বিসিএস জয়
প্রস্তুতির পাশাপাশি নিয়মিত মডেল টেস্ট দিতে হবে: মুহিব
মো. মুহিবুর রহমান ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার মোবারকপুর গ্রামে। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন। বর্তমানে তিনি ৩৮তম শিক্ষা ক্যাডারে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।
সম্প্রতি তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, সফলতার গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতি কেমন?
মো. মুহিবুর রহমান: রিটেন ও ভাইভা আশানুরূপ দিতে পারায় ভালো কিছুর প্রত্যাশা ছিল। এরপরও রেজাল্ট শিটে নিজের রোল পুলিশ ক্যাডারে দেখে প্রথম অনেকক্ষণ বাকরুদ্ধ ছিলাম! বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, আমি আমার স্বপ্ন ছুঁতে পেরেছি। সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কবে থেকে?
মো. মুহিবুর রহমান: ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা সব সময় বিসিএসে ভালো করে এমন একটা কথা ক্যাম্পাসে ছিল সর্বজনস্বীকৃত। একসময় বিদেশের প্রতি ঝোঁক থাকলেও অনার্স ৪র্থ বর্ষে থাকতে মূলত সরকারি চাকরির প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু করি। একসময় প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি হয়ে ওঠে আমার ধ্যান-জ্ঞান।
আরও পড়ুন: হতাশ হয়েছি বহুবার কিন্তু হাল ছাড়িনি: আনিসুর রহমান
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রায় প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মো. মুহিবুর রহমান: সরকারি চাকরি পেতে হবে এটা ছিল প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশে সরকারি চাকরির মধ্যে বিসিএসকেই সবাই প্রধান মনে করে। আমিও এমন মনে করতাম। অনার্স ৪র্থ বর্ষের শুরু থেকেই বিসিএস প্রস্তুতি শুরু। বন্ধুরা গ্রুপ করে পড়তাম নিয়মিত। নিজের চেষ্টা তো ছিল সর্বোচ্চটাই। অনার্স শেষ করার পর বিসিএসের পাশাপাশি সরকারি ব্যাংকের পরীক্ষা দিতাম। নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিল। ইংরেজি ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ে উন্নতির চেষ্টা করতাম প্রতিনিয়ত। ম্যাথে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলাম। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির গণিত ও বিজ্ঞান বই এবং একাদশ শ্রেণির প্রয়োজনীয় বইগুলো সংগ্রহ করে বুঝে বুঝে শেষ করেছিলাম। এটি পরে অনেক সাহায্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিক থেকে টিউশনি করেছি। অনেকগুলো কোচিংয়ে নিয়মিত ইংরেজি ক্লাস নিতাম, যা পরে কাজে লেগেছে।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. মুহিবুর রহমান: আমার বড়ভাই একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে সব সময় আমাকে সরকারি চাকরিতে ক্যারিয়ার গড়ার কথা বলতেন। আর আমার সরকারি চাকরি পেতে হবে এই বোধটা সৃষ্টি করতে যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, সে বর্তমানে আমার স্ত্রী।
জাগো নিউজ: আপনার স্বপ্নযাত্রায় কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
মো. মুহিবুর রহমান: একদম প্রান্তিক পর্যায় থেকে উঠে আসায় বেসিক ঠিক করতে অন্য অনেকের চেয়ে অনেক বেশি সময় দিতে হয়েছে। মাঝে মাঝেই অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে সব ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করতো। ঢাকায় যতবার ব্যাংকের পরীক্ষা দিতে গিয়েছি, বারবার মনে হয়েছে এবার যদি হয়ে যেত; তবে এই যাওয়া-আসা থেকে রক্ষা পেতাম।
আরও পড়ুন: বিসিএসে প্রথম পছন্দের ক্যাডারই পেয়েছেন মনির
জাগো নিউজ: বিসিএসের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া কেমন সাহায্য করেছে?
মো. মুহিবুর রহমান: আমার প্রস্তুতিতে অনেক বেশি ভূমিকা রেখেছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুকে অনেক গ্রুপ থেকে অনেক ভালো ভালো নোট পেয়েছি। অনেক গোছানো নোট প্রিন্ট দিয়ে পড়তাম। মেইন ফেসবুক আইডির বাইরে আরেকটি আইডি খুলেছিলাম শুধু বিসিএস প্রস্ততির জন্য, যেখানে শুধু বিসিএস সম্পর্কিত বিষয়াদি ছাড়া আর কিছু ছিল না। নতুনদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকরী হতে পারে। এছাড়া অনেক ভালো ভালো অ্যাপসও আছে, যেগুলো সাহায্য করে।
জাগো নিউজ: নতুনদের বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?
মো. মুহিবুর রহমান: বিসিএসে আসতে চাইলে আপনার সব কাজই যেন হয় বিসিএস কেন্দ্রিক। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রিলিমিনারির শক্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে পরীক্ষা সহজ হোক কিংবা কঠিন হোক কোনোবারই আপনার প্রিলিমিনারি মিস না হয়। প্রস্তুতির শুরুতে বোর্ড বই এবং বাজারের ২ সেট গাইড বই শেষ করে নিলে প্রিলিমিনারি মিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। নিয়মিত প্রস্তুতির পাশাপাশি মডেল টেস্ট দিলে পরীক্ষায় সময় ব্যবস্থাপনায় এটা অনেক সাহায্য করে। প্রতিদিন নতুন কিছু না কিছু শেখার আগ্রহ থাকাটা জরুরি। লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে অনেক ভালো করা সম্ভব। এ তিন বিষয়ের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখলে ক্যাডার কপালে জোটার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। বাংলার কিছু কিছু জায়গায় খুব ভালো মার্কস তোলা যায়। বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদে লিখিততে মোট ৬৫ মার্কস রয়েছে। যেখানে ভালো করতে পারলে গণিতের মত ভালো মার্কস তোলা সম্ভব। এজন্য Daily Editorial অ্যাপ বা যে কোনো অনুবাদের বই থেকে প্রতিদিন অনুবাদ অনুশীলন করতে হবে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিকের জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়া ও বাজারের ভালো দুই-একটা গাইড বই-ই যথেষ্ট। নিয়মিত লিখিত মডেল টেস্ট দিয়ে দ্রুত লেখার অভ্যাসটা চালু রাখলে অনেক বেশি সাহায্য পাবেন পরীক্ষায়। প্রশ্ন সহজ বা কঠিন যা-ই হোক, মাথা ঠান্ডা রেখে সবগুলোর উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে। লিখিতের পর সময় নষ্ট না করে ভাইভার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। কোনোভাবেই ইংরেজি স্পিকিংয়ে দুর্বলতা রাখা যাবে না। কথা বলায় জড়তা থাকলে এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। ইউটিউবের বিভিন্ন ভিডিও এক্ষেত্রে অনেক কাজে লাগতে পারে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. মুহিবুর রহমান: নিজের পেশায় সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে চাই। এছাড়া দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে আগামীর পথ চলবো।
এসইউ/জেআইএম