বিজেএস পরীক্ষায় জ্যোতির সফলতার গল্প

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৬ পিএম, ০৮ মে ২০২২

১৪তম বিজেএসে (বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস) তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন ইসরাত জাহান জ্যোতি। কুড়িগ্রাম জেলার ঘোষপাড়ায় যার বেড়ে ওঠা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। প্রথম বিজেএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন জ্যোতি। সম্প্রতি তার সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোছা. জেলি খাতুন

জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার বেড়ে ওঠার গল্প জানতে চাই—
ইসরাত জাহান জ্যোতি: আমার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম। জেলা সদরেই বড় হয়েছি। বাবা ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই শান্তশিষ্ট, ঘরকুনো আর স্বল্পভাষী ছিলাম। এ জন্য শৈশবের স্মৃতি বলতে যা বোঝায়, তা তেমন একটা নেই। ২০১২ সাথে কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সাথে কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি।

জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: না পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা তেমন একটা ছিল না। মা-বাবার সাপোর্ট সব সময় ছিল। কিন্তু পারিপার্শ্বিক দিক থেকে একজন মেয়ে হিসেবে কিছু প্রতিবন্ধকতা তো অবশ্যই ছিল।

জাগো নিউজ: বিজেএসের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কবে থেকে?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: ছাত্রজীবনে চাকরির জন্য কোনো প্রস্তুতি নেইনি। আইন বিষয়ে আমি কখনোই ফাঁকি দিয়ে পড়িনি। মূল আইন বুঝে বুঝে পড়ার অভ্যাস ছাত্রজীবনেই ছিল। এ কারণে প্রস্তুতি নিতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। সার্কুলারের পর করোনার কারণে পরীক্ষা বেশ বিলম্বে হয়েছে। আমি যা পড়েছি, ওই সময়েই পড়েছি।

জাগো নিউজ: বিজেএসের জন্য পড়াশোনার রুটিন কেমন ছিল?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: গৎবাঁধা রুটিন ধরে পড়াশোনা করিনি। যখন ভালো লেগেছে পড়েছি। তবে যতটুকু পড়েছি, মন দিয়ে পড়েছি।

জাগো নিউজ: বিজেএস পরীক্ষায় যারা নতুন, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: মূল আইন বুঝে বুঝে পড়তে হবে। আইনের সাথে সাথে জেনারেল সাবজেক্টেও ফোকাস রাখা উচিত। বিগত সালের প্রশ্নগুলো একবার হলেও দেখা উচিত। এতে প্রশ্ন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। আর আর্টসের স্টুডেন্টদের মধ্যে গণিত ভীতি কাজ করে। আমারও ছিল। অনেক প্র্যাকটিস করলে এই উইকনেস কাটানো সম্ভব।

জাগো নিউজ: নতুনদের পড়াশোনার বিষয়ে কী কী এড়িয়ে যাওয়া উচিত?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: শুধু প্রচলিত গাইড বইয়ের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। এগুলো যে পড়া যাবে না, তা নয়। কিন্তু শুধু এগুলোর উপর নির্ভর করে প্রস্তুতি নেওয়াটা পরিহার করতে হবে। লিখিত পরীক্ষাগুলো টানা চলতে থাকে। একটি পরীক্ষা দিয়ে এসে উত্তর মেলানো যাবে না। এতে শুধু মানসিক চাপই বাড়ে আর পরের পরীক্ষা খারাপ হয়।

জাগো নিউজ: বিজেএস যাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়া কি কোনোভাবে কাজে এসেছিল?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: জব রিলেটেড যে গ্রুপগুলো আছে, সেখানকার কিছু পোস্ট থেকে হেল্প পেয়েছি। সবচেয়ে উপকৃত হয়েছি ভাইবার সময়। যাদের আগে ভাইবা ছিল তারা এসে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন। এটা কাজে দিয়েছে। উপকার একটু হলেও পেয়েছি এটা যেমন সত্য; তেমন সময়ও নষ্ট করে। দুই মিনিটের জন্য ফেসবুকে এসে দুই ঘণ্টা পার হয়ে যায় অনেক সময়।

জাগো নিউজ: লিখিত পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: প্রিলির পর রিটেনের জন্য সময় পাওয়া যায় সর্বোচ্চ দেড় মাস। এখানে কৌশলী হওয়া দরকার। প্রিলিতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাছাইয়ে সুযোগ কম, এখানে তা নয়। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বাছাই করে পড়লেই মোটামুটি কাভার হয়ে যায়।

জাগো নিউজ: ভাইবার প্রস্তুতি সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই—
ইসরাত জাহান জ্যোতি: লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দেওয়ার পর আমি ভাইবার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। ভাইবা গাইডগুলো কিনে ধারণা নেওয়া শুরু করলাম, কী ধরনের প্রশ্ন করা হয়। তাতে মনে হলো, বেসিক ক্লিয়ার থাকলে আর মনে সাহস থাকলে হয়তো ভাইভা উতরানো সম্ভব। প্রিলির পড়াগুলোই আরেকবার রিভাইস করে নিয়েছিলাম ভাইভার আগে।

জাগো নিউজ: বিজেএসের স্বপ্নযাত্রায় কার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়ে যেন জজ হয়। তাদের ইচ্ছাটাই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।

জাগো নিউজ: আপনার বিজেএস স্বপ্নপূরণের অনুভূতি কেমন?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: আমার তখন মাস্টার্স চলছিল আগের সার্কুলার যখন হলো। মনে হয়েছিল একই সাথে দুটো চাপ নিতে পারবো না। তাই আবেদন পর্যন্ত করিনি। আর প্রথম প্রচেষ্টায় স্বপ্নপূরণের অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো সম্ভব নয়।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: আমার দায়িত্বটা ঠিকমতো পালন করতে চাই। আর কখনো যদি সুযোগ হয় কিছু জেন্ডার সেনসেটিভ ইস্যু আছে, যা একজন পুরুষের পক্ষে হয়তো ভালোভাবে বোঝা সম্ভব নয়; সেগুলোকে আড্রেস করতে চাই।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।