বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম সাজ্জাদ

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
সাজেদুর আবেদীন শান্ত সাজেদুর আবেদীন শান্ত , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০২:১৩ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন ৪১তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নে। বাবাকে হারান ২০০৩ সালে; যখন বয়স আট বছর। মা গৃহিণী। বড় ভাই পরিবারের হাল ধরেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও ইসলামিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইইই বিভাগ থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০২২ সালে সোনালী ব্যাংক পিএলসিতে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

জাগো নিউজ: পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়ার অনুভূতি কেমন?
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন: প্রথম যে হয়ে যাবো, এটা তো জানতাম না। ছোটবেলায় গ্রামের স্কুল-মাদ্রাসায় প্রথম হতাম। এরপর অনেক বছর কোথাও প্রথম হতে পারিনি। সেটা যে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় হয়ে যাবো, তা কল্পনাতেও ছিল না। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমার পরিবারের উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা। সবমিলিয়ে অনেক ভালো লাগছে। আলহামদুলিল্লাহ।

আরও পড়ুন: পরিবার আমাকে সাহস জুগিয়েছে: মীম জাহান তন্বী

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন: আমার বাবা মারা যান, আমার বয়স যখন মাত্র আট বছর। পারিবারিক অবস্থাও তখন তথৈবচ। সেই পরিস্থিতি থেকে এ পর্যন্ত উঠে আসা অনেক কঠিনই হতো, যদি আমার বড় ভাই না থাকতেন। তিনি আমার পরিবার এবং আমাকে সার্বিকভাবে যেভাবে সাহায্য করেছেন, সামলেছেন এবং অকুণ্ঠ সমর্থন জুগিয়েছেন, তা অনস্বীকার্য। তিনি আমার জীবনে আল্লাহ প্রদত্ত আশীর্বাদ স্বরূপ। আমার সব প্রতিবন্ধকতা আল্লাহ আমার ভাইকে দিয়েই দূর করে দিয়েছেন।

জাগো নিউজ: কার অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি ছিল?
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন: আমার মায়ের। আমার মা আমাদের সংসারে আসার পর থেকেই নানাভাবে হেনস্থা হয়েছেন। সাধ-আহ্লাদ কিছুই পূরণ করতে পারেননি। সেই দুরবস্থা থেকে আমাকে নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেছেন। পড়াশোনায় হাতেখড়ি দিয়েছেন। সর্বোপরি আমার জন্য যেভাবে দোয়া করেছেন আল্লাহর কাছে, তা অতুলনীয়। তিনিই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এছাড়া আমার বোন, ভাবি, স্ত্রী সবাই আমার জন্য মন থেকে দোয়া করেছেন। ভালোবাসা ও স্নেহের কোনো অভাব ছিল না আমার জীবনে। আমার পরিবারই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আরেকটি অনুপ্রেরণা হলো এলাকাবাসী ও দেশের জন্য বড় পরিসরে কিছু করা। বাবা ও মায়ের নামে কিছু প্রতিষ্ঠা করা। এ সবকিছুই আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখছিলেন কবে থেকে?
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন: বিএসসি পাস করার পর বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা জাগে। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করলেও যখন দেখলাম দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরির বাজার খুব একটা ভালো নয়; তখন সরকারি চাকরি বিশেষ করে বিসিএসই আমাকে আকৃষ্ট করে বেশি।

আরও পড়ুন: বিসিএসই হয়ে ওঠে লুৎফুরের ভরসার জায়গা

জাগো নিউজ: বিসিএস জয়ের গল্প শুনতে চাই—
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন: শুরু থেকেই পরিশ্রম করবো এমন একটা মনোভাব ছিল। পরীক্ষা দিয়ে এসে যেন কোনো প্রকার আফসোস করতে না হয়, সেই চেষ্টা করতাম। আমার দুর্বলতার বিষয়গুলোতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখিনি। সাধারণ জ্ঞান ভয় পেতাম, তাই এটি নিয়ে বেশি সময় দিয়েছি। অনেক বেশি পরীক্ষা দিতাম। অনলাইন- অফলাইন যখন যেভাবে পেরেছি, শুধু পরীক্ষা দিয়েই গেছি। ম্যাথ, বিজ্ঞান, মেন্টাল এবিলিটি, ইংরেজি এসব বিষয় আমার জন্য শক্তির জায়গা ছিল। তাই এখানে খুব একটা সময় দিতে হয়নি। কোনো বিষয়ে কম পাবো, কোনো বিষয়ে বেশি এমন করতে চাইনি। চেষ্টা করেছি সব বিষয়ে সমানভাবে ভালো করতে। ভাইভাতেও কোনো আফসোসের জায়গা রাখিনি। প্রথম পছন্দ থেকে জিজ্ঞেস করতে পারে এমন সব প্রশ্নই আমি নোট করে ফেলেছিলাম। পাশাপাশি নিজের সাবজেক্টের বেসিক প্রশ্নগুলো ও সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো নোট করেছি। ইংরেজিতে উত্তর করতে পারার জন্য অনেক ভাইভা সেশন করেছি। ফলে ভাইভা-ভীতি কেটে গিয়েছিল। সবমিলিয়েই আসলে আজকের এ ফলাফল।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটাই, দেশের সেবা করা। আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা যেন সঠিকভাবে ও সততার সঙ্গে পালন করতে পারি এটাই কামনা। পাশাপাশি আমার পরিবার ও এলাকাবাসীর জন্য কিছু করতে চাই। আমার দ্বারা দেশ ও দশের উপকার হলে সেটাই হবে আমার জীবনের সার্থকতা। সবার কাছে দোয়া চাই।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।