প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই বিসিএস ক্যাডার হন ইশরাত

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩০ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২০

সুলতানা ইশরাত জাহান একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। বাবা কাইজার আলম, মা হোসনেআরা। তার স্বামীর নাম সাইদ নাসিরুল্লাহ। তিনি ১৯৮৭ সালের ০৮ আগস্ট খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে বহু অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে কেটেছে ছেলেবেলা। কলারোয়া গার্লস পাইলট হাই স্কুল থেকে এসএসসি, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে অনার্স এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক হেলথে মাস্টার্স করেছেন। তিনি বতর্মানে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত। সম্প্রতি তার স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদ হাসান-

কেমন কেটেছে শৈশব ও কৈশোর?
সুলতানা ইশরাত জাহান: বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কেটেছে দুরন্ত শৈশব আর কৈশোর। সবার শৈশবের মতো আমার ছেলেবেলাও কেটেছে নির্মল আনন্দের মাঝে। আমার ছেলেবেলা ছিল অসম্ভব সুন্দর ও আনন্দময়। উচ্ছল ও দুরন্ত স্বভাবের কারণে এলাকায় সুনাম (!) ছিল যথেষ্ট। তবে মায়ের কারণে সেই সুনাম বেশিদিন টেকেনি। আব্বু ও আম্মু পড়াশোনার ব্যাপারে প্রেসারও কোনদিন দেননি, আবার খুব ছাড়ও দেননি। তবে খুব রুটিন মেনে জীবনে চলতে হয়েছে। সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা সবকিছুই খুব নিয়মমাফিক ছিল। পড়ার সময় পড়া এবং খেলার সময় খেলা বা টিভি দেখা নিয়মের মধ্যেই কেটেছে অদম্য শৈশব। মফস্বল শহরে ও প্রকৃতির সান্নিধ্য আর গ্রামীণ জীবনের আশ্চর্য সরলতায় বেড়ে উঠেছি। ফলে আমি পেয়েছি চমৎকার একটি শৈশব।

israt-in-(4)

নারী হিসেবে পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
সুলতানা ইশরাত জাহান: আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে, পড়াশোনার ব্যাপারে অর্থনৈতিক বা পারিবারিক কোনরকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি কখনো। মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল মেয়েদের এমনভাবে মানুষ করবেন, যেন যোগ্যতায় কোনো অংশেই ছেলেদের থেকে কম না হয়। বাবা-মায়ের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল তাদের সন্তানের মানবিক গুণাবলি আর উচ্চশিক্ষার সমন্বয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। পড়াশোনার জন্য চমৎকার একটি পরিবেশ এবং সহযোগিতা সবসময় তাদের কাছ থেকে পেয়েছি।

israt-in-(3)

কেমন ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন?
সুলতানা ইশরাত জাহান: সত্যি বলতে কি, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি কখনো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়েছি; তখন একজন নন-মেডিকেল ব্যক্তি হিসেবে চান্স পাওয়াটাই অনেক দুঃসাধ্য ছিল। ইচ্ছা ছিল এমপিএইচ শেষ করে আইসিডিডিআরবিতে জয়েন করব। আমার স্বপ্ন ছিল একজন গবেষক হওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ যখন পেলাম; তখন বিসিএসের রেজাল্ট দিয়েছে। আসলে আমার মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগেই বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়। আর মাস্টার্সের থিসিস জমা দেওয়ার পর আইসিডিডিআরবি থেকে ডাক পাই।

israt-in-(5)

ক্যারিয়ার যাত্রার গল্প শুনতে চাই-
সুলতানা ইশরাত জাহান: বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে আমার কাছের বন্ধুরা। এমনকি আমার বিসিএস পরীক্ষার ফর্মও তারাই ফিল-আপ করে দেয়। অনার্স ফাইনালের পর বন্ধু-বান্ধবের দেখাদেখি বিসিএসের বই কিনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার পর একাডেমিক পড়াশোনা নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মাস্টার্স চলাকালীন তেমন কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ৩৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে টিকেও যাই। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হওয়ায় সব বিষয়েই বেসিক মোটামুটি ভালো ছিল। মাস্টার্স পরীক্ষার মধ্যেই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। মাস্টার্সের থিসিস পেপার জমা দেওয়ার দুই দিন পরেই ৩৩তম বিসিএসের রেজাল্ট বের হয় এবং প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই আল্লাহর অশেষ রহমতে ক্যাডার হয়ে যাই।

israt-in-(1)

কেন পুলিশ ক্যাডার বেছে নিয়েছিলেন এবং কাজের চ্যালেঞ্জগুলো শুনতে চাই-
সুলতানা ইশরাত জাহান: পেশা হিসেবে পুলিশকে বেছে নেওয়া অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। কারণ এখনো আমাদের সমাজব্যবস্থা মেয়েদের এ পর্যায়ে দেখতে অভ্যস্ত নয়। সারদার এক বছরের ট্রেনিং খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। কিন্তু এ ট্রেনিং ছাড়া পুলিশের মতো পেশায় আসা সম্ভব নয়। ট্রেনিং শেষ করে আসার পর মূল চ্যালেঞ্জ বুঝতে পারি। এমনও সময় গিয়েছে, আমি ইউনিফর্মে ডিউটি করার সময় অযথাই লোকজন জমা হয়ে যেত। কারণ তারা মেয়েদের ইউনিফর্মে দেখতে অভ্যস্ত নন। আবার কাজের ধরনটাও ভিন্ন। কর্মঘণ্টা নেই। যেকোনো সময় যেকোনো কাজের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট দু’টাই বোধ হয় পুলিশ পেশার প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় অনেক কাজ করতে হয়। এটি সিভিল সার্ভিসের অন্য চাকরির ক্ষেত্রে নেই। তাই অবশ্যই এ চাকরি অন্যান্য চাকরির তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমার সারাজীবনই ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে ছিল। ধরা-বাধা গতানুগতিক জীবন আমার ভালো লাগে না। সে ইচ্ছা থেকেই পুলিশে আসা।

israt-in-(4)

নারী হিসেবে পুলিশকে মূল্যায়ন করার সুযোগ আছে কি-না?
সুলতানা ইশরাত জাহান: একদমই না। কারণ সময়ের সাথে সাথে কিন্তু অপরাধের ধরনও পরিবর্তিত হচ্ছে। নারী অপরাধীর সংখ্যা নেহায়াতই কম না। উপরন্তু মাদক, চোরাচালান, সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে নারী অপরাধীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আবার অন্যদিকে নারী ও শিশুরা, যারা বিভিন্ন অন্যায় বা অপরাধের শিকার (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধন ২০০৩); তারা একজন নারীর সামনে বা কাছে যতটা সাবলীলভাবে তার অভিযোগ বলতে পারবে, তা কখনোই একজন পুরুষ অফিসারের সামনে বলতে পারবে না। তাই পুলিশে নারীদের কাজের সুযোগ অনেক বেশি এবং গতানুগতিক ধারার বাইরে।

প্রিয় বাংলাদেশ নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
সুলতানা ইশরাত জাহান: আমি প্রচণ্ড আশাবাদী মানুষ। দেশ নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। আমি সত্যিই আমার দেশকে অনন্য উচ্চতায় দেখতে চাই। ক্ষুধামুক্ত, দরিদ্রমুক্ত এক সমাজব্যবস্থা; যেখানে প্রতিটি নারী নির্ভয়ে পথ চলতে পারবে। যে দেশের মাটিতে আর কোনো নারী বা শিশু ধর্ষণের শিকার হবে না।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।