কঠিন পথ পেরিয়ে সফল উদ্যোক্তা নওরীন

বেনজির আবরার
বেনজির আবরার বেনজির আবরার , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০১:৫৯ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২৩

নওরীন আহমেদ। উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এ তরুণীর সফলতম প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সিগনেচার লাইফস্টাইল’। বলা হয়ে থাকে, নওরীনের ফ্যাক্টরিতে তৈরি পোশাক বিক্রি হয় দেশের নামিদামি অনেক ফ্যাশন ব্র্যান্ডে। বাবার মৃত্যুর পর সংসার যখন চলছিল না ঠিকমতো; তখন সারাদিন না খেয়ে কাজের সন্ধান করেছেন। এমন সময়েই তার ব্যবসায়ের অনুপ্রেরণা, নিত্যদিনের পরামর্শক রিপন আহমেদ সাকিবের আবির্ভাব। যিনি সফল ব্যবসায়ী। নওরীনকে শিখিয়েছেন কঠিন পথে সহজে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়।

রাজধানীর উত্তরায় তার অফিসে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন উদ্যোগ ও সফলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—

জাগো নিউজ: প্রথমেই নিজের সম্পর্কে পাঠকদের বলুন—
নওরীন আহমেদ: আমি ছোটবেলা থেকেই ব্যবসা এবং ক্যারিয়ার গড়ার প্রতি আগ্রহী। বয়স যখন ১৫ বছর; তখন থেকেই আমি নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া শুরু করি। আমার জীবনের আদর্শ আমার বাবা। তার থেকে শিখেছি অনেক কিছু। তার স্বপ্ন নিয়েই আসলে বড় হওয়া। মা আর বড় বোন নিয়ে আমার ছোট্ট সংসার এখন।

কঠিন পথ পেরিয়ে সফল উদ্যোক্তা নওরীন

জাগো নিউজ: উদ্যোক্তা হিসেবে কবে যাত্রা শুরু করলেন?
নওরীন আহমেদ: ২০১৬ সাল থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করি। ছোট ছোট করে নানা উদ্যোগ নেওয়া শুরু করি সে সময় থেকেই। শুরুতে আমার এই যাত্রা সুখের ছিল না। প্রথম উদ্যোগ যখন নিই, ওই সময় বাবা মারা যান। বিরাট ঋণের বোঝা এবং পরিবারের দায়িত্ব, শুরুতেই এত বড় একটা ধাক্কা আমাকে পিছিয়ে দেয়। ব্যবসা ছেড়ে কিছুদিন চাকরি করি। তবে এত বাধা পেয়েও থেমে যাইনি। পূর্ণোদ্যমে যাত্রা শুরু করেছি বারবার। আমার সফলতা আসতে শুরু করে একটি ই-কমার্সে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে। তাদের প্রোডাক্ট সরবারহ করতে গিয়ে আমার গার্মেন্টসের পণ্য সম্পর্কে বেশ জানাশোনা হয়। এরই সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠা করি বায়িং হাউজ।

আরও পড়ুন: ইয়াসমিন মেহেরের স্বপ্ন ‘আলবাট্রস বিডি’

জাগো নিউজ: আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলুন—
নওরীন আহমেদ: আমরা মূলত বাচ্চাদের পোশাক, মেল-ফিমেলদের ফ্যাশনেবল পোশাক নিয়ে কাজ করি। হোলসেল ক্যাটাগরিতে আমরা এখন দেশের মধ্যে অন্যতম পর্যায়ে অবস্থান করছি পণ্যের মান ও দামের সামঞ্জস্য রেখে। এত বেশি পরিশ্রম ও আঁধার কাটিয়ে ৩ জন ক্রেতা নিয়ে শুরু করা আমার ব্যবসাটি আজ দশ হাজার প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবারহ করছে।

কঠিন পথ পেরিয়ে সফল উদ্যোক্তা নওরীন

ক্ষুদ্র থেকে বড়, যে কোনো উদ্যোক্তাকে আমি সমান গুরুত্ব দেই বলেই আজ এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তবে সব সময় চেষ্টা করি নতুন উদ্যোক্তা এবং তাদের উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করতে। চেষ্টা করি বিপণন এবং প্রচারসহ নানাভাবে সহায়তার মাধ্যমে তাদের উদ্যোগগুলোকে আলোর মুখ দেখাতে। সম্প্রতি আমি স্বপ্নের প্রজেক্ট সিগনেচার লাইফস্টাইল নামে একটি ম্যানস ওয়্যারের আউটলেট চালু করেছি। আমার ইচ্ছা প্রতিষ্ঠানটিকে মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়তে দেখা।

জাগো নিউজ: উদ্যোক্তা হিসেবে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন—
নওরীন আহমেদ: উদ্যোক্তাদের জীবনে চ্যালেঞ্জ না থাকলে সফলতা আসে না, আমারও তাই। আমার প্রতিষ্ঠানটি রাজধানী ঢাকার উত্তরায় শুরু হয়। আমি যখন যাত্রা শুরু করি; তখন উত্তরায় প্রায় ৮-৯ হাজার প্রতিষ্ঠিত বায়িং হাউজ ছিল। এত বেশি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একজন নারী হয়ে নিজেকে নিজের প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করাটা অনেক বেশি কঠিন ছিল। শুধু তা-ই নয়, আমাদের পণ্যের মান এবং দামও তুলনামূলক বেশি ছিল। তবে কঠিন কাজটিও সফল করেছি আমি।

আরও পড়ুন: ২ হাজার টাকার মূলধনে লাখোপতি কথা

কঠিন পথ পেরিয়ে সফল উদ্যোক্তা নওরীন

জাগো নিউজ: এ উদ্যোগে পরিবারের সমর্থন কতটা পেয়েছেন?
নওরীন আহমেদ: পরিবারের বলতে আমি সব সময়ই আমার মায়ের সমর্থন পেয়েছি। পাশাপাশি যে মানুষটি আমার এবং আমার ব্যবসায়ের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে পাশে ছিলেন; তিনি হচ্ছেন আমার কাজিন। তার নাম রিপন আহমেদ সাকিব। মানুষটি আমার ব্যবসায়ের সব গোছাতে সহায়তা করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন।

জাগো নিউজ: নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন—
নওরীন আহমেদ: আমার বায়িং হাউজ তার গতিতে এগিয়ে চলবে। তবে আমি স্বপ্ন দেখি ‘সিগনেচার লাইফস্টাইল’ নামের ব্র্যান্ডটিকে একদিন সারাদেশে এবং বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দিতে। একইসঙ্গে সব সময় চেষ্টা করবো নতুন উদ্যোক্তাদের উঠে আসায় সাহায্য করে যেতে।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।