ফ্যাক্ট-চেক

রমেন রায়ের ওপর হামলার ঘটনা পুরোনো, তিনি চিন্ময়ের আইনজীবী নন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
রমেন রায়কে নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করেছে ভারতীয় মিডিয়া।

ইসকনের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি ছিল গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর)। এর আগের রাতে একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে লড়াই করায় হামলার শিকার হয়েছেন আইনজীবী রমেন রায়। তার বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয় এসব প্রতিবেদনে।

তবে বাংলাদেশি ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ফ্যাক্ট ওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অ্যাডভোকেট রমেন রায়ের আহত হওয়ার ঘটনাটি গত ২৫ নভেম্বরের, তিনি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী নন, তার বাড়িঘরে হামলার দাবিটিও সত্য নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ দাবিটি মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ, এবিপি লাইভ, দ্য ওয়াল, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে আদালতে লড়েন রমেন রায়। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) আবারও আদালতে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই রমেন রায়ের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে এবং তাকে নৃশংসভাবে মারধর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>>

প্রতিবেদনগুলোতে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইসকন কলকাতার মুখপাত্র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাসের গত ২ ডিসেম্বর রাতে করা একটি টুইটকে।

টুইটটিতেও দাবি করা হয়েছে, আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণের হয়ে মামলা লড়ার কারণে ইসলামপন্থিরা রমেন রায়ের বাড়ি ভাংচুর করে এবং তাকে নৃশংসভাবে আক্রমণ করে।

দাবির সত্যতা যাচাইয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টওয়াচ। তিনি বলেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী রমেন রায়ের ওপর হামলার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। এই নামে চট্টগ্রামে কোনো আইনজীবী নেই।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির তালিকা খুঁজেও এমন কোনো আইনজীবীর নাম পাওয়া যায়নি।

ফ্যাক্টওয়াচের হাতে থাকা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ওকালত নামা থেকে দেখা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসেবে তার মামলাটি লড়ছেন শুভাশিস শর্মা।

jagonews24

দাবিটি সম্পর্কে জানতে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টওয়াচ। তিনি বলেন, রমেন রায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী ছিলেন না। চিন্ময় কৃষ্ণ যেদিন গ্রেফতার হয়েছিলেন (২৫ নভেম্বর), সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রমেন রায়কে দূর্বৃত্তরা কুপিয়ে আহত করেছিল।

রমেন রায়ের সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটি তাকে দেখানো হয়। ছবি দেখে স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস নিশ্চিত করেন, এটি রমেন রায়েরই ছবি।

এছাড়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদনের শুনানিতে চিন্ময়ের কোনো আইনজীবী না থাকা নিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। বিবৃতিটিতেও জামিন শুনানি ঘিরে রমেন রায় নামে কোনো আইনজীবীর ওপর হামলার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাসের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে গত ২৫ নভেম্বর রমেন রায় নামে এক ব্যক্তি আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

জানা যায়, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শাহবাগে চলা অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রমেন রায় (৫০) নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। ২৫ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

আহত রমেন রায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলাম। পরে হঠাৎ বেশ কয়েকজন লোক লাঠি হাতে নিয়ে এসে আমাদের ওপরে হামলা চালায়। এ সময় আমি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হই। পরে কয়েকজন আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসেছে।

এসব তথ্যের সূত্রে রমেন রায়ের এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টওয়াচ। তিনি জানান, রমেন রায় পেশায় একজন আইনজীবী ও অ্যাডভোকেট। তিনি গত ২৫ নভেম্বর ঢাকায় হামলার শিকার হন এবং আহত হন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।

ওই নিকটাত্মীয় আরও জানান, রমেন রায়ের বাড়িঘরে হামলার দাবিটিও সঠিক নয়।

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ দাবিগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।