করোনা: চাকরির বাজার স্থিতিশীল রাখার উপায়

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০২০

নিয়াজ আহমেদ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে ‘বিশ্ব মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ৬ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এ সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে মারা গেছে ১৩ জন। করোনার কারণে সারাদেশে সাধারণ ছুটি (লকডাউন) চলছে। এর একটি বিরূপ প্রভাব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়বে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বেতন দেওয়ার সময় অনেক প্রতিষ্ঠানকে হিমশিম খেতে হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাটাই শুরু হয়ে গেছে।

কিন্তু সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমরা হয়তো একটি সাময়িক ক্রাইসিসের মধ্যে পড়েছি। এটি আমাদের একার ইস্যু নয়। এটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা সবাই মিলে এ সমস্যার সমাধান করতে পারব ইনশাআল্লাহ। তাই এখনই সময় মানবিক হওয়ার। যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারা বছর তাদের মেধা, শ্রম দিয়ে আপানাদের ব্যবসাকে উন্নতির পথে নিয়ে গেছে; এখন এ বিপর্যয়ের সময় তাদের যদি চাকরিচ্যুত হতে হয়, তাহলে তারা পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হবে। তাই ব্যবসার পাশাপাশি মালিকদের কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে।

in.jpg

দেশের প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তিনি সংবাদ সম্মেলনে করোনা পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, কোনো কর্মীকেই যেন ছাটাই করা না হয়। এ বিপর্যয়কালে মালিক এবং কর্মী- উভয় পক্ষকেই মানবিক হতে হবে। চাকরিচ্যুত না করে এ আপদকালীন সময়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে। যাতে উভয় পক্ষই লাভবান পর্যায় থাকতে পারে-

১. প্রথমত মালিক, ম্যানেজমেন্ট, স্টাফ- সব পক্ষকে একসাথে বসে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী আপদকালীন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। অভ্যন্তরীণ পলিটিক্স বাদ দিয়ে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।

২. অপ্রয়োজনীয় অপারেশনাল খরচ এবং বিলাসি খরচ কমিয়ে আনতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানে ফ্রি লাঞ্চ বা রিফ্রেশমেন্ট দেওয়া হয়, সেটি টাকার বিনিময়ে দেওয়া যেতে পারে। নিজেরা অফিসে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৩. সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে আপদকালীন সময়ের জন্য বেতন পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। কর্মকর্তাদের স্যালারি ২-১ ধাপ নিচে নামানো যেতে পারে। কোম্পানিতে যাদের বেতন ৬ ডিজিটের তাদের বেতনের ২০ শতাংশ, যাদের বেতন ৫০ হাজারের উপর তাদেরও ১০ শতাংশ নিম্ন আয়ের কর্মীদের মাঝে ভাগ করে ছাটাই ঠেকানো যেতে পারে।

৪. ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য দৈনিক অফিস সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে (ওভার টাইম ব্যতিত), সাপ্তাহিক ছুটি সমন্বয় করা যেতে পারে। সপ্তাহে দু’দিনের জায়গায় একদিন অথবা মাসে ৪দিনের পরিবর্তে দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন সরকারি ছুটি বাতিল করা যেতে পারে।

in.jpg

৫. অপরিহার্য ট্রেনিং ব্যতিত অন্যান্য ট্রেনিং কার্যক্রম অনলাইনে শিফট করে আনা যেতে পারে। এমনকি বিদেশ সফর সীমিত করা যেতে পারে। কেবল খুব বেশি প্রয়োজনে ইকোনমি ট্যুর হতে পারে।

৬. অফিসের কিছু কাজ কমিয়ে পরিসর ছোট করে আনা যেতে পারে। কোনো কোনো কাজের ইমপ্যাক্ট কম চিহ্নিত করতে হবে। সেলস প্রসেস অটোমেট করা সবচেয়ে জরুরি, সেই সাথে ট্রেনিংগুলোকে অনলাইনে ট্রান্সফার করা যেতে পারে।

৭. পাঁচ তারকা হোটেলে রাত যাপনের বিলাসিতা এড়িয়ে চলা যেতে পারে। বিভিন্ন কনফারেন্সের নামে যে লাখ লাখ টাকা লগ্নি হয়, সেগুলো অনলাইনে হতে পারে। একজন প্রধানমন্ত্রী যদি অনলাইন কনফারেন্স করে দেশ চালাতে পারেন, তাহলে কোম্পানি কেন পারবে না?

৮. পিকনিক, ইফতার পার্টি, অদরকারি ইভেন্টগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত করা যেতে পারে। সাময়িক সময়ের জন্য ওভার টাইম এবং সেলস ইন্সেন্টিভ স্থগিত রাখা যেতে পারে। প্রতিটি বিভাগের, প্রতিটি মানুষের কাজের আউটপুটের ওপর ভিত্তি করে প্রোডাক্টিভিটি পরিমাপ করা যেতে পারে।

৯. এমপ্লয়ি এনগেজমেন্ট এবং এমপ্লয়ার ব্র্যান্ডিং রিলেটেড কার্যক্রম স্থগিত করা যেতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, এ পরিস্থিতি সাময়িক। এতে এমপ্লয়ার এবং এমপ্লয়ি উভয় পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় খুব শিগগিরই ঘুরে দাড়াতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।

১৫. তবুও যদি কোনো কোম্পানি আসলেই অপারগ হয়ে ওঠে। তবুও বলবো, কর্মীকে ছেড়ে যাওয়ার মতো সময় দিন, নোটিশ দিন। তাকে তার মতো গুছিয়ে নিতে দিন। এমনকি তার সম্পূর্ণ দেনা-পাওনা পরিশোধ করে দিন।

সর্বোপরি, সবাই যদি একটু ছাড় দেওয়ার মানসিকতা ও মিলেমিশে কাজ করার মানসিকতা পোষণ করি, তাহলে হয়তো কাউকে বেকার হতে হবে না। মনে রাখবেন, আপনার চারপাশের মানুষ যদি ভালো না থাকে, তাহলে আপনিও ভালো থাকবেন না।

লেখক: প্রধান নির্বাহী পরিচালক, কর্পোরেট আস্ক।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।