লাখ লাখ বাঙালি পাচ্ছেন ভারতের নাগরিকত্ব


প্রকাশিত: ০৪:৪৫ এএম, ২১ জুলাই ২০১৪

শেষ পর্যন্ত বিজেপির বিরুদ্ধে কার্ড খেলতে আসামের কংগ্রেসি রাজ্য সরকার সোনিয়া-রাহুলের আশীর্বাদ নিয়ে ধর্মীয় কার্ড খেলেছে বলে আসামের রাজনীতিতে জোর কথা উঠেছে। বিজেপির ধর্মীয় কার্ডের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ধর্মীয় কার্ড। এর ফলে আসাম সরকারের ভাষায়, প্রায় ৮৫ লাখ বাংলাভাষী বিদেশী, যাদের বেশির ভাগই হিন্দু তাদেরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে একটি সমঝোতা হলো।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট মতে অসম গণপরিষদ (অগপ) গতকাল আসামের গভর্নর জে.বি. পট্টনায়েকের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। এতে ধর্মের দোহাই দিয়ে কথিত অবৈধ বিদেশীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অগপ গতকাল এক বিবৃতিতে বিজেপি ও কংগ্রেসের ওই ঐকমত্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছে। তাদের সঙ্গে ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার আসাম অ্যাকর্ড নামে চুক্তি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চের আগে যারা আসামে ঢুকেছে তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে। কিন্তু এরপরে যারা আসামে ঢুকেছে তারা বিদেশী বলে চিহ্নিত হবে। কিন্তু ১৯৮৫ সালের পরে আসামের কংগ্রেসি রাজ্য সরকার ওই চুক্তি বহাল রেখেই এই প্রথমবারের মতো আগের অবস্থান থেকে সরে এলো। এখনও অবশ্য তারা বলছে, ওই চুক্তির শর্ত ঠিকই অছে। তারা কেবল উদ্বাস্তুদের মর্যাদা নির্ধারণ করছে।

আসাম সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ‘যারা ধর্মীয় নিপীড়নের মুখোমুখি হয়ে আসামে এসেছেন তারা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পরেও আসামে প্রবেশ করলে তাদেরকে আর বিদেশী বলে চিহ্নিত করা হবে না। তাদেরকে আর পুশব্যাকের ভয়ে দিন কাটাতে হবে না। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও অন্যান্য বিভাগে সমান অধিকার পাবেন। ভোটার হতে পারবেন।
অগপ প্রেসিডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) অতুল বোড়া গতকাল গুয়াহাটিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিজেপি-ও বিদেশী খেদাও আন্দোলনের সমর্থক ছিল। গত সাধারণ নির্বাচনের আগে তারা বিদেশী খেদাও কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু দলটি এখন উল্টো পথে হাঁটছে।

গতকাল আসাম গভর্নর অগপ প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি বিষয়টি শিগগিরই প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির কাছে তুলবেন। অগপ বলেছে- তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সর্বাত্মক গণ-আন্দোলন গড়ে তুলবেন। কারণ বিদেশীদের বিদেশী বলেই গণ্য করতে হবে। বিশেষ কোন ধর্মের পরিচয়ে তাদের মধ্যে বিভাজন আনা যাবে না।

টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রতিবেদন বলেছে, বিদেশীদের মধ্যে বৌদ্ধ, গারো, রাজবংশী, আদিবাসী উপজাতি এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী আছে। তাদের বেশির ভাগই আসামে বসতি গড়েছে। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কাছাকাছি হওয়ার কারণে তারা এটা করেছে। তবে পত্রিকাটি অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর দেয়া বিবৃতির  উল্লেখ করে বলেছে যে, ‘যদিও আসাম সরকারের সিদ্ধান্তে কোন বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, হিন্দুদের দিকে লক্ষ্য রেখেই তারা এটা করেছে।

এআইইউডিএফ মনে করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আসাম কংগ্রেস দেখেছে যে, বিজেপি ক্রমশ রাজ্যের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে শক্তি ও সমর্থন সঞ্চয় করছে। এখন তারা তাই আগ বাড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপিকে চেকমেট করতে চাইছে। সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম বলেছেন, এই ইস্যু ২০১১ সালে বরাক উপত্যকায় কংগ্রেসকে অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে ফায়দা দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তারা সরকারে যেতে পারলে বাঙালি হিন্দু যারা কথিতমতে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছিল, তাদেরকে তারা উদ্বাস্তু মর্যাদা দেবে। আর এখন যখন ওই হিন্দুরা গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির দিকে ঝুঁকলো তখন আবার তাদেরকে নিজেদের দিকে ফেরাতে কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে এই কার্ড খেললো। ‘‘আমরা এটা প্রাথমিকভাবে বিরোধিতা করি কারণ রাজ্যের নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপরন্তু এই সিদ্ধান্ত ১৯৮৫ সালে সম্পাদিত আসাম চুক্তিকে অপমান করেছে। কারণ ওই চুক্তিতে সাব্যস্ত রয়েছে যে, কে বিদেশী, কে নয়, সেটা ঠিক হবে ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চকে কাট আপ ডেট ধরে নিয়ে। তরুণ গগৈ অবশ্য ২০১২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে দেয়া এক  স্মারকলিপিতে বলেছিলেন, ‘‘যারা দেশভাগের সময় নাগরিক ছিলেন কিন্তু পরে নানা কারণে দেশান্তর হয়েছিলেন তারা মানবিক মর্যাদা ভোগের অধিকারী।’’

২৩শে এপ্রিল ২০১২ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আরও বলেছিলেন, ‘আমি যেটা বলছি সেটা মানবিক কারণে। আমি পঁচাশির চুক্তির মর্যাদা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলছি না। আর উদ্বাস্তুদের মর্যাদা দেয়া নিয়ে আসাম চুক্তিতে কোন বিধি-নিষেধ নেই। আসামের শক্তিশালী অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন আসাম সরকারের নেয়া এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, আপাতত ধর্মের ভিত্তিতে নেয়া  এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কেবল ধর্মীয় সংখ্যালঘুর মধ্যে সীমিত থাকবে না। 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।