অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের বাজার ক্রমেই বাড়ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
বিশ্বে অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের বাজার বাড়ছে/ এক্স থেকে নেওয়া ছবি

ক্রমেই বাড়ছে অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের বাজার। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাজার বিশ্লেষক সংস্থা ইউরোমনিটরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী এই বাজারের আকার ছিল প্রায় ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। গত বছর এই খাতে প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যেখানে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের ক্ষেত্রে এই হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ।

অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের চাহিদা শুধু জানুয়ারি মাসেই সীমাবদ্ধ নয়। স্বাস্থ্য সচেতন তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বছরজুড়ে অ্যালকোহল বর্জন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক বিশ্লেষক ও উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮-৩৪ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে অ্যালকোহল গ্রহণের হার গত দুই দশকে ৭২ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে নেমে গেছে। যারা অ্যালকোহল পান করেন, তারাও কম পরিমাণে পান করছেন।

আরও পড়ুন: 

এমন পরিস্থিতিতে, শীর্ষস্থানীয় অ্যালকোহল উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো অ্যালকোহলমুক্ত পণ্য উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘দিয়াজো’ দুই বছর সময় ব্যয় করে তাদের ক্যাপ্টেন মরগান স্পাইসড গোল্ড রামের অ্যালকোহলমুক্ত সংস্করণ তৈরি করেছে। এমনকি, বিখ্যাত ফরাসি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচ আরেক ফরাসি ব্র্যান্ড ফ্রেঞ্চ ব্লুমে বিনিয়োগ করেছে, যা অ্যালকোহলমুক্ত স্পার্কলিং ওয়াইন তৈরি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় উৎপাদন কোম্পানিগুলোর মূল বিক্রিতে তেমন প্রভাব ফেলছে না। তথ্য, উপাত্ত ও বাজার পরিমাপ সংস্থা নিলসেনের তথ্য অনুযায়ী, অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় কেনা ৯৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিকই অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ও ক্রয় করেন। আবার অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের কর কম হওয়ায় এগুলো থেকে অধিক মুনাফা লাভ করা যায়।

তবে, অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। বিয়ার শিল্প এই খাতে সবচেয়ে উন্নত এবং অ্যালকোহলমুক্ত বিকল্পের ৮৯ শতাংশ বাজার দখল করে আছে বিয়ার। ওয়াইন (মদ) ও স্পিরিটসের শেয়ার যথাক্রমে ৭ শতাংশ ও ৪ শতাংশ। জার্মানির ইথানলবিহীন পানীয়ের ব্র্যান্ড জেন্টল ওয়াইনের প্রতিষ্ঠাতা মরিটজ জাইরেভিৎসের মতে, বিয়ারশিল্প থেকে ২০ বছর পিছিয়ে রয়েছে ওয়াইন বা মদশিল্প।

তবে অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের বাজার সম্প্রসারণে নানা চ্যালেঞ্জও দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- পণ্যের উচ্চমূল্য। বেশিরভাগ মশলা ও ভেষজ উপাদানে তৈরি অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের একটি বোতলের দাম প্রায় ৪০ ডলার বা প্রায় ৪ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। ‘দ্য নিউ কনজিউমার’ ও ‘কোইফিশিয়েন্ট ক্যাপিটালের’ একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৩৮ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের দাম অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের তুলনায় ‘অনেক কম’ হওয়া উচিত।

আবার সামাজিক চাপও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। বিশ্বখ্যাত বিয়ার ব্র্যান্ড হেইনিকেন ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ একটি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৫ শতাংশ জানিয়েছেন, অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় বেছে নেওয়ার জন্য তাদেরকে অন্যদের দ্বারা সমালোচিত হতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: 

সবকিছুর পরও অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ব্র্যান্ডগুলো নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এবি ইনবেভের তৈরি অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার ‘করোনা সেরো’ গত বছর অলিম্পিক গেমসের অফিসিয়াল স্পন্সর ছিল। অন্যদিকে, হেইনিকেনের ‘০.০%’ স্পন্সর করছে ফর্মুলা ওয়ান। লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে লাকি সেইন্ট নামের একটি অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার ব্র্যান্ড তাদের নিজস্ব পাব চালু করেছে, যেখানে অ্যালকোহলযুক্ত ও অ্যালকোহলমুক্ত উভয় ধরনের পানীয় পরিবেশন করা হয়।

এছাড়া, অনেক সেলিব্রিটি তাদের নিজস্ব অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় ব্র্যান্ড চালু করেছেন। অভিনেত্রী ব্লেক লাইভলি, গায়িকা ক্যাটি পেরি ও ফর্মুলা ওয়ান তারকা লুইস হ্যামিলটন গত কয়েক বছরে অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ের ব্র্যান্ড চালু করেছেন।

তবে বিশ্বব্যাপী অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় বিক্রি এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ২০২৩ সালে এই বাজারের আকার ছিল ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের। অনেক দেশেই আয়বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অ্যালকোহল গ্রহণ বাবদ খরচও বাড়ছে। জানুয়ারি শেষে অনেকেই তাদের প্রিয় অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় দিয়ে উদযাপন করবেন। তবে, অ্যালকোহলমুক্ত বাজারের উত্থান বিশ্বজুড়ে নতুন এক সংস্কৃতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।