বাবার অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার মানস
মানস কির্ত্তনীয়া। ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায়। তার বাবা নির্মলেন্দু কির্ত্তনীয়া ও মা ঊষা রাণী বিশ্বাস ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মানস রঘুনাথপুর দীননাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কলেজ অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেট থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ থেকে অনার্স এবং প্রাণরসায়ন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
সম্প্রতি তার বিসিএস জয়ের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাম হোসাইন—
জাগো নিউজ: ছেলেবেলা কোথায় এবং কেমন কেটেছে?
মানস কির্ত্তনীয়া: আমার ছেলেবেলা কেটেছে গোপালগঞ্জ সদর থানার রঘুনাথপুর গ্রামে। একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে একজন বাচ্চার গল্প যেরকম হয়; সেরকম করেই জীবন কেটেছে আমার। স্কুল ছুটির পর মাঠে খেলাধুলা, সবাই দলবেঁধে গোসল, হৈ-হুল্লোড়ের মাঝেই জীবন কেটে গেছে। বাবা-মায়ের অনুশাসন ও ছিলো জীবনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। আমি মাধ্যমিক পাস করেছি আমার বাবার স্কুল থেকে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছি রাজধানীর একটি স্কুল থেকে। আমার বাবা একজন আদর্শ শিক্ষক, যার কাছ থেকে আমার সব আদর্শ শিখতে পেরেছি। বাবা আমাকে সব সময় তার কাছে পড়তে আসা ভালো ছাত্রদের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতেন। যাতে আমার মধ্যে ভালো ছাত্রের গুণাবলি তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই বিসিএস ক্যাডার মুন্নী
জাগো নিউজ: বিসিএস দেবেন—এ সিদ্ধান্ত কখন নিলেন?
মানস কির্ত্তনীয়া: আমি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম সারির ছাত্র ছিলাম। তাই সবার একটা আশা ছিল আমি মেডিকেলে পড়বো। আমারও ইচ্ছা ছিল দেশের বাইরে মেডিকেলে পড়বো। আমি রাশিয়ার একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিও পাই। কিন্তু রাশিয়ান ভাষায় পড়াশোনা করতে হবে—ভাষা ভিন্নতার কারণে বাবা-মা আমাকে সায় দেননি। তার ওপরে আমি পরিবারের একমাত্র ছেলে। তারপর আমি ভর্তি হই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকে মেডিকেলে। এসব কারণে আমি এই বিষয়টার সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে পারিনি। তাই আমি একটু পিছিয়ে পড়ি সবার থেকে। সবাই আমাকে ভিন্ন নজরে দেখতেন। এটি আমি টের পাই। ৩৮তম বিসিএসের প্রিলি পরীক্ষায় আমার এক পরিচিত ভাইয়ের অদ্ভুত একটা ব্যবহার ছিলো আমার টার্নিং পয়েন্ট। তখনই আমি প্রতিজ্ঞা করি, আমি তার চেয়ে ভালো ক্যাডার হবো এবং আমি পেরেছি। আমি ভেবেছি এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমি আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।
জাগো নিউজ: বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কীভাবে?
মানস কির্ত্তনীয়া: আমি প্রিলিমিনারির জন্য একটা সিরিজের বই পড়ি। একই বিষয়ের বেশি বই পড়লে কনফিউশন তৈরি হবে। আর বেশি বেশি মডেল টেস্ট দিতে হবে। তাতে যে উপকার তা হবে, তা হলো নিজেকে যাচাই করতে পারবেন। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি রিটেনে ভালো করতে পারবো। হুবহু বই থেকে মুখস্থ করাটা ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না। কারণ একই লেখা আরও অনেকেই লিখবেন। নিজস্ব কিছু থাকতে হবে। রিটেনের খাতার লেখা পরিষ্কার থাকতে হবে। যাতে স্যারদের নজরে পড়ে। সবার দুটো জোন থাকবে—স্ট্রং জোন আর উইক জোন। আমার টার্গেট ছিল স্ট্রং জোনকে স্ট্রংগার করতে হবে। আর উইক জোনকে অ্যাভারেজে আনতে হবে। এই স্ট্র্যাটেজি প্রিলি, রিটেন দুটার জন্যই কার্যকরী। আর ভাইভায় কমন টপিকগুলো যেমন- মুক্তিযুদ্ধ, আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, জেলা ইত্যাদি সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোতে ভুল করা যাবে না। সাম্প্রতিক সব বিষয় সম্পর্কিত ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। আপনার পছন্দের তালিকার বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। ইংরেজিতে কথা বলার ভালো দক্ষতা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: বিসিএস মৎস্য ক্যাডারে সাঈদার প্রথম হওয়ার গল্প
জাগো নিউজ: বিসিএসের জন্য আপনি কী কী বই পড়েছেন?
মানস কির্ত্তনীয়া: পরীক্ষার জন্য আমি নরমাল বাজারের গাইড বই-ই পড়েছি। আমার বই পড়ার শখ আছে। তাই পরীক্ষার আগেই বিভিন্ন বই পড়া হয়েছে। এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই কাজে দিয়েছে।
জাগো নিউজ: এতটা পথ পাড়ি দেওয়ায় কার অনুপ্রেরণা ছিল?
মানস কির্ত্তনীয়া: আমার বাবা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি আমাকে সব সময় মানসিকভাবে শক্ত রাখতে সাহায্য করতেন। এটি আমাকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। আমার স্ত্রী আমাকে সব সময় সব বিষয়ে সাহায্য করেছেন। আমার জীবনে আমার মায়ের একটা প্রচণ্ড প্রভাব আছে। মায়ের স্কুলের ছাত্র আমি এবং ভাইভা বোর্ডের একটা প্রশ্নের উত্তর ছিল, আমার মায়ের কাছ থেকে শেখা একটা কবিতা থেকে। মায়ের ইচ্ছা ছিল, আমি ক্যাডার হতে পারলে হয়তো বা তার সব ইচ্ছা পূরণ হবে। সৃষ্টিকর্তা সব ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
জাগো নিউজ: সিভিল সার্ভিসে কেন এলেন?
মানস কির্ত্তনীয়া: সিভিল সার্ভিসের বৈচিত্র্য এবং মানুষের সঙ্গে মেশার যে অবারিত সুযোগ—এটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। দেশের ভেতরে সিভিল সার্ভিসের একটা সম্মান আছে। সব মিলিয়ে নিজের ভালো লাগা থেকে আসা।
আরও পড়ুন: দুই-আড়াই মাসের প্রস্তুতিতে বিসিএস ক্যাডার মেহেদী
জাগো নিউজ: এই পেশায় কীভাবে দেশের সেবা করতে চান?
মানস কির্ত্তনীয়া: দেশের সেবা কতটা করতে পারবো জানি না। তবে আমার সততা এবং কর্মনিষ্ঠা বজায় রাখার চেষ্টা করবো। কর্মক্ষেত্রে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে—দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে উজাড় করে দেওয়া এবং সুনামের সঙ্গে চাকরি জীবনে ইতি টানা।
এসইউ/জেআইএম