২৮ বছর বয়সেই সফল উদ্যোক্তা মুন্না

রিফাত কান্তি সেন
রিফাত কান্তি সেন রিফাত কান্তি সেন , লেখক
প্রকাশিত: ০২:১৭ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

তরুণরা দেশের সম্পদ। তবে অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণ চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে গিয়ে বেকারের খাতায় নাম লেখান। তারা সম্পদে রূপান্তর না হয়ে দেশের বোঝা হয়ে যান। এমন সংকটে ২৮ বছর বয়সেই সফল হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী মো. মনসুর আলম মুন্না। তিনি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হেক্সাগন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি চাকরির পেছনে না ছুটে এখন অন্যকেই চাকরি দিচ্ছেন।

যেভাবে শুরু: জন্মের ছয় মাস পর বাবার চাকরির সুবাদে কক্সবাজারের উখিয়ায় স্থানান্তর এবং বেড়ে ওঠা। উখিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি ও বাল্যকালের পুরোটা সময় কাটান। ২০০৩ সালের শেষের দিকে পিতৃভূমি চাঁদপুরে ফিরে আসেন। ভর্তি হন ফরক্কাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২০০৭ সালে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন ঢাকার একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। মাধ্যমিকে পড়ার সময় সৃজনশীল কিছু করার তাড়না অনুভব করেন। উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হিসেবে কিছু করার ধারণা মাথায় জেঁকে বসে। মাধ্যমিক পরীক্ষার বিরতিতে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজগ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন পোল্ট্রি ফার্ম, তবে সেটা বেশি দিন না করে ঢাকায় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন।

 

jagonews

অনুকূল পরিবেশ: মুন্না যখন ব্যবসায় নামেন; তখন পার্শ্ব-পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। বাবা-মা দু’জনেই চাকরিজীবী। তাদের পরিবারের কেউ আগে ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন না। অনভিজ্ঞতা ও নানা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে যখন ধুঁকছিলেন; তখন অনেকেই চারপাশ থেকে কটূবাক্য তীরের মতো ছুঁড়তে থাকেন। তাদের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ব্যবসার বিকল্প কিছুই চিন্তা করতে পারলেন না। ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে স্বপ্ন পূরণে ব্যবসাই বেছে নিলেন।

উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা: নিজেকে তৈরি করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন। ২০১৪ সালে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার তাকে একটি চ্যালেঞ্জিং প্রজেক্টের দায়িত্ব দেন। সে সময় তিনি বলেন, ‘এ প্রজেক্ট করতে গেলে লোকসান হবে এবং সে লোকসানের টাকা উনি দিয়ে দেবেন।’ তখন তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে লোকবল সংগ্রহ করে নিজ দায়িত্বে কঠোর তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত তারিখের আগেই সম্পন্ন করেন। তিনি লোকসানি প্রজেক্টকে কিছুদিনের ব্যবধানে লাভজনক প্রজেক্টে রূপান্তর করেন। তখন থেকেই তিনি ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন।

 

 

jagonews

প্রতিবন্ধকতা জয়: কেউ যখন জিজ্ঞেস করতেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি কী করেন?’ তখন তিনি বলতেন, ‘ব্যবসা করি।’ তখন তারা ব্যাপারটা স্বাভাবিক বা পজিটিভভাবে না নিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে বলতেন, ‘এতকিছু না করে টিউশনি করলেই তো পারো।’ উদ্যোক্তা হতে উৎসাহ না দেওয়া এবং নানাভাবে হেয় করার এমন মানসিকতা অনেক সময় তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতো।

ভালো লাগা: বই পড়তে এবং লিখতে তার খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে সাহিত্য তাকে নেশার মতো টানে। যদিও উদ্যোক্তা হতে গিয়ে সাহিত্যে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাহিত্যে আরও মনোযোগী হতে।

 

jagonews

তরুণদের জন্য: বিশ্ব অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে উদ্যোক্তা তৈরির বিকল্প নেই। আগামীর বাংলাদেশ তরুণ উদ্যোক্তাদের ওপর নির্ভরশীল। তাই দেশ ও জাতির উন্নয়নে তার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। তিনি সব সময়ই আশাবাদী। তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাসী তিনি। বর্তমানে তার নানা প্রতিষ্ঠানে বেশ সংখ্যক প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও অসংখ্য শ্রমিক কাজ করছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন, ২০২৫ সাল নাগাদ তার কোম্পানিতে অসংখ্য প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, হাজার হাজার শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

 

jagonews

যা কিছু অর্জন: ‘বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক ও চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেব’ ২০১৭ সালে তার একটি উদ্যোগকে সেরা উদ্যোগ হিসেবে পুরস্কৃত করে।

মুন্নার বক্তব্য: তিনি বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে বেশকিছু প্রজেক্টের কাজ চলছে; সে প্রজেক্টগুলো প্রতিশ্রুতি অনুসারে হস্তান্তর করার জন্য কাজ করছি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট চলমান।’

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।