যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও যোগসূত্র ছিল শেখ হাসিনার
যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের প্রচারণায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার কিছু সদস্য সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ। যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লেবার পার্টির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বিষয়টিও সামনে আনলো পত্রিকাটি।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) প্রকাশিত টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা কিয়ার স্টারমারকে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জেতাতে সক্রিয় ছিলেন। আর এই কাজ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার নেতাকর্মীরা। এমনকি, কিয়ার স্টারমারের জন্য তহবিল সংগ্রহের নৈশভোজেও যোগ দিয়েছিলেন তারা।
টেলিগ্রাফ বলেছে, শেখ হাসিনা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত বছর ক্ষমতা হারান। তার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর আক্রমণ, গ্রেফতার ও গুমের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তবে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখা এখনো সক্রিয়। অতীতে এই শাখার সদস্যরা টিউলিপ সিদ্দিকীর নির্বাচনী প্রচারণায়ও অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নিকে জেতাতে বেশ সক্রিয় ছিলেন তারা।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার অন্যতম প্রধান সংগঠক আব্দুল আহাদ চৌধুরী ও অন্যান্য সদস্য কিয়ার স্টারমারের হোলবর্ন এবং সেন্ট প্যানক্রাস নির্বাচনী এলাকার প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। প্রচারণার সময় তারা লেবার পার্টির লিফলেট বিতরণ করেন ও স্টারমারের নাম সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। একই দিন তারা টিউলিপ সিদ্দিকীর নির্বাচনী প্রচারণায়ও অংশ নেন।
প্রচারণায় অংশ নেওয়া অন্যান্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থকরাও ছিলেন। আব্দুল আহাদ চৌধুরী স্টারমারের জন্য একটি ফান্ডরেইজিং ডিনারেও উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানটি ২০১৬ সালে একটি কারি রেস্তোরাঁয় হয়েছিল।
এছাড়া ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় কিয়ার ইলফোর্ডে লেবার প্রার্থী স্যাম ট্যারির পক্ষে প্রচারণা চালাতে যান। ওই সময় আব্দুল শহীদ শেখ নামে একজনের সঙ্গে পোজ দেন। শহীদ নিজেকে আওয়ামী লীগের জনসংযোগে কাজ করছেন বলে বর্ণনা করতেন। এই লোক বর্তমানে উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেনারের সঙ্গেও দেখা করেছেন।
এছাড়া প্রতিবেদনটিতে আরও অনেক আওয়ামী লীগের নেতার নাম উঠে এসেছে। তাদের সঙ্গেও কিয়ার স্টারমারের ছবি রয়েছে। এই ব্যক্তিরাই টিউলিপের নির্বাচনী বিজয় নিশ্চিতে দিনরাত খেটেছেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কিয়ার স্টারমার অতীতে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন ও শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এই সাক্ষাতের জন্য কিয়ার স্টারমারও তদন্তের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে কিয়ার স্টারমার বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এই সফরটি ‘লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন আয়োজন করেছিল। সফরে এসে স্টারমার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে আবারও শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্টারমার। শেখ হাসিনার সঙ্গে লেবার পার্টির ঘনিষ্ঠতা ও ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে, এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য টেলিগ্রাফ লেবার পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, দলটি কোনো সাড়া দেয়নি।
এদিকে, টিউলিপ ইস্যুতে সরগরম যুক্তরাজ্যের ডাউনিং স্ট্রিট। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা করছেন। বিভিন্ন মহল থেকে টিউলিপের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। সেই টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নিপীড়নের আলোচনাও পৌঁছেছে ডাউনিং স্ট্রিটে।
আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্র ও সেই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে একাধিক সম্পত্তি ভোগ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। কারণ তিনিই বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ও দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব তারই।
কিন্তু বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরও কিয়ার টিউলিপেরে পাশেই দাঁড়িয়েছেন। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, তাদের মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্কের কথা। কিয়ারের তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বন্ধুর প্রতি আনুগত্যশীল। টিউলিপকে সেই পক্ষেরই একজন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এসএএইচ