ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো সবুজের

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০২:৪০ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২১

মো. সাইফুল ইসলাম সবুজ চাঁদপুর সদর উপজেলার লালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সাইজ উদ্দিন গাজী একজন ব্যবসায়ী, মা নূরজাহান বেগম গৃহিণী। তিনি ২০০৮ সালে লালপুর বালুধূম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১০ হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

বর্তমানে তিনি রূপালী ব্যাংকের ‘অফিসার (জেনারেল)’ পদে চাঁদপুরের কচুয়া শাখায় কর্মরত। সম্প্রতি তার ব্যাংকে চাকরি, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—
সাইফুল ইসলাম সবুজ: আমার শৈশব আর ১০টা ছেলের মতোই কেটেছে। আমার গ্রামটি মেঘনা নদীর তীরবর্তী ছিল। অজপাড়া বা প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাম বললেই চলে। ছোটবেলায় খেলাধুলা করতাম বেশি। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে ক্রিকেট খেলতাম। পাশাপাশি রুটিন মাফিক পড়াশোনাও করতাম। এসএসসি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত খুব প্রাণবন্ত সময় কাটিয়েছি। এখন সেই সময়গুলো মিস করি। বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েদের কাছে আমাদের সময়টা অকল্পনীয়। বর্তমান প্রজন্ম ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমার শৈশবে কোনো বাধা ছিল না। শুধু খেলাধুলা ও পড়াশোনার মধ্যে সময় কাটিয়েছি।

ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো সবুজের

জাগো নিউজ: আপনার জীবনে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কিনা?
সাইফুল ইসলাম সবুজ: প্রতিবন্ধকতা কিছুটা ছিল। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পরিবার থেকে আর্থিক সাপোর্ট পেয়েছি। তারপর জগন্নাথে ভর্তি হয়ে ঢাকায় চলে আসি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল না থাকায় মেসে থাকতে হয়েছে। প্রথমে অনেক সংগ্রাম করে চলতে হয়েছে। কারণ ঢাকায় থাকা ও খাওয়ার জন্য বেশ টাকার প্রয়োজন ছিল। প্রথম একবছর কষ্টে পার করেছি। কারণ তখন পরিচিতি ছিল না। তাই টিউশনি পেতে বেগ পেতে হয়েছে। ঢাকায় থাকা-খাওয়া ও পড়াশোনার খরচের জন্য দৈনিক ৩-৪টি টিউশনি করেছি। ঢাকায় আসার পর পরিবার থেকে টাকা নেইনি। ভার্সিটির সেশন ফি থেকে শুরু করে সব নিজে বহন করেছি।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
সাইফুল ইসলাম সবুজ: ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন ছোট থেকেই দেখেছিলাম। আমার বড় মামা একজন ব্যাংকার ছিলেন। তিনি জনতা ব্যাংকে জব করতেন। আমি যখন মামার বাসায় যেতাম; তখন মামা মামাতো ভাইদের বিভিন্ন বই পড়াতেন এবং বিভিন্ন বিষয় লিখতে দিতেন। আমি তখন ফাইভ-সিক্সে ছিলাম। মামা ব্যাংকার হওয়ায় দেখতাম অনেকে মামাকে সম্মান করতেন এবং মামার কথা শুনতেন। তাই বলা যায়, মামাকে দেখেই প্রথম ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন দেখি।

ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো সবুজের

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
সাইফুল ইসলাম সবুজ: আমি প্রথম মাস্টার্সের পর জবের প্রিপারেশন শুরু করি। তার আগে ডিপার্টমেন্টের রেজাল্ট ভালো করার চেষ্টা করেছি। ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতি মূলত বিসিএস, প্রাইমারি বা অন্য চাকরি থেকে ভিন্ন। ব্যাংকে চাকরির জন্য ম্যাথ ও ইংরেজি অনুবাদ ভালো জানতে হয়। আমি প্রথমে ব্যাংক জবের বিগত বছরের প্রশ্নগুলোর সমাধান করেছি। বোঝার চেষ্টা করেছি ব্যাংকে কোন ধরনের প্রশ্ন আসে। তখন প্রচুর ম্যাথ করেছি। দিনের পর দিন ম্যাথে সময় দিয়েছি। পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদ প্র্যাক্টিস করেছি। ইংরেজির জন্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় পাতা ফলো করেছি। ইংরেজি পত্রিকা পড়ার ফলে ট্রান্সলেশনটা আয়ত্তে চলে আসে। পত্রিকায় নতুন শব্দ পেলে খাতায় নোট করে রাখতাম। পত্রিকায় যে শদ্বগুলো ব্যবহার করা হয়, ব্যাংক জবের ট্রান্সলেশনে মূলত এগুলো ব্যবহৃত হয়। ফোকাস রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে রচনা লেখার জন্য ইংরেজি সম্পাদকীয় পাতাগুলো খুবই সহযোগিতা করেছে। ব্যাংকে চাকরির ক্ষেত্রে ম্যাথ ও ইংরেজি অনুবাদে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। তাছাড়া ব্যাংকে লিখিত পরীক্ষায় লেটার লেখার প্রশ্ন আসে। লেটার লেখার ক্ষেত্রে কার বরাবর লিখতে হবে এবং ফরমেটগুলো ভালোভাবে লিখতে হয়। সব ধরনের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। এরমধ্যে দুটি বেসরকারি ব্যাংকে জব হয়েছিল। কিন্তু সরকারি জবের জন্য এগুলোয় যোগদান করিনি। পরিশ্রম ও ধৈর্য রেখে পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। অনেক সময় লেগেছে। এ নিয়োগের প্রিলি ২০১৯ সালের নভেম্বর এবং রিটেন পরীক্ষা ডিসেম্বরে হয়েছিল। তারপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভাইবা হয়। ফেব্রুয়ারিতে রেজাল্ট চলে আসে। আমাদের নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মার্চে। কিন্তু করোনার কারণে তখন হয়নি। তারপর ২০২১ সালের মার্চের ১ তারিখ জয়েন করি।

জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
সাইফুল ইসলাম সবুজ: আমার মামা অনুপ্রেরণার জায়গায় ছিলেন। তিনি সব সময় মানসিকভাবে সাপোর্ট দিতেন। ধৈর্য রেখে লেগে থাকার জন্য বলতেন। তাছাড়া পরিবারেরও বিশ্বাস ছিল, আমি একটি ভালো জায়গায় যাবো। তারা সব সময় আমার জন্য দোয়া করতেন।

ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো সবুজের

জাগো নিউজ: নতুন যারা ব্যাংক চাকরিতে আসতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
সাইফুল ইসলাম সবুজ: যারা ব্যাংক জবে আসতে চান, তাদের আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যাংক জবের মূল হলো ম্যাথ ও ইংরেজি অনুবাদ। এ দুটি বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নতুনরা বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখে ধারণা নিতে পারেন। ব্যাংকের ম্যাথ অন্য চাকরির পরীক্ষার চেয়ে তুলনামূলক কঠিন। এর জন্য ম্যাথে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। দৈনিন্দন ম্যাথ চর্চা করতে হবে। ইংরেজির ক্ষেত্রে ভোকাব্যুলারি, সিনোনিম-অ্যান্টোনিম ও অনুবাদ চর্চা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংক জব সংশ্লিষ্ট কিছু বই ফলো করতে পারেন। বাংলার জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বইটি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় শেষের দিকে ম্যাথ অংশটি দাগাতে হবে। ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার মূল হাতিয়ার হচ্ছে রিটেন। রিটেনের ক্ষেত্রে টাইম ম্যানেজমেন্ট করে ২ ঘণ্টায় ২০০ নম্বরের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি ম্যাথ অংশটি ভালোভাবে দিতে হবে। ধৈর্য রেখে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে।

জাগো নিউজ: ভাইভার প্রস্তুতি কেমন হতে হবে?
সাইফুল ইসলাম সবুজ: ভাইবার ক্ষেত্রে অনার্সের নিজ বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও যে ব্যাংকের ভাইবা হবে, সে ব্যাংক সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। পাশাপাশি চলতি বা সাম্প্রতিক বিষয় ও নিজ জেলা সম্পর্কে জানতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাকরির গ্রুপগুলো থেকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সহযোগিতা নিতে পারেন। তবে ব্যাংক জবের ক্ষেত্রে ভাইবার থেকে রিটেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রিটেনে যে এগিয়ে থাকবে, তার চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সাইফুল ইসলাম সবুজ: বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি অন্য ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে জব করার ইচ্ছে আছে। তাছাড়া চাকরির পাশাপাশি সমাজসেবামূলক সংগঠন ও কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবো।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।