দীর্ঘ সময় বসে কাজ, ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়
পেশা যা-ই হোক না কেন, বসে বসে কাজ করতে হয় অনেককেই। ফলে শরীরে ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, মানসিক চাপ, হার্টের অসুখ, কোমরের সমস্যা দেখা দেয়। অফিসে বসে কাজ, একটানা ক্লাসে বসে বা দাঁড়িয়ে পড়ান, তাদেরও হতে পারে এমন সমস্যা। সময়মতো না খাওয়া, ভুল খাবার, যখন-তখন চা-কফি ডেকে আনে বিপদ।
তাই যারা একটানা ৬ ঘণ্টার বেশি এক জায়গায় বসে বসে কাজ করেন। কিংবা কাজের জায়গায় শারীরিক কসরত তেমন নেই। এমন কাজ করা মানুষকে কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে হয়। আসুন জেনে নেই এসব ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়-
সকালের খাবার: ভারি খাবার দিয়ে দিন শুরু করুন। লুচি-পরোটার বিলাসিতা সপ্তাহে একদিন। রুটি-সবজি যেমন ভালো নাস্তা, তেমন দই-ব্রেড, ভেজ স্যান্ডুইচ, স্যালাড, সেদ্ধ ডিম এসবও চলতে পারে। সঙ্গে অবশ্যই একটি ফল রাখুন। ফলের রস নয়। কোনভাবেই সকালের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। সকালের মধ্যে শরীরে গ্লুকোকটিকয়েড হরমোন সবচেয়ে বেশি নিঃসরণ হয়। এটি শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। এ সময় খেতে ভুলে গেলে বা এড়িয়ে গেলে, হরমোন রক্তে বাড়িয়ে তোলে শর্করা। এতে সময় বাঁচবে ঠিকই কিন্তু কমবে আয়ু।
কাজের মাঝে উঠুন: প্রতি চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর সিট থেকে উঠুন। এক ঘণ্টার বেশি বসে থাকা যাবে না। একবার সিঁড়ি ভাঙা বা লনে কয়েক পা হেঁটে নিন। তবে চেষ্টা করুন লিফট এড়াতে। উপরতলায় অফিস হলে কিছুটা লিফটে গিয়ে অন্তত তিন তলা হেঁটে যান। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিকল্প হিসেবে কোন শারীরিক কাজ করতে পারেন। সঙ্গে অবশ্যই চাকা লাগানো চেয়ার বাদ দিন। সম্ভব হলে কাঠের চেয়ারে বসুন। পা যেন মাটিতে ঠেকে। কাজের মাঝে ডেস্কে বসেই দুপুরের খাবার খাবেন না।
চা-কফি খেতে: বেল বাজালেই তো চা-কফি হাতের কাছে চলে আসে। কিন্তু সময় বাঁচানোর জন্য এমন ফাঁদে পা দেবেন না। ঘন ঘন চা-কফি খাবেন না। একান্তই যদি খেতে হয়, তাহলে চা খেতে একটু উঠুন। দরকার হলে চা খেতে বাইরে যান। কাজের তাড়া থাকলেও পাঁচ মিনিটে চা খেয়ে আসুন। এতে ওঠাও হবে, আবার ঘন ঘন বাইরে যাওয়ার চাপে চা-কফি কম খাওয়া হবে। তবে চেষ্টা করুন গ্রিন টি খেতে। এতে মেটাবলিজম বাড়বে।
ফাঁকে ফাঁকে কিছু খান: একবার খেয়েই পেট ভরবেন না। ডেস্কে চিনি ছাড়া বিস্কুট, আমন্ড, কাজুবাদাম, ফল রাখুন। দু’তিন ঘণ্টা পর কিছু খান। পারলে দুপুরের খাবারে ভাত বাদ দিন। হালকা খান। রুটি, মাছ, চিকেন, স্যালাড থাকুক। জোর দিন প্রোটিনে। যারা নিরামিষ পছন্দ করেন; তারা মসুর ডাল সেদ্ধ, রাজমা, সয়াবিন রাখুন। দুপুরের খাবার যেন সকালের নাস্তার চেয়েও হালকা হয়। পুষ্টিবিদের তালিকা মেনে কমবেশি চলার চেষ্টা করুন। ক্যালরি মেপে খেতে না পারলে ওবেসিটি বাড়বেই।
শরীরচর্চা: প্রতিদিন একটানা হাঁটতে হবে অন্তত ৩৫-৪০ মিনিট। যারা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে পারেন; তাদের ক্ষেত্রে হাঁটার সময় কমানো যায়। কিন্তু শরীরচর্চা করার সময় না পেলে হাঁটতেই হবে। কোলেস্টেরল, ওবেসিটি কমাতে ঘাম ঝরানোর কোন বিকল্প নেই। যদি সাইক্লিং বা সাঁতার কাটতে পারেন, তা-ও খুবই ভালো।
রাতের খাবার তাড়াতাড়ি: রাত আটটা-সাড়ে আটটার মধ্যে রাতের খাবার খান। বাকি সময় কাজ করুন। কিন্তু খাবার কিছুতেই সাড়ে আটটার পরে নয়। অনেকেই ভাবেন, তাড়াতাড়ি খেলে তো ক্ষুধা পাবে! নিয়ম মেনে দু’তিন ঘণ্টা পর পর খেলে ক্ষুধা পাবে না। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস চিনি ছাড়া দুধ খান। অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে ঠান্ডা দুধ খান। দুধ সহ্য না হলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
সময়মতো ঘুম: সারাদিনের ব্যস্ততার শেষে নিজের খেয়াল, সন্তানের পড়াশোনা, বাড়ির কাজ সামলে ঘুমাতে দেরি হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে যখনই ঘুমাতে যান অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা নিশ্ছিদ্র ঘুম দরকার। ঘুমের ঘাটতি হলে ওবেসিটি প্রতিরোধ করা যাবে না।
এসইউ/জেআইএম