গৌতম আদানিকে গ্রেফতারের দাবি রাহুল গান্ধীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৫১ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুস-জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনায় গৌতম আদানিকে গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলে রাহুল বলেন, আদানিকে সুরক্ষা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রে গৌতম আদানিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকার ঘুস দেওয়ার প্রস্তাব এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ ঘিরে শোরগোল শুরু হতেই বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন রাহুল গান্ধী।

গত বুধবার (২০ নভেম্বর) নিউইয়র্কের একটি আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, গৌতম আদানি ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের ঘুসকাণ্ডে জড়িত এবং বিষয়টি গোপন রেখে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে অর্থও সংগ্রহ করেছেন তিনি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আদানি এবং তার শীর্ষ কর্মকর্তারা ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুস দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে লাভজনক চুক্তি করেছেন। এই চুক্তিগুলো থেকে ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলারের বেশি মুনাফা অর্জনের আশা করা হয়েছে।

এছাড়া আদানি গ্রুপ ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ এবং বন্ডও সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে, তারা এই প্রক্রিয়ায় মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছে এবং ঘুসকাণ্ড সংক্রান্ত তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গৌতম আদানির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও আক্রমণ করেছেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, মোদী এবং আদানি দুজনেই দুর্নীতিগ্রস্ত। আজই আদানিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। কিন্তু আদানিকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর নেই। কারণ উনি নিজেই আদানির কথায় চলছেন। বিষয়টি নিয়ে সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলবে বলে জানান রাহুল গান্ধী।

আদানির বিরুদ্ধে ভারতকে ‘হাইজ্যাক করা’ এবং ১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করার অভিযোগও তুলেছেন রাহুল। এই প্রসঙ্গে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ আদানিকে রক্ষা করার অভিযোগ তুলে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির প্রধান মাধবী পুরী বুচকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তুলেছেন রায়বরেলীর এই সংসদ সদস্য। সম্প্রতি মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ অভিযোগ করে যে, আদানিরা বিদেশে যে টাকা সরিয়েছেন, তাতে অংশীদারি রয়েছে সেবি প্রধান মাধবী এবং তার স্বামী ধবল বুচের। তারপরেই এ বিষয়ে তদন্তের দাবি তোলে দেশের বিরোধী দলগুলো।

বৃহস্পতিবার রাহুল অভিযোগ করেন যে, আদানির টাকায় বিজেপি চলে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রচারে গিয়ে আদানি-বিজেপি আঁতাতের অভিযোগ তুলে রাহুল দাবি করেছিলেন, মুম্বাইয়ের বিমানবন্দরের পরে ধারাভি বস্তির জমিও আদানির হাতে তুলে দিতে চান মোদী। তা থেকে আদানির ১ লাখ কোটি টাকা আয় হবে বলে দাবি করেন রাহুল।

ভারতের সৌর প্রকল্পের জন্য ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ২২৩৭ কোটি টাকা ঘুসের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আদানির বিরুদ্ধে। মার্কিন অ্যাটর্নি ব্রিয়ন পিস বলেছেন, অভিযুক্তরা একটি জটিল ষড়যন্ত্র পরিচালনা করেছেন যাতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুস দিয়ে চুক্তি করতে এবং মার্কিন ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আর্থিক বাজারের সততা রক্ষার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। অভিযোগ করা হয়েছে, ঘুসকাণ্ড এগিয়ে নিতে গৌতম আদানি নিজেই একাধিকবার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

ধনকুবের আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, আদানি তার রাজনৈতিক সংযোগের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা আদায় করেছেন। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এমন সময়ে দায়ের করা হলো যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মার্কিন বিচার বিভাগে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কয়েক দিন আগে ট্রাম্পকে নির্বাচনী জয়ে অভিনন্দন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন আদানি। যুক্তরাষ্ট্রে মামলার বিষয়ে আদানি গ্রুপ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।