শত বাধা থাকলেও থেমে যাননি লায়লা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৯

লায়লা নাজনীন শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কাজ শুরু করেছিলেন স্টার সিনেপ্লেক্সে। ১৫ বছর পেরিয়ে সেখানেই প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার অধীনে এখন স্টার সিনেপ্লেক্সের চারটি ব্রাঞ্চ। আজ জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—

প্রথমেই নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন—
লায়লা নাজনীন: বড় হয়েছি পুরান ঢাকার লালবাগে। বাবা একজন ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়ার কারণে এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে আত্মীয়-স্বজন বিয়ের জন্য উঠে পড়ে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ এবং জীবনে কিছু একটা করবো, পরিবার, দেশ ও দশের কাজে লাগবে—এ মনবল নিয়েই আজ এ পর্যন্ত এসেছি।

এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করার পর অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স কমপ্লিট করি। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট থেকে হিউম্যান রিসোর্সের উপর এক বছরের পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা করি। পরবর্তী সময়ে হিউম্যান রিসোর্সের উপর এমবিএ কমপ্লিট করি। পাশাপাশি আইবিএ এবং বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন থেকে বিভিন্ন কোর্স, ট্রেইনিং, ওয়ার্কশপের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে স্কিল ডেভেলপ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আপনার ক্যারিয়ার শুরুর গল্পটা বলুন—
লায়লা নাজনীন: এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে বিভিন্ন স্কুলে জব করি। স্টুডেন্ট ভালো হওয়ার কারণে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষিকারা ছুটিতে থাকার সময়ে তাদের জায়গায় প্রক্সি টিচার হিসেবে কাজ করতে ডাকতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কোচিংয়ে স্টুডেন্ট পড়াতাম।

laila-in-1

পার্মানেন্টলি ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০৪ সালে স্টার সিনেপ্লেক্সে কাজ করার মাধ্যমে। তখনো আমি স্টুডেন্ট হিসেবে কাজ করি। পাশাপাশি পড়াশোনা করি। এ জন্য স্টার সিনেপ্লেক্সের মালিক এবং কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

দীর্ঘ ১৫ বছর স্টার সিনেপ্লেক্সের সাথে আছি। প্রথমে একটি ব্রাঞ্চ ছিল পান্থপথে। এখন আরও ৩টি ব্রাঞ্চ—ধানমন্ডি, মহাখালী এবং মিরপুর মিলিয়ে ৪টি ব্রাঞ্চের হেড অব এইচআর হিসেবে কাজ করছি।

চাকরির পাশাপাশি এখন কী কী করছেন—
লায়লা নাজনীন: স্টার সিনেপ্লেক্সে জবের পাশাপাশি কর্পোরেট ট্রেইনার এবং বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে গেস্ট লেকচারার হিসেবে কাজ করছি। তাছাড়া ‘ক্যারিয়ার প্রো’ নামে প্রফেশনাল এবং নন প্রফেশনালদের জন্য একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু করছি। যা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে চালু করার কাজ প্রক্রিয়াধীন। যেখানে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ারের গাইডলাইন থেকে শুরু করে স্কিল ডেভেলপের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ন্যূনতম খরচে গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া বিভিন্ন ইভেন্ট ও প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করা ও প্রোগ্রামে উপস্থাপনা করে থাকি শখের বশে।

একজন নারী হিসেবে যে বাধাগুলো পার করে এসেছেন—
লায়লা নাজনীন: আমাদের দেশে পারিবারিকভাবে মেয়েদের মনে করা হয়, বিয়ে দিয়ে দিলে পরিবারের দায়িত্ব শেষ। এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেয়ে কর্মী কম নিয়োগ করা হয়। কারণ মেয়েদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল মনে করা হয়, যা মোটেও সঠিক নয়। একটা মেয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে যথেষ্ট স্ট্রং। তারা পরিবারের খেয়াল রাখার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে।

laila-in-2

নারী কোনো কাজ শুরু করতে চাইলে প্রথম বাধা আসে পরিবার ও সমাজ থেকে। এখনো অনেক পরিবার আছে, তারা চায় না তাদের মেয়ে ও স্ত্রী ঘরের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করুক। আমার বেলায় আরও জটিল ছিল ব্যাপারটা। কারণ আমরা যখন চাকরি শুরু করেছিলাম; তখন আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অশ্লীল ছবির কারণে বাংলা সিনেমা থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। আর সিনেমা হলের চাকরি অনেকেই ভালো চোখে দেখতেন না। কিন্তু আমার কিছু করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আমাকে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে। ঘরের ভেতর-বাইরে নানা বাধা সত্ত্বেও আমি থেমে থাকিনি কখনো।

পেশা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
লায়লা নাজনীন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে—সিনেপ্লেক্স ১০০টি ব্রাঞ্চ ওপেন করবে। সেখানে সক্রিয়ভাবে কাজ করার মাধ্যমে মানুষের কাছে বিনোদন পৌঁছে দেওয়া। ‘ক্যারিয়ার প্রো’র মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য যোগ্য করে তোলা। সবাই উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমি দেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে বেকারত্ব কমানোর কাজে আসতে চাই। কারণ সবাই দেশের বাইরে চলে গেলে দেশের উন্নয়নে কাজ করবে কারা? সে কারণে ক্যারিয়ার প্রো’র মাধ্যমে এমন কিছু করতে চাই, যা মানুষের কাজে আসবে।

তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
লায়লা নাজনীন: তরুণদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে—কোন কাজকে ছোট করে না দেখা। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ শুরু করা, সেটা যে কোন কাজ-ই হোক না কেন। আমাদের দেশে ময়লা পরিষ্কার করা, চা বিক্রি করাকে ছোট কাজ মনে করা হয়। যতদিন এ মানসিকতা থেকে বের হতে না পারব; ততদিন আমাদের সমাজ এবং দেশের উন্নতি সম্ভব নয়।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।