চীনের ডিপসিকের বাজিমাত, মার্কিন প্রযুক্তিখাতের শেয়ারে ধস

চীনা কোম্পানির এআইভিত্তিক চ্যাটবট ডিপসিককে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে অপেক্ষাকৃত সস্তা ও দ্রুতগতির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এসব চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তিনি।
চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসে চীনা কোম্পানির এআইভিত্তিক চ্যাটবট ডিপসিক। শুরুতেই বাজিমাত করেছে তারা। এছাড়া অ্যাপল স্টোরে যেসব ফ্রি অ্যাপ রয়েছে তার মধ্যে ডিপসিকই সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হচ্ছে।
হঠাৎ করেই জনপ্রিয়তা পাওয়া অ্যাপটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এআই কোম্পানিগুলোর তুলনায় ডিপসিক তৈরিতে খরচ কম হয়েছে। এমন খবরে টালমাটাল হয়ে উঠেছে আর্থিক বাজার।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এআই অ্যাপগুলো তৈরিতে যে খরচ হয়েছ, তার চেয়ে অনেক কম খরচ হয়েছে ডিপসিক তৈরিতে। মার্কিন অ্যাপগুলোর তুলনায় কয়েকশো কোটি ডলার কম খরচ হয়েছে ডিপসিক তৈরি করতে। আর খরচের এই তারতম্যের কারণে এআইয়ের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ডিপসিকের অ্যাপ তৈরিতে কম খরচ হওয়ার বিষয়টি ২৭ জানুয়ারি পুঁজি বাজারের হিসেব বদলে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চিপ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান ও ডেটা সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে বড় অঙ্কের পরিবর্তন এসেছে।
চীনের স্বল্প খরচের ডিপসিকের কারণে নিউইয়র্কের পুঁজিবাজার ওয়ালস্ট্রিটে শেয়ারবাজারে ধস নেমে এসেছে। চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার শেয়ারমূল্য প্রায় ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলার কমেছে। অন্যান্য মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরও ছিল নিম্নমুখী।
বাজারে মূলধনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠান এতদিন এনভিডিয়া থাকলেও সোমবার তাদের বাজার মূল্য ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ২.৯ ট্রিলিয়ান ডলারে নেমে আসলে তারা মাইক্রোসফট ও অ্যাপলের পর তৃতীয় স্থানে নেমে আসে। ডিপসিক তাদের এআইএর জন্য এনভিডিয়ার তুলনায় অনেক কম দামী ও কম জটিল প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
ডিপসিকের সাম্প্রতিক সাফল্য বিশ্বের শীর্ষ এআই চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন এক বাস্তবতার সামনে ফেলেছে।
এতদিন একটা সাধারণ ধারণা ছিল যে এআইকে উন্নত করার জন্য বড় বাজেট এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি চিপ অবশ্য প্রয়োজনীয়। তবে ডিপসিকের সাম্প্রতিক সাফল্য এই ধারণাকে এবং ভবিষ্যতে এআইয়ের বাজারকে বদলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে চীনের এইআই শিল্পের উন্নতিকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বলে ট্রাম্প বলেন, যদি আপনারা এটা আরও কম খরচে করতে পারেন, যদি আপনারা অল্প খরচে তৈরি করে একই ধরনের ফলাফল আনতে পারেন তবে আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য বেশ ভালো।
এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, প্রযুক্তিক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই প্রধান খেলোয়ার হিসেবে অবস্থান করবে। ডিপসিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এর শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্টেন্টের জন্য যা চ্যাটজিপিটির মতই কাজ করে। ব্যবহারকারীর যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং দক্ষতার সঙ্গে জীবন উন্নত করবে এমন ভাবেই এটি তৈরি করা হয়েছে।
- আরও পড়ুন:
- বিচার বিভাগের একের পর এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প
- যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন বিরোধী অভিযান, একদিনে গ্রেফতার ৯৫৬
- আমরা গ্রিনল্যান্ড পেতে যাচ্ছি: ট্রাম্প
ডিজিটাল অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ করা সেন্সর টাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ডিপসিক যাত্রা করে। তবে তাদের জনপ্রিয় এআই অ্যাসিস্টেন্ট অ্যাপটি গত ১০ জানুয়ারির আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসেনি। ডিপসিকের নির্মাতা লিয়াং ওয়েনফেং। তিনি ডিপসিক নির্মাণ খরচের একাংশ হেজ ফান্ড থেকে সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি তাকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করতে দেখা গেছে।
টিটিএন