বিয়ে করতে না চাওয়া বা সম্পর্ক ভাঙা মানেই আত্মহত্যার প্ররোচনা নয়: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
উদ্দেশ্যপূর্ণ কাজ বা প্ররোচনার প্রমাণ না থাকলে শুধু বিয়েতে অস্বীকার করাকে ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ১৭ বছর আগের মামলায় দণ্ডিত এক ব্যক্তির সাজা বাতিল করে দেওয়া রায়ে এই পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি পঙ্কজ মিত্তাল ও উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আদালত বলেছেন, বিয়েতে অস্বীকৃতি বা দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া কষ্টদায়ক হলেও, তা মানুষের জীবনেরই অংশ। দুঃখজনকভাবে এমন ঘটনার পর অনেকেই কষ্টে বা হতাশায় আত্মহত্যা করেন ও এর জন্য আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তোলা হয়। কিন্তু অপরাধের স্পষ্ট প্রমাণ না থাকলে এমন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালে কামরুদ্দিন দস্তগীর সানাদি নামে কর্ণাটকের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেন ভুক্তভোগী এক নারীর মা। এফআইআরে বলা হয়, ২১ বছর বয়সী ওই নারীর সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির আট বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ‘প্রতিশ্রুতি দিয়ে’ বিয়ে না করায় ওই নারী ২০০৭ সালের আগস্টে আত্মহত্যা করেন।
তখন সানাদির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৩০৬ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) ও ৩৭৬ (ধর্ষণ) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। কর্ণাটকের বিচারিক আদালত আসামিকে সব অভিযোগ থেকে খালাসের রায় দেন। কিন্তু কর্ণাটক সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট সানাদিকে প্রতারণা ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে ২৫ হাজার রুপি অর্থদণ্ড দেন। হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সানাদি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।
ঘটনার প্রায় ১৭ বছর পর গত শুক্রবার আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় বাতিল করলেন। ১৭ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বলেন, অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর মধ্যে কোনো শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ ছিল না। ভুক্তভোগী নারীর আত্মহত্যার পেছনে অভিযুক্তের কোনো উদ্দেশ্যপূর্ণ কাজ বা প্ররোচনারও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিচারপতিরা বলেন, সম্পর্ক ভাঙা মানসিক কষ্টের কারণ হতে পারে। কিন্তু এটি অপরাধমূলক আচরণে প্ররোচনা দেয় না। আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য অভিযুক্তের অপরাধমূলক উদ্দেশ্য প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত, তাকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়, শুধু বিয়ে করতে অস্বীকার করা আত্মহত্যায় প্ররোচনা বলে বিবেচিত হতে পারে না।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ