পশ্চিমবঙ্গে কি দুষ্প্রাপ্য হতে চলেছে খেজুরের গুড়?
পশ্চিমবঙ্গে শীতের মৌসুম এলেই নানা ধরনের পিঠেপুলি আর নলেন গুড়ের মোয়ার অনন্য স্বাদে মাতোয়ারা হয় ভোজনরসিক বাঙালি। আবার এই শীত এলে অনেকেই খোঁজেন খেজুরের সুস্বাদু রস, সঙ্গে খাঁটি ঝোলা গুড়। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় কতদিন রসের এই জোগান অটুট থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তার ওপর, এবার জ্বালানি সংকটের কারণেও খেজুর গাছের রস থেকে বিভিন্ন ধরনের ঝোলা গুড়, পাটালি ও সুস্বাদু নলেন গুড় তৈরির প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই খেজুর গাছ কাটার পর সেই গাছের পাতা, গাছের ছাল দিয়ে রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করে থাকেন গাছিরা। পশ্চিমবঙ্গে তাদের ‘শিউলি’ বলে থাকে। আবার অনেকে বলে ‘গাছিয়াল’। তবে রাজ্যে ‘শিউলি’ শব্দের প্রচলনটাই বেশি।
ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকায় আগে ছিল খেজুর গাছের রমরমা। কিন্তু সেই গাছের সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমে যাওয়ার ফলে পর্যাপ্ত পাতা বা ছাল মিলছে না। ফলে গুড় তৈরি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গাছিয়াল অর্থাৎ শিউলিদের।
আরও পড়ুন>>
- সীমান্ত বন্ধ হলে বড় ক্ষতি ভারতের, ঝুঁকিতে লাখো মানুষের জীবিকা
- ব্যবসায় মন্দা, বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা দিতে চান কলকাতার ব্যবসায়ীরা
- বেচাকেনায় ভাটা/ বাংলাদেশি পর্যটকের অভাব বুঝতে পারছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা
এই পরিস্থিতিতে খেজুর রস জ্বাল দিতে শিউলিদের ভরসা করতে হচ্ছে খড়, ধানের তুষ, অন্য সব গাছের কাঠের ওপর। যে কারণে খেজুরের গুড়ে ধোঁয়ার ঘ্রাণ থেকে যাচ্ছে। ফলে গুড়ের গুণগত মান কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
শীতে ঘরে-ঘরে তৈরি হয় পিঠেপুলি। আর সেই পিঠেপুলি খেজুর গুড়ে ডুবিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এই সময় বাজারে খেজুরের গুড়ের চাহিদাও বাড়ে। কিন্তু সরাসরি খেজুর রসের দাম যেমন শিউলিরা বাড়াতে পারেন না, তেমনি খাঁটি খেজুর গুড়ের ন্যায্য দাম রাখতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাদের।
গুড় ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গুড় বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ রুপি প্রতি কেজি। তবে জায়গাভেদে এর দামের হেরফের লক্ষ্য করা যায়।
বনগাঁর ঠাকুরনগরের এক ‘শিউলি’ নিরঞ্জন বিশ্বাস জানান, শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের রস পরিষ্কার হবে। ফলে গুড় খেতে সুস্বাদু হবে। তবে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে সঠিক জ্বালানির অভাব দেখা দিয়েছে। যার কারণে খেজুরের গুণগত মান অনেকটাই কমে এসেছে। কিন্তু পরিশ্রমের দাম আজকাল আর ওঠে না।
তিনি আরও বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পাশাপাশি খেজুরের গুড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়বেন।
শিউলি নিরঞ্জন বিশ্বাসদের আশা, ভবিষ্যতে খেজুর গাছ বেশি করে রোপণ করে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।
অর্থাৎ, চিন্তাটা থেকেই যাচ্ছে। মহার্ঘ না হয়েও কি দুষ্প্রাপ্য হওয়ার দিকে এগোচ্ছে শীতের ভোরে বাঙালির প্রিয় খেজুর গাছের ঠান্ডা সুস্বাদু রস।
ডিডি/কেএএ/