গ্রিনল্যান্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-অন্যান্যদের এত আগ্রহ কেন?

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রহের কমতি নেই। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেও ট্রাম্প একাধিকবার গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তিনি দাবি করেছেন যে, গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দারা আমেরিকার সঙ্গে থাকতে চায়।
স্থানীয় সময় শনিবার (২৫ জানুয়ারি) মার্কিন এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয়, আমরা এটা (গ্রিনল্যান্ড) পেতে যাচ্ছি। সেখানকার ৫৭ হাজার বাসিন্দা আমাদের সঙ্গে থাকতে চান। ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ পাবে বলেই তার বিশ্বাস।
গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ দ্বীপটিতে মার্কিন মহাকাশ প্রকল্পের বিশাল সব স্থাপনা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপটির অবস্থান উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম জলপথে। এই দ্বীপে গুরুত্বপূর্ণ খনির মজুত রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেনমার্কের কাছে থাকা স্বায়ত্তশাসিত এই দ্বীপ কিনতে পারলে, তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’। ডেনমার্ককে কেনার পেছনে ‘অর্থনৈতিক নিরাপত্তা’ও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
তবে গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের এমন আগ্রহকে ভালো ভাবে নিচ্ছে না ডেনমার্ক। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সে সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পরিষ্কার ভাবে বলেছেন যে, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।
তবে এবারই প্রথম নয়, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সোশ্যাল ট্রুথ সোশ্যালেও গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। ২০১৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়েও ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিলে সে সময় ডেনিশ নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান।
ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন যিনি গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই ধারণাটি প্রথম উত্থাপিত হয় ১৮৬০ এর দশকে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসনের সময়। মূলত বিপুল খনিজ সম্পদের ভাণ্ডারের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গ্রিনল্যান্ড। দেশটির বেশিরভাগ খনিজ সম্পদই এখনও উত্তোলন শুরু হয়নি।
গ্রিনল্যান্ডে সোনারখনি ছাড়াও তামা, নিকেল ও বিরল সব খনিজ উপাদান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদক গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তের একটি সোনার খনি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। আমারক মিনারেলস নামের
একটি খনি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী এলডুর ওলাফসনের সঙ্গেই সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় ওলাফসন জানান, সেখানে যে উঁচু পর্বতগুলো দেখা যাচ্ছে তা মূলত সোনারখনি।
আমারকের খনন লাইসেন্সের আওতা ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে বেশি। ২০১৫ সালে নালুনাক পাহাড়ে তারা সোনারখনি কিনে নেন। এর আগের এক দশকে খনিটি থেকে সোনা উত্তোলন করা হলেও সোনার দাম পড়ে যাওয়া ও খনির পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ায় এটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
চলতি বছর থেকে খনিটি লাভজনক হবে বলে আশাবাদী ওলাফসন। আকরিক থেকে সোনার বার বানাতে নতুন একটি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র বানানো হয়েছে, যার কারণে উৎপাদনও বাড়বে। ওলাফসন আশা প্রকাশ করেছেন যে, প্রতি মাসেই তারা এখান থেকে স্যুটকেসভর্তি করে সোনা অথবা জাহাজে করে আকরিক পাথর নিয়ে যেতে পারবেন।
ওলাফসন বলেন, সম্ভাবনার দিক থেকে গ্রিনল্যান্ড অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ এর বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদের বেশিরভাগই এখনও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ওলাফসন বলেন, আমরা এখানে তামা, নিকেল এবং বিরল মৃত্তিকার মতো ধাতুগুলো খুঁজছি। এগুলোর অবস্থান অজানা এবং তবে এগুলো একাধিক জায়গায় সঞ্চিত থাকতে পারে।
- আরও পড়ুন:
- আমরা গ্রিনল্যান্ড পেতে যাচ্ছি: ট্রাম্প
- ট্রাম্পের ‘গাজা খালি’ করার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান মিশর-জর্ডানের
- ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন ট্রাম্প
তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্বে আগামী কয়েক দশকে যত খনিজ দরকার গ্রিনল্যান্ড হতে পারে তার প্রধান সরবরাহকারী। এখন পর্যন্ত দ্বীপটির মাত্র দুটি খনি থেকে খনিজ উত্তোলিত হচ্ছে। এই দ্বীপে বিরল ভৌত উপাদানের অষ্টম বৃহত্তম রিজার্ভ রয়েছে।
এসব উপাদান মোবাইল ফোন, ব্যাটারি ও ইলেকট্রিক মোটর বানানোর কাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া বিপুল পরিমাণ লিথিয়াম ও কোবাল্টও রয়েছে। তবে এখানে নতুন করে তেল ও গ্যাসের সন্ধানে ড্রিলিং এবং গভীর সমুদ্রে খননকাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতসব গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের কারণে গ্রিনল্যান্ড অনেককেই আকৃষ্ট করছে। এই দ্বীপের প্রতি চীনেরও আগ্রহ আছে।
টিটিএন