বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
শিগগির শুরু হতে যাচ্ছে ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। এ নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে ভালো করার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ৪০তম বিসিএসের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউল হাসান সৌরভ—
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বিষয়টি বিসিএস প্রস্তুতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা আপনি যে বিষয়েই অনার্স বা মাস্টার্স করে থাকুন না কেন, এর মৌলিক বিষয়গুলো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইবার জন্য লাগবেই। আর পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম পছন্দ হলে তো কথাই নেই।
তাই আমি বলব, ১০০ নম্বরের এ বিষয়ে আপনি আপনার প্রস্তুতিতে যত বেশি বুঝে বুঝে কনসেপশন ক্লিয়ার রাখতে পারবেন; ততই তা আপনার পথকে সহজ করে দেবে।
প্রথমেই বলব, ৪০ মার্কসের কনসেপচুয়াল প্রশ্নের বিষয়ে। যেহেতু এ অংশটুকু বিভিন্ন তত্ত্ব, নীতি, মতবাদ, চুক্তি, গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, কূটনীতির মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে গঠিত। তাই এ অংশে ভালো করতে হলে আপনাকে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে প্রতিটি বিষয়ে। সঠিক ধারণা না থাকলে একজন পরীক্ষার্থী উপগ্রহ রাষ্ট্র ও মুখাপেক্ষী রাষ্ট্র, উদারতাবাদ ও বাস্তববাদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে হয়তো সঠিক উত্তর করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে আমার পরামর্শ হচ্ছে
১. বই থেকে কোনো কনসেপ্ট পরিষ্কার না হলে ইন্টারনেট বা ইউটিউব থেকে সাহায্য নিন।
২. বাজারে প্রচলিত ভালো একটি বই থেকে বিগত প্রশ্নসহ সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলুন, এতেই আশা করি ১০টি প্রশ্ন থেকে ৬-৭টি প্রশ্ন কমন পাবেন।
৩. এ বিষয়ে ভালো মার্কস তুলতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের উক্তি বা প্রামাণ্য সংজ্ঞা দিন, যেমন- বিভিন্ন মতবাদ, ধারণা ও আদর্শ ইত্যাদির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। এছাড়া ওই মতবাদ বা ধারণা কোথাও প্রচলিত ছিল বা আছে কি না এবং ইতিহাসে এর প্রয়োগ ও ফলাফল কি, তা জেনে উপস্থাপন করুন।
৪. ভৌগোলিক কোনো বিষয় যেমন- সিল্ক রোড ইত্যাদি পরীক্ষায় এলে ম্যাপ দেওয়ার চেষ্টা করুন। তবে না জানলে আন্দাজে দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ম্যাপ না দিয়েও যদি আপনি মূল তথ্যগুলো গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারেন। তাহলেও ভালো মার্কস আশা করা যায়। অনেক প্রার্থী ম্যাপ দিতে গিয়ে অদক্ষতার কারণে খাতার সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলেন, যা আমার মতে পরিহার করাই উত্তম।
৫. এ অংশে প্রতিবছরই সাধারণত ২-৩টি প্রশ্ন আনকমন থাকে, যা নিজ আইডিয়ার পরিসর বাড়িয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে অবশ্যই উত্তর করে আসবেন।
৬০ নম্বরের এমপিরিক্যাল ও প্রবলেম সলভিং বিষয়ে কিছু কথা
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির এ অংশটুকু আমার খুবই প্রিয়। কারণ এ অংশের প্রস্তুতিতে একদিকে যেমন কম সময় প্রয়োজন, অন্যদিকে হাল আমলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো থেকেই যেহেতু প্রশ্ন করা হয়। তাই নিয়মিত পত্রিকায় চোখ বোলালেই এর প্রস্তুতি অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়। বাকিটা নির্ভর করছে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো গুছিয়ে জেনে পরীক্ষার হলে যাওয়া ও তার উপস্থাপনের ওপর।
গুরুত্বপূর্ণ টপিকের কেন্দ্রে সব সময় থাকবে পরাশক্তিগুলো, যেমন আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের আন্তর্দ্বন্ধ, অর্থনীতি, বাণিজ্য ও যুদ্ধ এবং এর বৈশ্বিক প্রভাব। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে জানতে হবে বিশেষত ইসরাইল, সৌদি আরব, ইরান ও তুরস্কের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি উভয়টির ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে বাংলাদেশের সাথে ভারত, চীন ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহের সম্পর্ক, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সমস্যার ক্ষেত্র।
এ পার্টে উত্তর করার ক্ষেত্রে পত্রিকা থেকে সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান, সমরবিশেষজ্ঞ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রমুখের উক্তি দিতে পারলে তা আপনার উত্তরের কোয়ালিটি অনেকটা বাড়িয়ে দেবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি, আপনার আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির খাতা নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবেন এমন কোনো বিশেষজ্ঞ; যিনি প্রতিদিনকার ঘটে যাওয়া দেশ ও বাইরের পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাখেন টিভি নিউজ ও পত্রিকার মাধ্যমে। তাই প্রবলেম সলভিং ও এমপিরিকালের উত্তর করার ক্ষেত্রে আপনার উত্তর ও মতামতকে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞদের উক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে, তা পরীক্ষকের সুনজর কাড়তে সক্ষম হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি তথ্য নেবেন বই-পত্রিকা-ইন্টারনেট থেকে কিন্তু লিখবেন পত্রিকার মাপকাঠিতে, যাতে লেখাটি হয় সাহিত্যসমৃদ্ধ ও তথ্যভিত্তিক।
আগের পর্ব
> বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: বাংলা
> বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: ইংরেজি
> বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: গণিত
> বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: বাংলাদেশ বিষয়াবলি
এসইউ/এএসএম