নিজের শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করে এগোতে হবে

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১১:৫৮ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

মো. মুহিবুর রহমান ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে (ইংরেজি) ২য় হন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার মোবারকপুর গ্রামে। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক পাস করেন।

বর্তমানে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, সফলতার গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন?
মো. মুহিবুর রহমান: সব অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রেজাল্টের সময় আমি জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে মৌলভীবাজারের বড়লেখা শাখায় কর্মরত। ২০২০ সালের ৩০ জুন সকাল থেকে ফেসবুকের মধ্যে গুঞ্জন চলছিল রেজাল্ট দেবে। কিন্ত ব্যাংকে ক্লোজিংয়ের কাজে খুবই ব্যস্ত ছিলাম। কাঁপা কাঁপা হাতে বারবার নিউজফিড দেখছিলাম। রিটেন ও ভাইবা ভালো হওয়ায় মোটামুটি আত্মবিশ্বাস ছিল কিছু একটা পাব। আল্লাহ ক্যাডার পাইয়ে দিলেন। এ অনুভূতি ভোলার নয়।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মো. মুহিবুর রহমান: বিসিএসের স্বপ্ন বলতে তেমন কিছু ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হিসেবে পড়াশোনা শেষ করে প্রথম কাজ ছিল চাকরি খুঁজে নেওয়া। অনার্সের শুরু থেকে শুনতাম ইংরেজি থেকে বিসিএস বেশি হয়। আমাদের সিনিয়ররা সব বিসিএসেই ভালো করতেন। তাদের দেখেই বিসিএসের স্বপ্ন দেখা শুরু। আমার বড়ভাই একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সব সময় বলতেন, ‘তুই কখনো বেসরকারি চাকরিতে ঢুকবি না, যতদিনই লাগুক। তুই সরকারি চাকরি করবি।’ হিঙ্গাজিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল মুনতাকিম অনেক জিনিস বুঝিয়ে দিতেন। আর সবমিলিয়ে সরকারি চাকরির মধ্যে বিসিএস বেশি আকর্ষণীয় বলেই বিসিএসে আসা।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, পাশাপাশি প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মো. মুহিবুর রহমান: সিলেটের অনেক এলাকায় টিউশনি করতাম। ইউসিসি, ইউনিএইড, ওমেকাসহ অনেকগুলো কোচিংয়ে নিয়মিত ক্লাস নিতাম। অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ার সময় সিদ্ধান্ত নিই দেশের বাইরে যাব। পাঁচ বন্ধু মিলে সিলেটের চৌহাট্টায় একটি আইইএলটিএস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। কিন্তু কিছুদিন যেতেই তাদের সার্ভিস নিয়ে আর সন্তুষ্ট থাকতে পারিনি। বন্ধুবান্ধব সবাই তখন মোটামুটি বিসিএসমুখী হচ্ছিল। তখন একজনের অনুপ্রেরণায় আমার বিসিএসমুখী হওয়া। পাশাপাশি পরিবারের সহযোগিতায় ব্যস্ততা অনেকটা কমিয়ে দিয়ে টেবিলে অনেক বেশি সময় দেওয়া শুরু। শাবিপ্রবির ইংরেজি ১১তম ব্যাচের আমরা কয়েকজন একসঙ্গে প্রস্তুতি নিয়েছি। বিশেষভাবে মুজিবের নাম বলতে হয়। একটি বিসিএস কোচিংয়ের সিলেট শাখায় রিটেন ব্যাচে ভর্তি হয়েছিলাম। এটাও অনেক সাহায্য করেছে প্রস্তুতিতে। জীবনের প্রথম চাকরি জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। তবে এর আগে অনেকগুলো ভাইবা দিয়েছিলাম। যা বিসিএসে অনেক কাজে লেগেছে।

জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. মুহিবুর রহমান: বাবা-মা বিসিএস নিয়ে এতকিছু না বুঝলেও সব সময় চাইতেন ভালো কিছু হোক। অনার্স ৪র্থ বর্ষে থাকতে একজনের (বর্তমানে আমার স্ত্রী) সঙ্গে পরিচয় হয়। সে-ই মূলত সরকারি চাকরির অনুপ্রেরণা দেয়। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিসিএসের পাশাপাশি নিয়মিত সরকারি ব্যাংকের পরীক্ষা দিয়েছি।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএস প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মো. মুহিবুর রহমান: অনেকেই ১ম বর্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। পরে যখন আসল সময় আসে; তখন আর শক্তি থাকে না। তাই আমি বলব, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ভালোভাবে উপভোগ করা উচিত। আর শুধু প্রিলি নির্ভর পড়াশোনা না করে কিছু মৌলিক জিনিস আয়ত্তে আনার চেষ্টা করতে হবে। অনার্সে থাকা অবস্থায় টিউশনি করানো বা কোচিংয়ে পড়ানো যেতে পারে। নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্র পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইগুলো পড়ে ফেলা উচিত। বাংলা ও ইংরেজি ফ্রিহ্যান্ড রাইটিংয়ে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গণিতে দুর্বলতা থাকলে অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে।

জাগো নিউজ: প্রিলি শেষ করার পর বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?
মো. মুহিবুর রহমান: বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস অনেক বড়। আবার যারা ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং ও গণিতে খুব ভালো তাদের জন্য এত বড়ও না। তাই আগে নিজের শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করে একটু একটু করে এগোতে হবে। আগে থেকে ভালো ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং, গণিত ইত্যাদি বিষয়ে মৌলিক কিছু দক্ষতা থাকলে প্রিলির পর লিখিত প্রস্তুতি শুরু করলেও সমস্যা নেই। তবে এগুলোয় দুর্বল থাকলে অবশ্যই তা প্রিলির আগেই কাটিয়ে উঠতে হবে। অন্যথায় প্রিলি পাস করেও তেমন কোনো লাভ হবে না।

জাগো নিউজ: বিসিএস ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হতে হয়?
মো. মুহিবুর রহমান: ভাইবায় একজন প্রার্থীর যোগাযোগ দক্ষতা, চাপ নেওয়ার ক্ষমতা, সাবলীল আচরণ ইত্যাদি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। তাই এসব বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। নিয়মিত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলে বলে নিজের অঙ্গভঙ্গি ও কথা বলার ধরন ঠিক করে নিতে হবে। কয়েকজন বন্ধু মিলেও প্রস্তুতি নেওয়া যায়। নিজের এলাকা, নিজের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধ, সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ইত্যাদিতে কখনোই ভুল করা যাবে না। এসব বিষয়ে খুব ভালো প্রস্তুতি থাকতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত মক ভাইবা দিতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. মুহিবুর রহমান: বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সেটা কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চাই। পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতি নিতে সাহায্য হয় এমন কিছু লেখার ইচ্ছা আছে।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।