চাকরিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চান মুজাহিদ
ক্লার্ক এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডে মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন শেখ মুজাহিদ। বর্তমানে বহুজাতিক এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের সফল কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব তিনি। সম্প্রতি জাগো নিউজকে শুনিয়েছেন তার স্বপ্ন ও সফলতার গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন—
শেখ মুজাহিদ: আমি একজন মানবসম্পদ পেশাজীবী। বর্তমানে একটি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ অংশের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ প্রধান) হিসেবে কর্মরত আছি। এর আগে ৬ বছরের বেশি সময় আমি দুটি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। বিবিএ শেষ করেই চাকরিতে যোগ দেই। চাকরির পাশাপাশি এমবিএ, পিজিডি-এইচআরএম শেষ করি। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমপিএইচআরএমে অধ্যয়ন করছি। আমি অনেক পরিশ্রমী এবং আশাবাদী মানুষ। আমার দায়িত্ব ও কাজকে ভালোবাসি। প্রত্যেক মানুষকেই তার প্রাপ্য কৃতিত্ব এবং সম্মান দিতে প্রছন্দ করি।
আপনার কর্পোরেট জীবন কিভাবে শুরু হয়েছে?
শেখ মুজাহিদ: আমার চাকরি জীবন শুরু হয় স্নাতক শেষ করার সাথে সাথেই। বেতন, পজিশন, পরিবেশ—এসব নিয়ে তখন কোন চিন্তাই কিরিনি। শুধু মনে হয়েছে, আমার একটা জব দরকার। প্রথম প্রতিষ্ঠান থেকেই আমার কাজের প্রাথমিক এবং দরকারি অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জেনেছি। কেউ কাউকে কিছু শিখিয়ে দিতে পারে না, যদি আগ্রহ না থাকে। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সবসময় এটা-ওটা প্রশ্ন করতাম জানা এবং শেখার জন্য। আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেহেতু পাঠ্যপুস্তকনির্ভর। তাই আমরা জবে ঢুকেই সাধারণত কাজ শিখি। আমার সৌভাগ্য যে, আমি শুরু থেকে কিছু অসাধারণ লিডারের অধীনে কাজ করেছি। তাদের কাছ থেকে শিখেছি। আমি কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করি, কাজ শেখার আগ্রহ না থাকলে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়তে হয়। আর এগুলো না থাকলে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সময়ে জব মার্কেটে টিকতে পারবেন না।
নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলুন—
শেখ মুজাহিদ: আমার ১১ বছরের কর্মজীবনে ৩টি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ প্রধান হিসেবে সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আস্থার প্রতিদান দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, কর্পোরেট দুনিয়া কোন সহজ জায়গা নয়। এটি পরিবর্তনশীল, রাজনীতিনির্ভর এবং অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের জায়গা। যেখানে ভালো-মন্দ মিলেই সবকিছু। এটি মেনে নিয়ে এবং মানিয়ে নিয়েই কাজ করে যেতে হবে। নিজেকে এগিয়ে না রাখলে এখানে টিকতে পারবেন না। অন্যরা আপনার জায়গা ঠিকই ধরে নেবে।
এইচআর বা মানবসম্পদ বিভাগে আসার গল্প শুনতে চাই—
শেখ মুজাহিদ: আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তো আর চাকরিনির্ভর নয়। আমরা আগে পড়ার জন্য পড়ি এবং পরে জব খুঁজি। কিন্তু হওয়ার কথা তার উল্টো। আমার স্নাতক শেষ হওয়ার ৩-৪ মাস আগে থেকেই আমি অনেক প্রতিষ্ঠানে পরিচিত বা সরাসরি মাধ্যমে সিভি জমা দিয়ে রেখেছিলাম। ৩ মাস পরে একটি কল পাই ইন্টারভিউয়ের জন্য এবং সেখানেই এইচআরে চাকরিটা পাই। যেহেতু চাকরি দরকার ছিল, তাই পজিশন বা বেতন নিয়ে চিন্তা করিনি।
চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
শেখ মুজাহিদ: আমি প্রায় প্রতিদিন গড়ে ৪-৫টি কল পাই নতুনদের কাছ থেকে। আমার কাছে মনে হয়, বর্তমান প্রজন্ম অতিমাত্রায় অস্থির। তারা শুরু থেকে ভালো জব, ভালো পজিশন, ভালো পরিবেশ চান। কিন্তু যখন প্রশ্ন করা হয়, তার জন্য কী করেছেন; তখন কোন উত্তর থাকে না। আশা করা দোষের কিছু নয়। কিন্তু সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। অন্যদিকে নতুনরা ঘনঘন জব চেঞ্জ করে বেতন বাড়ানোর জন্য। যা তাদের ভবিষ্যৎ আরও খারাপ করে। অন্তত ৩ বছর চাকরিতে থাকা উচিত। নতুনদের জব চেঞ্জের হার বেশি বলে প্রতিষ্ঠান আর নতুন নিতে আগ্রহ বোধ করে না। তারপরও বলব, যেখানে ১টি পজিশনের জন্য ১ হাজার সিভি পড়ে; সেখানে সেই একজন কিভাবে হবেন এবং সেই যোগ্যতা কিভাবে রপ্ত করবেন, তা আপনার উপরই নির্ভর করে। ছেলে-মেয়েরা ইংরেজি ভালো লিখতে পারলে হয়তো ভালো বলতে পারে না বা উভয়ই পারে না ঠিকমতো। কম্পিউটার নলেজ থাকে না বললেই চলে। তাই কাজে নিলে শিখে নেব- এ মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষাধীন থাকা অবস্থায়ই প্রেজেন্টেশনের দিকে নজর দিতে হবে। ইংরেজি রপ্ত করতে হবে। লেটেস্ট টেকনোলজি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এসময় থেকেই নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। প্রথম দিনের পরিচয় থেকে জব চাওয়াটা পরিহার করতে হবে। শেষে বলব, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আগে বা পরে সবাই মোটামুটি একটি অবস্থানে চলে যায়।
এ পেশা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
শেখ মুজাহিদ: নিজেকে একজন সফল এবং সুউচ্চ মানবসম্পদ পেশাজীবী হিসেবে দেখতে চাই। যেখানেই থাকি না কেন; সেখানে নিজের মেধা, শ্রম দিয়ে বিশেষ অবদান রাখতে চাই। আমি প্রতিদিনই শিখি এবং ভবিষ্যতেও শেখার আগ্রহ নিয়ে জীবন চালিয়ে যেতে চাই।
এসইউ/জেআইএম