ইরানে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করলেন সৌদি প্রিন্স
সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘গণহত্যার’ অভিযোগ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে প্রকাশ্যে এমন কঠোর প্রতিক্রিয়া জানালো সৌদি আরব। মুসলিম ও আরব নেতাদের এক সম্মেলনে তিনি লেবানন ও ইরানে ইসরায়েলের হামলার সমালোচনা করেছেন। খবর বিবিসির।
দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষণ প্রকাশ করে ইরানের মাটিতে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি অন্য নেতাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি ব্যর্থতা’। তিনি গাজায় তীব্র খাদ্য সংকটের জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছেন। প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রাথমিক পর্যায়ে সংঘাত ও ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই যুদ্ধের সূচনা হয়। এতে ১২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
এ ঘটনার পর ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করতে পাল্টা অভিযান শুরু করে। এখন পর্যন্ত তাদের অভিযানে গাজায় ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, হামলার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের চিহ্নিত করা গেছে তাদের ৭০ ভাগই নারী ও শিশু।
এবারের সম্মেলনে অংশ নেওয়া অন্য নেতারাও গাজায় জাতিসংঘ কর্মকর্তা ও স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলের ‘অবিরাম হামলার’ নিন্দা জানিয়েছেন।
গত মাসে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ইসরায়েল ও দখলীকৃত পূর্ব জেরুজালেমে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করে বিল পাশ হয়েছে। ইসরায়েলের অভিযোগ সংস্থাটি সেখানে হামাসের সঙ্গে মিলে কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশ গাজায় ত্রাণ সহায়তা সরবরাহ করার উদ্যোগ সীমিত করার জন্য এ ধরণের পদক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে এবারের এই সম্মেলন এমন সময় হলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউজে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা ট্রাম্পের ইসরায়েল ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে সচেতন। তবে তার সাথে এ অঞ্চলের নেতাদেরও ভালো সম্পর্ক আছে। তারা চান একটি চুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলের সংঘাত নিরসনে ট্রাম্প তার প্রভাব ব্যবহার করুন।
সৌদি আরবে জো বাইডেনের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেশি অনুকূল ভাবা হয়। যদিও তার মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তিনি অতীতে যা করেছেন তা নিয়ে মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গি আছে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি ইসরায়েলকে খুশি করলেও মুসলিম বিশ্বকে ক্ষুব্ধ করেছেন।
তিনি ২০২০ সালে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ করেছিলেন যার মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর সাথে ইসরায়েলের পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সুদানও এটি করতে সম্মত হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতাতেই তখন এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। এর মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর বাহরাইন ও আরব আমিরাত তৃতীয় ও চতুর্থ উপসাগরীয় দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
এবার ট্রাম্পের জয়ের পর সৌদি একটি সংবাদপত্রের শিরোনাম ছিল এমন- ‘একটি নতুন আশার যুগ। ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন এবং স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি’। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরের জন্য সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন ট্রাম্প।
নিজের জামাতা জেয়ার্ড কুশনারের মাধ্যমে তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
অন্যদিকে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি ইসরায়েলকে খুশি করেছেন এবং আরব বিশ্বকে হতাশ করেছেন।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জন্য ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে একটি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ ছিল পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিকে অনুমোদন দেওয়া। বেশিরভাগ দেশই মনে করে এসব বসতি অবৈধ।
তবে ট্রাম্প সবসময় ইরানের বিরুদ্ধে সোচ্চার। ২০১৮ সালে তিনি ইরানের সাথে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। ওই চুক্তিকে তিনি ‘ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
- আরও পড়ুন:
- হঠাৎ ইরান সফরে সৌদির সশস্ত্র বাহিনী প্রধান
- সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ইরানি প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ
- গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধ করতে হবে, ট্রাম্পকে ইরান
- মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও ছড়াতে পারে সংঘাত, ইরানের সতর্কতা
২০২০ সালে ইরানে রিভল্যুশনারি গার্ডের নেতা কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে ইরানকে ক্ষুব্ধ করেছেন। তবে উপসাগরীয় অনেক দেশ তাতে আবার খুশি হয়েছে। তবে এটাও সত্যি যে এখনকার মধ্যপ্রাচ্য সেই মধ্যপ্রাচ্য নয় যা তিনি প্রথম মেয়াদ শেষে হোয়াইট হাউজ ছাড়ার সময় রেখে গেছেন।
টিটিএন