দারিদ্র্যকে জয় করে বিসিএস ক্যাডার আসাদ

মমিন উদ্দিন
মমিন উদ্দিন মমিন উদ্দিন , লেখক
প্রকাশিত: ০৮:৩১ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২৩

আসাদুল ইসলাম ৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার জন্ম গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দা গ্রামে। বাবা আশেক আলী, মা রেজিয়া বেগম। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তার বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন

জাগো নিউজ: বিসিএসে ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতি কেমন?
আসাদুল ইসলাম: আজ পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া। এ অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো নয়। রেজাল্ট পেয়ে প্রথমেই আমার বড় ভাইকে ফোন দিই। যার জন্য আমি আজ এ জায়গায়। রেজাল্ট শুনেই তিনি চিৎকার দিয়ে ওঠেন। তারপর মাকে ফোন দিয়ে রেজাল্টের কথা বলতেই মা খুশিতে কান্না করে দেন। সে এক অন্যরকম অনুভূতি।

আরও পড়ুন: প্রথম বিসিএসেই কাস্টমস অ্যান্ড এক্সসাইজে প্রথম সাব্বির

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
আসাদুল ইসলাম: আমার জন্ম হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক গরিব পরিবারে। ছোটবেলায় নদীভাঙনের কারণে অন্যের জমিতে বাড়ি করে থাকতে হয়েছে। অনেক সময় দিনে দুবেলা কখনোবা একবেলা খেয়েছি। অন্যের জমিতে কাজও করেছি। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগে পাই। কিন্তু ভর্তির টাকা না থাকায় আমার বড় ভাই অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করে আমাকে ভর্তি করিয়ে দেন।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
আসাদুল ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম স্বপ্ন দেখা শুরু। তারপর তা চূড়ান্ত রূপ পায় ৩য় বর্ষের শেষে, যখন আমার বড় ভাই বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন থেকে সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তখনই সিদ্ধান্ত নিই আমাকেও ভালো কিছু করতে হবে।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
আসাদুল ইসলাম: প্রথম বিসিএস হিসেবে প্রিলি পরীক্ষার আগের রাতে তেমন ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পরই বুঝতে পারি যে, আমি লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগে পাবো। তাই দ্রুত লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। কিন্তু করোনার জন্য তা ব্যাহত হয়। এরই মধ্যে আমার বাবা করোনা পজিটিভ হন। তাকে নিয়ে প্রায় ১৫ দিন হাসপাতালে থাকতে হয় আমাকে। তাই মোটামুটি প্রিপারেশন নিয়ে লিখিত দিলাম। আল্লাহর রহমতে পাসও করলাম। ভাইভার ঠিক ৭ দিন আগে আমার দেড় বছরের ভাতিজা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ভাইভার আগের দিন সে মারা যায়। তাই মানসিকভাবে একটু দুর্বল হয়ে পড়ি। তারপরও ভাইভা মোটামুটি ভালোই হয়।

আরও পড়ুন: যেভাবে পুলিশ ক্যাডারে ৫১তম হলেন মিজান

জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?
আসাদুল ইসলাম: আমার বড় ভাই (ইসরাফিল আলম) আমার জীবনের পথপ্রদর্শক। তার কারণে আমি আজ বর্তমান অবস্থায় আসতে পেরেছি। তিনি আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। এর বাইরে আমার বোন আমাকে সাহস জুগিয়েছেন।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আসাদুল ইসলাম: সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আমার পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।