতা আর সমস্যার আধার। চাইলেই সব সমস্যার সমাধান করতে পারি না। কিন্তু তাই বলে তো হতাশ হয়ে বসে থাকলে চলবে না। কোচ কাঞ্চন একাডেমি কোচিং ও মেন্টরিং সেশন থেকে অনেকেই জীবনে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কেউ ফিরে এসেছেন আত্মহত্যার পথ থেকেও। আমরা দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জন্য হ্যাপিনেস স্ট্যাডিজ, মেন্টাল হেলথ, ইমোশনাল ওয়েলবিয়িং ও রিলেশনশিপ ডেভেলপমেন্টের ওপর ফ্রি সেশন আয়োজন করে থাকি। ফ্রি সেশনে যোগ দিতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইটের লিংকে। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তার জন্য বিজনেস মডেল ডিজাইন, নিউরো-মার্কেটিং, মানি মাস্টরিং ও ব্র্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ওপর বিভিন্ন কোর্স ও বিজনেস কোচিং প্রোভাইড করি। একটি হ্যাপিয়ার হেলদিয়ার ও বেটার ওয়ার্ল্ড গড়তে প্রতিনিয়ত কাজ করছে কোচ কাঞ্চন একাডেমি।

আরও পড়ুন: ভাইভা বোর্ডে ফার্স্ট ইম্প্রেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ

জাগো নিউজ: কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন, সে সম্পর্কে পাঠকদের কিছু বলুন—
মুহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চন: ছোট এ জীবনে অ্যাওয়ার্ডের সংখ্যা অনেক। সবচেয়ে বড় অ্যাওয়ার্ড মানুষের সীমাহীন ভালোবাসা। কিছু যদি বলতে হয়, সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া হ্যাপিনেস মুভমেন্ট মেকার হিসেবে ফোরটি আনডার ফোরটি সম্মানে ভূষিত হওয়া, আমার বই বিজনেস ব্লুপ্রিন্টের জন্য রকমারি বেস্টসেলার অ্যাওয়ার্ড পাওয়া অন্যতম অর্জন। এ ছাড়া করোনাকালীন দশ হাজার পরিবারকে হাইজিন পণ্য পৌঁছে দিয়ে পেয়েছি ইকম মুভার্স অ্যাওয়ার্ড। তরুণদের মাঝে মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হাত থেকে পেয়েছি মাইটি মেন্টাল সাপোর্ট অ্যাওয়ার্ড। এসবই আমাকে কাজে অনুপ্রাণিত করছে।

জাগো নিউজ: আপনার প্রতিষ্ঠান দ্রুত মানুষের আস্থা পেয়েছে, এর কারণ কী মনে করেন?
মুহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চন: আমার উদ্যোগগুলো জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণ আমরা হিউম্যান সেন্ট্রিক ব্র্যান্ড ডেভেলপ করছি। মানুষের সঙ্গে কমিটমেন্ট মেনে কাজ করি। মুখে যেটা বলি সেটাই বাস্তবে করি। সব সময় আন্ডার প্রমিজ ওভার ডেলিভার করার চেষ্টা করি। এতে মানুষ ভালো ফিল পায় এবং ওয়ার্ড অব মাউথের ফেসিলিটি পাওয়া যায়। মুখে মুখে ব্র্যান্ড ছড়িয়ে যায়। আমি জানি, মানুষকে ঠকিয়ে কোনোদিন ভালো কিছু করা যায় না। এজন্য আমি উইন-উইন ফর্মুলা মেনে চলি। কাস্টমার জিতলেই জিতে যায় ব্র্যান্ড তথা কোম্পানি।

জাগো নিউজ: তরুণ প্রজন্মকে কী পরামর্শ দেবেন?
মুহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চন: তরুণদের বলবো বড় স্বপ্ন দেখতে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে। এখনকার তরুণদের প্রধান সমস্যা ফোকাস ঠিক রাখতে না পারা। ডিস্ট্রাকশনের এ যুগে নিজেকে সঠিক কাজে ব্যস্ত রাখতে জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের মধ্যে প্রচণ্ড হতাশা। তারা ‘ভাল্লাগে না’ নামের এক অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত। এর অন্যতম কারণ শুধু সেলফ সেন্ট্রিক চিন্তা। জীবনকে উপভোগ করতে চাইলে সবচেয়ে সহজ উপায় ‘অন্যের জন্য কিছু করা’। ‘আমি আমি’ বাদ দিয়ে একটু ‘আমরা’তে মনোযোগ দিতে হবে। তাহলেই দেখবেন সুখের সরলরেখা খুঁজে পেয়েছেন। চাইনিজ একটি প্রবাদে বলা হয়েছে, ‘তুমি যদি এক ঘণ্টার জন্য সুখী হতে চাও তাহলে একটি ভাতঘুম দাও। যদি একদিনের জন্য সুখী হতে চাও তাহলে মাছ ধরতে বা পিকনিকে চলে যাও। যদি এক বছরের জন্য সুখী হতে চাও তাহলে উত্তরাধিকারী সম্পদ অর্জন করো। যদি এক জীবনের জন্য সুখী হতে চাও তাহলে অপরের সাহায্যে এগিয়ে যাও।’ তাই বলবো জীবনটা উচ্ছ্বাসের, উদযাপনের। সেই উদযাপনটা হোক হাসিমুখের। হ্যাপিনেস অন রাখার।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।