২৪টি চাকরির ভাইভা থেকে বাদ পড়েও বিসিএস ক্যাডার!
লালটু সরকার ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত। তার বাবা মৃত তারাপদ সরকার, মা সুলতা সরকার। ১৯৯২ সালে সাতক্ষীরায় তার জন্ম। তিনি তালা বি দে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, তালা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার—
ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
লালটু সরকার: ছোটবেলা খুব ভালো কেটেছে। নিয়ম মেনে স্কুলে যাওয়া, প্রতিদিন বিকেলে বন্ধুদের সাথে খেলা করা। আবার সন্ধ্যা হলে বই পড়া। ছোটবেলা থেকেই একটি নিয়মের মধ্যে কেটেছে।
পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
লালটু সরকার: আমার পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা ছিল। ২০০৬ সালে আমার বাবা যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান; তখন আমার পরিবারের উপার্জন করার মতো কেউ ছিল না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর পড়াশোনা করবো না। কিন্তু আমার মা বলেন আমাকে পড়ালেখা করতে। আর সেই সময় আমার পাশে দাঁড়ান আমার স্কুলের শিক্ষক জিন্নাত স্যার। তিনি বলেন, আমার দ্বারা ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে। তাই পড়াশোনা না ছাড়তে। তারপর স্কুল থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করার পর কলেজের স্যাররাও অনেক সাহায্য করেছেন। তাই পড়ালেখায় প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সবার সহযোগিতায় আজ আমি এ পর্যন্ত।
বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
লালটু সরকার: বিসিএস কি সেটা ছোট সময় বুঝতাম না। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর মেসের বড় ভাইদের কাছ থেকে বিসিএস সম্পর্কে জানতে পারি। জানলাম বিসিএসে পাস করলে না কি প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পাওয়া যায়। সেই থেকে মূলত বিসিএসের স্বপ্ন।
বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
লালটু সরকার: মূলত আমার স্বপ্ন ছিল ব্যাংকার হওয়া। ব্যাংকার হওয়ার জন্য সেই ভাবেই পড়ালেখা শুরু করি। পাশাপাশি অন্য সরকারি চাকরির পরীক্ষাও দিতে থাকি। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হই। ৩৬তম বিসিএসে প্রিলি ফেল করার পর সিদ্ধান্ত নেই এবার বিসিএসের জন্য পড়তে হবে। আমার স্ত্রী বলে, তুমি বিসিএসের জন্য পড়লে নিশ্চিত ক্যাডার হবে। তখন থেকেই মূলত বিসিএসের যাত্রা শুরু। আর আজ সাফল্য।
কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?
লালটু সরকার: আমার বিসিএসের অনুপ্রেরণা হলো আমার স্ত্রী রিমা পাল। আমি প্রায় ২৪টি সরকারি চাকরির ভাইভা থেকে বাদ পড়ি। একসময় মনে হচ্ছিল, আমার দ্বারা কিছু হবে না। কিন্তু আমার স্ত্রী সব সময় আমাকে বলতো, তোমার দ্বারা ক্যাডার হওয়া সম্ভব। আমি হাল ছাড়লেও সে কিন্তু হাল ছাড়েনি। আর একজনের কথা বিশেষ করে বলতে হয়। তিনি হলেন আমার বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সিদ্ধার্থ শংকর জোয়ার্দ্দার স্যার। আমি যখন স্যারে সাথে দেখা করেছি বা কথা বলেছি, স্যার সব সময় বলতেন, ‘লালটু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তুমি ক্যাডার হবেই।’ তিনি বারবার আমাকে সাহস জুগিয়েছেন।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
লালটু সরকার: আমি লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো বই লেখা। বিশেষ করে টেক্সট বই। আর একটি স্বপ্ন আছে, তা হলো এতিম অসহায় বাচ্চাদের জন্য কিছু একটা করা।
সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?
লালটু সরকার: সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে, তা আমাদের সবার জানা। বর্তমানে আমি একটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত আছি। তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার একদিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছি। অনলাইনে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছি। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছি।
এসইউ/এএ/জেআইএম