ইন্টারনেট থেকে আয় খুবই চ্যালেঞ্জিং : ফেরদৌস বাপ্পী

আরিফুল ইসলাম আরমান
আরিফুল ইসলাম আরমান আরিফুল ইসলাম আরমান
প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ফেরদৌস বাপ্পী নিজেকে একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে ভাবতে পছন্দ করেন। ছয় বছর ধরে এ কাজ নিয়েই আছেন। বর্তমানে দু’টি উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ও ইন্টারনেট মার্কেটিং নিয়েই কাজ। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আরিফুল ইসলাম আরমান-

জাগো জবস: কিভাবে এ উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হলেন?
ফেরদৌস বাপ্পী: আসলে বর্তমান যুগটাই তো ইন্টারনেটের যুগ। আর বর্তমানে উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বেশ সহজলভ্য হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে আরও হবে। একজন মার্কেটার হিসেবে তাই ইন্টারনেট মার্কেটিংকে বেছে নেওয়াটা খুব বেশি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল না। আর দিনে দিনে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এর ওপর নির্ভরশীলতাও বাড়ছে। কম্পিউটারের কাজগুলো মানুষ এখন তার মোবাইলেই সেরে নিতে চায়। তাদের এই সুবিধাটুকু করে দেওয়ার জন্যই মূলত মোবাইল অ্যাপ নিয়ে কাজ করা। বলতে পারেন, প্রয়োজনীয় কনটেন্টগুলো সহজে দেশ ও বিশ্বের মানুষের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছা থেকেই এ উদ্যোগ।

জাগো জবস: শুরুটা কিভাবে করলেন?
ফেরদৌস বাপ্পী: ইন্টারনেট মার্কেটার হিসেবে শুরুটা হয়েছিলো ২০১১ সালে, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপওয়ার্কের মতো সাইটগুলোতে। ক্লায়েন্টদের জন্য এসইও এবং অন্যান্য মার্কেটিং সেবা দিতে দিতে একটা সময়ে মনে হলো, যেহেতু আমি আমার দক্ষতা দিয়ে অন্যের প্রোডাক্টের প্রচারণা করছি এবং তাদের সন্তুষ্ট করতে পারছি, এটা তো আমি আমার নিজের প্রোডাক্টের ক্ষেত্রেও করতে পারি। আমার যেহেতু মার্কেটিংয়ে দক্ষতা আছে, সেহেতু ভালো প্রোডাক্ট বানাতে পারে এমন একটি টিম হলে তো অন্যের কাছ থেকে পেমেন্ট নেওয়ার চেয়ে নিজেই নিজের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে পারবো। পুরো লাভটাও আমাদেরই থাকলো। এটা মনে হওয়ার পরই আসলে কাছের কয়েকজন প্রোগ্রামার বন্ধুকে নিয়ে শুরু করে দিলাম।

bappy-in-(1)

জাগো জবস: কোনো প্রতিবন্ধকতা এসেছে কিনা?
ফেরদৌস বাপ্পী: প্রতিবন্ধকতা তো অনেকই ছিলো, তবে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিলো টিমের জন্য দক্ষ ও যোগ্য লোক খুঁজে তাদের টিমে জয়েন করানো। প্রযুক্তি তো প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে, এখানে কাজ করাটা তাই বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এর সাথে তাল মিলিয়ে নিজের দক্ষতা ধরে রাখা মানুষ খুব একটা পাওয়া যায় না। আর একদম নতুন হিসেবে যখন আমরা মার্কেটে আসি, অনেকেই আমাদের সাথে কাজ করার জন্য আস্থা পাচ্ছিল না। আর সামাজিক কিছু ব্যাপার তো ছিলোই। চাকরি বাদ দিয়ে ব্যবসা করা, তা-ও আবার অনলাইন ব্যবসা- পরিবার, প্রতিবেশী, এমনকি বন্ধুমহল থেকেও নানাভাবে আমাদের থামানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

জাগো জবস: কিভাবে এগিয়ে গেলেন?
ফেরদৌস বাপ্পী: আগেই বলেছি, প্রথম দিকে আমাদের ডিজিটাল প্রোডাক্ট তৈরির জন্য দক্ষ ও যোগ্য টিম মেম্বারই পাচ্ছিলাম না। পরবর্তীতে আমার পার্টনার তার নিজের ডিপার্টমেন্ট অর্থাৎ শাবিপ্রবি’র কম্পিউটার সায়েন্সের বেশকিছু ভালো ছেলেকে আমাদের টিমে নিয়ে আসে। সেইসঙ্গে অন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী কিছু প্রোগ্রামারও যুক্ত হন। প্রথম দিককার চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারার অন্যতম কারণ ছিলো এটি। প্রথম দিকে কিছু প্রোডাক্ট মার্কেটে আনার পর আনুষাঙ্গিক কিছু ব্যাপার যেমন প্রাইভেসি পলিসি ইত্যাদি নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল। আমরা ভেবে দেখলাম এগুলো নিয়েও মাথা খাটানো দরকার। পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করে কাজ চালিয়ে গেলাম। এখনও যাচ্ছি।

জাগো জবস: বর্তমান অবস্থা কী? সফলতা-ব্যর্থতা...
ফেরদৌস বাপ্পী: বর্তমান অবস্থার কথা বলতে গেলে এখন মোটামুটি একটা সন্তোষজনক অবস্থায় আছি। যে ধরনের টিম মেম্বর আমরা খুঁজছিলাম, পুরোপুরি না হলেও বেশকিছু ভালো মানুষ আমরা পেয়েছি। এটাকে একটি সাফল্য ধরতেই পারেন। সেইসঙ্গে আমাদের বেশকিছু অ্যাপ বেশ কয়েকবার দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপ আমেরিকার আন্তর্জাতিক টপ চার্টে উঠে এসেছে। আর ব্যর্থতার কথা বলতে গেলে, আমরা আসলে আমাদের সব পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন করে উঠতে পারিনি। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

bappy-in-(2)

জাগো জবস: প্রচারণার ক্ষেত্রে কী করছেন?
ফেরদৌস বাপ্পী: যেহেতু আমরা ইন্টারনেট ভিত্তিক কাজ করি, কাজেই ইন্টারনেট মার্কেটিংকেই আমরা প্রচারের মূল পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছি। এর বাইরেও আমাদের নিজেদের ডেভেলপ করা কিছু মার্কেটিং মেথড নিয়েও এগোচ্ছি। তবে ইন্টারনেট মার্কেটিংকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।

জাগো জবস: আগামীতে পরিকল্পনা কী?
ফেরদৌস বাপ্পী: আমার মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল প্রযুক্তি। একে কাজে লাগিয়ে আমরা এমন কিছু তৈরি করতে চাই, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে সহজ করবে, সেইসঙ্গে সময়ও বাঁচাবে। আমরা ইতোমধ্যেই মেশিন লার্নিং ভিত্তিক বেশকয়েকটি অ্যাপ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। ধরুন, আপনি একটি ফটো এডিট করলেন এবং অ্যাপটি আপনার এডিটিংয়ের ধরন বুঝে নিয়ে পরবর্তীতে নিজেই আপনাকে সাহায্য করলো। এতে আপনার কাজও যেমন সহজ হবে, সেইসঙ্গে অনেকটা সময়ও বাঁচবে। আগামীতে আমরা এ ধরনের প্রজেক্ট নিয়েই বেশি কাজ করতে চাই।

জাগো জবস: ভবিষ্যতে আপনার ও আপনার প্রতিষ্ঠানকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?
ফেরদৌস বাপ্পী: অল্প কথায় বলতে গেলে, আমরা এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই- যা বাংলাদেশের প্রযুক্তির বিপ্লবে বড় অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের প্রযুক্তির অগ্রগতিকে তুলে ধরবে।

bappy-in-(3)

জাগো জবস: যারা এ ব্যবসায় আসতে চান তাদের কী করা উচিত?
ফেরদৌস বাপ্পী: এই সেক্টরে সফল হতে হলে প্রথমেই যেটা লাগবে সেটা হলো চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা। প্রথম দিকে অনেক বাধা আসবে, ব্যর্থতা আসবে- কিন্তু শক্ত হাতে সেইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। তবে মানসিকতার পাশাপাশি দক্ষতাটাও জরুরি। প্রযুক্তির কোন না কোন বিষয়ে আপনার ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। হতে পারে সেটা প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং বা গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি। আর প্রযুক্তির গতির সাথে তাল রেখে নিজেকেও আপডেট রাখতে হবে। সবসময়ে শিখতে থাকতে হবে। আপডেট না থাকতে পারলে এখানে টিকে থাকা যাবে না। এসবের সাথে আপনাকে তুখোড় একজন টিম মেম্বর হতে হবে। টিম ওয়ার্কের কোনো বিকল্প নেই এ সেক্টরে। আপনার টিমের প্রতিটি মেম্বরের ভিশন এবং চাওয়া যেন এক জায়গায় থাকে- এটা নিশ্চিত করবেন।

এএ/এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।