বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই বিসিএস ক্যাডার মুন্নী
সেলিনা আক্তার মুন্নী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জের চন্ডিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নুরুজ্জামান সরকার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, মা মোছা. সাজনা বেগম গৃহিণী। ২০০৫ সালে চন্ডিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০০৭ সালে ডি ডব্লিউ ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন। বর্তমানে ৩৮তম বিসিএসের (শিক্ষা) মাধ্যমে ঝিনাইদহের মহেশপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে কর্মরত।
সম্প্রতি তিনি বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. ইসরাফিল হোসাইন—
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছেন কখন থেকে?
সেলিনা আক্তার মুন্নী: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই মূলত আমি বিসিএসের স্বপ্ন দেখি। সিনিয়র ভাইয়া ও আপুরা যখন বিসিএস পরীক্ষা দিতেন; তখন খুব উৎসাহী ছিলাম—প্রশ্ন কেমন হলো, কে কে প্রিলি পাস করলেন এসব নিয়ে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই নিয়মিত সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজি চর্চা করতাম।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
সেলিনা আক্তার মুন্নী: আমার কাছে মনে হয়, বিসিএস শুধু যে একটা পরীক্ষা তা নয়, এটি মূলত প্রচুর ধৈর্য, কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের ফল। আমি বিসিএসের জন্য পড়াশোনা শুরু করি মূলত অনার্স তৃতীয় বর্ষ থেকে। তখন আমি ইংরেজি ভোকাব্যুলারি, গণিত ও বিজ্ঞান বই কয়েকবার শেষ করি। আমি প্রথমে বেশ আনন্দ নিয়ে ও জানার আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। কারণ তখন তো কোনো চাকরির পরীক্ষার চাপ ছিল না। আমার প্রথম বিসিএস ছিল ৩৬তম। যখন সার্কুলার হয়; ততদিনে প্রতিটি বিষয় আমার বেশ আয়ত্তে চলে আসে। তখন আমি একটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে শুধু পরীক্ষাগুলো দিতাম নিজেকে জাস্টিফাই করার জন্য। ৩৬তম বিসিএসে প্রথম প্রিলি পাস করি। তখন আমি ৪-৫টি টিউশনি করতাম। টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরে আবার নিজের পড়াশোনা শুরু করতাম। আমার কখনোই ক্লান্ত লাগতো না।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
সেলিনা আক্তার মুন্নী: বিসিএস নিয়ে আমার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া যে, আমি বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। এখানেই নিজেকে সার্থক বলে মনে করি। তবে হ্যাঁ, আমার পরিবার প্রথমে অনেক সাহস দিলেও পরে এসে অনেক মানসিক চাপ দিতো। আমার এ সফলতায় যার কথা না বললেই নয়, তিনি আমার দুঃসময়ের সাথী ও ভালো বন্ধু। বর্তমানে আমার স্বামী। তিনি পাশে না থাকলে মনে হয় আমি এতদূর আসতে পারতাম কি না জানি না। এ সময় তিনি আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন।
জাগো নিউজ: নতুনরা কীভাবে প্রিলির প্রস্তুতি নেবেন?
সেলিনা আক্তার মুন্নী: নতুনদের জন্য পরামর্শ থাকবে, প্রথমে বিসিএস প্রিলির সিলেবাসটা বুঝে যে কোনো একটি সিরিজের বই আয়ত্ত করতে হবে। শুধু প্রচলিত গাইড বই ফলো করলে হবে না। বেসিক কিছু বই আছে, সেখান থেকে আনকমন বিষয়গুলো নোট করতে হবে। বিগত সালের প্রশ্ন ভালোভাবে সলভ করতে হবে, যাতে কমন বিষয়গুলো ভুল না হয়। রুটিন অনুসারে পরিকল্পনা মাফিক পড়াশোনা করতে হবে। প্রিলির বেজটা স্ট্রং হলে পরে রিটেন ও ভাইবার জন্য অনেক সহায়ক হবে। এ ক্ষেত্রে গ্রুপ স্ট্যাডিটা অনেক কাজে লাগতে পারে।
জাগো নিউজ: প্রিলি পাস করার পর রিটেনের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত?
সেলিনা আক্তার মুন্নী: আমরা জানি, যে কোনো ক্যাডার পদ নির্ভর করে রিটেন ও ভাইবার নাম্বারের ওপর। তাই রিটেনের মার্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে ভালো মার্ক পেতে হলে অনেক কৌশলী হতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তথ্যবহুল ভাবে। তথ্য, উপাত্ত, ছক, চার্ট, মানচিত্র ও তথ্যসূত্র ব্যবহার করতে হবে। বিভিন্ন উক্তি, কোটেশনগুলোয় কালার পেন ব্যবহার করতে হবে। এককথায় বলা যায়, মানসম্মত লেখা হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো কোচিং অথবা বন্ধু-বান্ধব মিলে গ্রুপ করে পড়লে বেশ ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করি।
জাগো নিউজ: ভাইবা প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন?
সেলিনা আক্তার মুন্নী: ভাইবা মানে হচ্ছে সুন্দর ও সাবলীলভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা। প্রস্তুতিটা বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও নেওয়া দরকার। কারণ অনেক সময় প্রশ্ন ইংরেজিতে শুরু করে। নিজের নাম, জেলা ও সাবজেক্ট সম্পর্কে জানতে হবে। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, দেশের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, আন্তর্জাতিক অবস্থা, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
জাগো নিউজ: শিক্ষক হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সেলিনা আক্তার মুন্নী: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে—দেশ ও জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে নিজেকে একজন মানবিক মানুষ রূপে গড়ে তোলা।
এমআইএইচ/এসইউ/এএসএম