যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আদ্যোপান্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৪
ছবি: এএফপি

বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণে সারাবিশ্বেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগ্রহের কমতি দেখা যায় না। আর তা যদি হয় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তা হলে তো কথাই নেই। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়।

আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প- কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? তা নিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা, মেলানো হচ্ছে নানান সমীকরণ।

এবারের প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানের পাশাপাশি ইউক্রেন ও গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা বৈশ্বিক বিষয়গুলোও গুরুত্ব পেতে দেখা যাচ্ছে।

বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটা ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিত হলেও এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি আইনসভার সদস্যদেরও বেছে নেবেন মার্কিন নাগরিকরা। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন নাগরিকদের বাইরেও সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নজর রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।

শেষ দিকের প্রচারণায় কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছেন। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এক সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় কমলা হ্যারিস বলেছেন, গাজা যুদ্ধ অবসানে তিনি তার ক্ষমতা অনুযায়ী সবকিছুই করবেন।

মিশিগানেই রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আরব আমেরিকান জনগোষ্ঠীর বাস। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার আরব-সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর ডিয়ারবর্নে সমাবেশ করেছেন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ও ইসরায়েলকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে থাকা ক্ষোভকে পুঁজি করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের কয়েকটি বক্তৃতা শুনে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, তিনি পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ায় যেসব কথা বলেছেন সে অবস্থানেই থাকতে চান। তিনি কয়েকমাস ধরে অর্থনীতি নিয়ে যেসব নীতির কথা বলেছেন সেগুলোরই পুনরাবৃত্তি করেছেন। ট্রাম্প ও হ্যারিসের একই বক্তব্য বারবার বলা, বিজ্ঞাপন ও দলীয় স্বেচ্ছাসেবীদের তৎপরতা, সুইং ভোটারদের জন্য কিছুটা ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে।

ভোটারদের মন জয় করার জন্য রাজনৈতিক কর্মীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে গেছেন। এসব কিছু অবশ্য এটাই প্রমাণ করে যে সেখানে কতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে।

‘সুইং স্টেট’ বা দোদুল্যমান রাজ্য কোনগুলো
বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যই প্রতিটা নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে একই দলকে ভোট দিয়ে আসে। আমেরিকার নির্বাচনে রিপাবলিকান দুর্গ বলে পরিচিত এই অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘রেড স্টেট’ বা ‘লাল রাজ্য’ আর ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য পাওয়া স্টেটগুলোকে বলা হয় ‘ব্লু স্টেট’ বা ‘নীল রাজ্য’।

ফলে এসব রাজ্য নিয়ে প্রার্থীদের খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না বা মনোযোগ দিতে হয় না। কিন্তু হাতে গোনা কিছু অঙ্গরাজ্য আছে যে রাজ্যগুলোর ভোট, প্রার্থীদের কারণে যে কোনো শিবিরে যেতে পারে। ফলে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু ‘সুইং স্টেট’এর দিকে নজর দেন যেখানে ভোট কোন পার্টির পক্ষে যাবে, তা নির্দিষ্ট করে বোঝা যায় না।

এগুলোই হল আমেরিকান নির্বাচনের ব্যাটলগ্রাউন্ড বা নির্বাচনী রণক্ষেত্র। এগুলোকেই অনেকে বলে থাকে ‘বেগুনি রাজ্য’। প্রার্থীদের কাছে এসব অঙ্গরাজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। যেগুলোকে বলা হয় ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বা নির্বাচনী রণক্ষেত্র।

আর এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় জয় পরাজয়ের মূল চাবিকাঠি। এই রাজ্যগুলোতেই হয় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যগুলো ২০১৬ সালে এভাবেই ‘ব্যাটল-গ্রাউন্ড স্টেট’ হয়ে উঠেছিল।

প্রত্যেক নির্বাচনের সময় দেখা গেছে যেসব রাজ্যের ভোট বেশি, প্রার্থীরা সেসব রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার পেছনে অনেক বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করে থাকেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের শেষ সময়ে দোদুল্যমান এই রাজ্যগুলো চষে বেড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিস। নির্বাচন নিয়ে করা জরিপগুলো দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে। শেষ দিকের প্রচারেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রচারে অভিবাসন বিরোধী বার্তাকেই সামনে রেখেছেন। অন্যদিকে কমলা হ্যারিসের প্রচারণা দল তার জয়ের বিষয়ে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। তারা এখন দোদুল্যমান রাজ্য বলে পরিচিতি অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন।

দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে জয়ের আশা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা সাতটি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যের ছয়টিতে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। শুক্রবার ভার্জিনিয়াতে সমাবেশ করে গেছেন ট্রাম্প। আগের দুই নির্বাচনে তিনি সেখানে বড় ব্যবধানে হেরেছেন। রোববার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভান্স নিউ হ্যাম্পশায়ারে গেছেন। জরিপ অবশ্য বলছে, কমলা হ্যারিস সেখানে কিছু পয়েন্টে এগিয়ে আছেন।

সর্বশেষ নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা জরিপ অনুযায়ী তুমুল লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি সুইং স্টেটে ব্যবধান খুবই সামান্য। আইওয়াতে নতুন জরিপে দেখা গেছে, কমলা হ্যারিস সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো করতে পারেন। যদিও ট্রাম্প আগের দুটি নির্বাচনে সেখানে জয়ী হয়েছিলেন।

এ বছরের নির্বাচনে সুইং স্টেট হিসাবে পরিচিত পাওয়া রাজ্যগুলোর মধ্যে আছে অ্যারিজোনা, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা ও নেভাদা।

যে বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় সে বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ নভেম্বর। এই নির্বাচনে যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, তিনিই ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে পরবর্তী চার বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকবেন।

ক্ষমতায় থাকাকালে নিজেই কিছু আইন পাস করানোর এখতিয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্টের রয়েছে। তবে আইন পাসের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার আইনসভার অন্য সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন হয়।

এর বাইরে বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা ও বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করে থাকেন।

প্রধান দল কোনগুলো?
অন্য অনেক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রে অনেক রাজনৈতিক দল নেই। দেশটিতে প্রধানত দুইটি দলই বেশি ভোট পেয়ে থাকে- ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং রিপাবলিকান পার্টি।

এর মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি মূলত আধুনিক উদারনীতিতে বিশ্বাসী। তারা নাগরিক অধিকার, বিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সংরক্ষণ নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যবস্থা এবং শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে কথা বলে থাকে।

অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টি আমেরিকান রক্ষণশীলতার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে থাকে। সেজন্য দলটি ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’ (জিওপি) নামেও বেশ পরিচিত। তারা সীমিত সরকারি নিয়ন্ত্রণ, কম কর হার, সরকারের আকার ছোট রাখা, মুক্তবাজার পুঁজিবাদ, বন্দুক বা আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার এবং অভিবাসন ও গর্ভপাতের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার পক্ষের দল। তবে প্রধান এই দুই দলের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য কিছু ছোট রাজনৈতিক দল রয়েছে।

সেগুলোর মধ্যে লিবার্টারিয়ান, গ্রিন, ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টির মতো দলগুলোকে কখনো কখনো প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী ঘোষণা করতে দেখা যায়। যদিও ওই প্রার্থীদের নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না এবং তারা নির্বাচনে বিজয়ীও হননি।

এবার মূল প্রার্থী কারা?
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে অতীতের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্রে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হয়ে এবার প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।

তার বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিজনেস টাইকুন ট্রাম্প এর আগেও নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।

অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমলা হ্যারিস এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়িয়েছেন। এর আগের নির্বাচনে তিনি জো বাইডেনের রানিং মেট হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি বাইডেন প্রশাসনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এবারও ওই একই পদে তার নির্বাচন করার কথা ছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগে জো বাইডেন নাটকীয়ভাবে নির্বাচনি দৌড় থেকে ছিটকে পড়ার পর কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। তার রানিং মেট হিসেবে মাঠে রয়েছেন আরেক ডেমোক্র্যাট নেতা টিম ওয়ালজ। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের দায়িত্বে রয়েছেন।

নির্বাচনে জিততে পারলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস হবেন প্রথম মার্কিন নারী প্রেসিডেন্ট। হিলারি ক্লিনটনের পর তিনি দ্বিতীয় নারী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়ছেন। আর তার রানিং মেট হিসেবে ওয়ালজ হবেন পরবর্তী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।

কিন্তু যদি তেমনটা না ঘটে তাহলে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সুযোগ পাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন তার রানিংমেট জেডি ভান্স। ২০২২ সালে রাজনীতিতে আসা ভান্স অল্প সময়ের মধ্যেই অন্যতম শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা হয়েছেন।

তার ব্যক্তিত্ব শ্রমজীবী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে ভেবেই তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ট্রাম্প মনোনীত করেছেন বলে মনে করেন অনেকেই।

প্রচারণার ইস্যু কোনগুলো?
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় দেশটির অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, অথনৈতিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সংকটগুলোও বেশ গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রথম যে বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, গর্ভপাত আইন, প্রজেক্ট-২০২৫, পররাষ্ট্র নীতি ছাড়াও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যুসহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন।

এক্ষেত্রে নির্বাচনে জিততে ‘অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি’ গড়ে তোলার বিষয়ে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন কমলা হ্যারিস। এছাড়া ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্রে আবাসনের খরচ কমানোর ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের প্রচারণার ইস্যু হিসেবে ‘প্রজেক্ট-২০২৫’ও বেশ আলোচিত হতে দেখা যাচ্ছে।

‘প্রজেক্ট-২০২৫’ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ডানপন্থীদের তৈরি একটি পরিকল্পনা, যেখানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়ানোসহ বিভিন্ন উগ্র-ডানপন্থী নীতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ওই প্রজেক্টকে বিপজ্জনক পরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করে কমলা হ্যারিস দাবি করেছেন যে, ট্রাম্প ওই প্রজেক্টে জড়িত আছেন।

ফলে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট এবার নির্বাচিত হলে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন বলে ভোটারদের সতর্ক করেছেন কমলা হ্যারিস। তবে ট্রাম্প অবশ্য ওই প্রজেক্টের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন।

দুইপ্রার্থীর প্রচারণায় দেশটির গর্ভপাত নীতির বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটরা গর্ভধারণের ‘নবম মাসে’ গর্ভপাতের অনুমতি দিতে চায় বলে দাবি করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প।

অন্যদিকে ট্রাম্পই দুই বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতিকে নিয়োগ করে গর্ভপাতের জাতীয় অধিকারকে বাতিল করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন কমলা হ্যারিস। উভয় প্রার্থীর ভোটের প্রচারণায় গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ প্রসঙ্গও গুরুত্ব পাচ্ছে। এই যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে কমলা হ্যারিস বলছেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয়’ সমাধানের পথে হাঁটলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ কখনোই শুরু হতো না। কমলা হ্যারিসকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ভাইস-প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করে ট্রাম্প এটাও বলছেন যে, ডেমোক্র্যাটরা নভেম্বরের নির্বাচনে জিতলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও বেঁধে যেতে পারে।

কারা ভোট দিতে পারেন?
এই নির্বাচনে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো মার্কিন নাগরিক নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে নর্থ ডাকোটা বাদে যুক্তরাষ্ট্রের বাকি ৪৯টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে আগেই ভোটার নিবন্ধন করা হয়। ভোটের আগেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

এমনকি বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরাও ভোটার নিবন্ধনে নাম লেখাতে পারেন। এক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালটে বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার জন্যও তারা আবেদন করতে পারেন। ভোটাররা কতক্ষণ ভোট দিতে পারবেন, সেটি অঙ্গরাজ্যগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে সাধারণত আগাম ভোটের সুযোগ দেওয়া হয়। যার ফলে তালিকাভুক্ত ভোটাররা নির্বাচনের দিনের আগেই তাদের ভোট দিতে পারেন।

ভোট বেশি পেলেই প্রেসিডেন্ট?
সাধারণত নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়লাভ করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থী বেশি সংখ্যক ভোটারের ভোট (পপুলার ভোট) পাওয়ার পরও অনেক সময় বিজয়ী নাও হতে পারেন।

এর কারণ দেশটিতে ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয় ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে বিশেষ একটি ব্যবস্থায়। এক্ষেত্রে জাতীয় স্তরের নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় স্থানীয়ভাবে অর্থাৎ প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ হলো একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবগুলো ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। দেশটিতে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮টি।

মাইন ও নেব্রাসকা- এই দুটি অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি ৪৮টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিয়ে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট পাবেন, তিনিই হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর বিজয়ী প্রার্থীর রানিং মেট হবেন দেশটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট।

সাধারণ ভোটারদের ভোটে পিছিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত পাঁচজন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যার মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ ডব্লিউ বুশও রয়েছেন।

ইলেকটোরাল কলেজ আসলে কী?
ইলেকটোরাল কলেজ হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত রাষ্ট্র ও কেন্দ্রীয় আইনের একটি জটিল ব্যবস্থা, যা দেশটির সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত। ‘কলেজ’ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী।

ইলেকটোরাল কলেজ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ইলেকটরস বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচকমণ্ডলী। প্রতি চার বছর পরপর এটি গঠন করা হয় এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বাছাই করেন।

কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেট বা অঙ্গরাজ্যে ইলেকটরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়: যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সিনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে।

ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি। সবচেয়ে বড় ছয়টি স্টেট হলো ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫), টেক্সাস (৪০), নিউইয়র্ক (২৯), ফ্লোরিডা (২৯), ইলিনয় (২০) এবং পেনসিলভানিয়া (২০)।

এই পদ্ধতির ফলে ছোট রাজ্যগুলোকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। যার অর্থ হচ্ছে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অবশ্যই পুরো দেশজুড়ে ভোট পেতে হবে। সাধারণত অঙ্গরাজ্যগুলো তাদের হাতে থাকা ইলেকটোরাল ভোট সেই প্রার্থীকেই দেয়, যিনি ওই অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েছেন।

ধরা যাক, টেক্সাসে একজন প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন, তাহলে ওই অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেকটোরাল ভোটের সবগুলো সেই প্রার্থীই পেয়ে যাবেন।

একটি অঙ্গরাজ্যে জয়ের ব্যবধান যদি বিরাট হয়ও তারপরেও বিজয়ী প্রার্থী ওই নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকটোরাল ভোটই পাবেন। ফলে সবগুলো অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে একজন প্রার্থী ভোটারদের ভোট বেশি পাওয়ার পরেও ইলেকটোরাল ভোট কম পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যেতে পারেন। ২০০০ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর এবং ২০১৬ সালে আরেক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটেছিল।

ইলেকটোরাল ভোটে ‘টাই’ হলে কী হবে?
ইলেকটোরাল ভোটে যদি কোনো প্রার্থী এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, সেক্ষেত্রে মার্কিন আইন সভার নিম্ন-কক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস ভোট দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। এক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভেতর থেকে একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাছাই করে থাকেন। বাকি দুইজন প্রার্থীর ভেতর থেকে একজনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেয় দেশটির সিনেট।

যদিও এরকম ঘটনা মার্কিন ইতিহাসে একবারই ঘটেছে। ১৮২৪ সালে এভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জন কুইনসি অ্যাডামস। তবে বর্তমানে অবশ্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দু’টির যে আধিপত্য রয়েছে, তাতে ওইরকম ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

নির্বাচনের ফলাফল কখন জানা যাবে?
বিভিন্ন রাজ্যে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে ভোটদান শুরু হবে। বাংলাদেশের স্থনীয় সময় অনুযায়ী এটি হবে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রগুলো রাজ্য ও কাউন্টির ওপর নির্ভর করে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হবে এবং শেষ ভোট বুধবার দিবাগত রাত ১টায় শেষ হবে।

সাধারণ নিয়ম হলো, যত পশ্চিমে যাওয়া হবে, সময় অঞ্চলের পার্থক্যের কারণে দেরিতে ভোট বন্ধ হবে। সময়ের ব্যবধানের কারণে এমনও হতে দেখা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা শুরু হয়ে গেলেও আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা তখনও ভোট দিচ্ছেন।

ভোট শেষ হওয়ার পরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে গণনা শুরু হবে। নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী কে, তা জানতে হয়তো কয়েকদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।

অনেক সময় ফলাফল জানতে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণী সাত রাজ্য-অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, উত্তর ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনের ফলাফলের জন্য পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ভোট গণনায় অতিরিক্ত সময়ের দরকার হয়েছিল ওই সময়। এছাড়া ডাকযোগে দেওয়া ভোট গণনা করার জন্য নির্বাচনের ফল জানতে আরও তিনদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

অন্যান্য সাম্প্রতিক নির্বাচনে ভোটারদের অপেক্ষা অনেক কম হয়েছে। ২০১৬ সালে যখন ট্রাম্প জয়ী হন, নির্বাচনের পরদিন পূর্বাঞ্চলীয় মান সময় তিনটার কিছুক্ষণ আগে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

২০১২ সালে, যখন বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেন, তখন ভোটের দিনই মধ্যরাতের আগে তার বিজয় অনুমান করা হয়েছিল।

তবে জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং আল গোরের মধ্যে ২০০০ সালের নির্বাচন একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছিল। সে বছর ৭ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ফ্লোরিডা রাজ্যের ভোট পুনঃগণনা প্রক্রিয়া শেষ করার পক্ষে ভোট দেয়। নির্বাচনে বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরে কী হয়?
নির্বাচনের পরপরই নতুন সরকার গঠন করা হয় না। বিজয়ীকে কিছুদিন সময় দেওয়া হয়, যাকে ‘রূপান্তরকালীন সময়’ বলা হয়ে থাকে। ওই সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাছাই করেন এবং পরিকল্পনা তৈরি করে থাকেন।

এরপর নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে নতুন বা পুননির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেক ও শপথ অনুষ্ঠান হয়। রীতি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

১৯৩৩ সালে হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২০তম সংশোধনীতে নির্ধারণ করে দেওয়া হয় যে, প্রেসিডেন্টের ওই অভিষেক অনুষ্ঠান হবে ২০ জানুয়ারি। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্টে অভিষেক হয়। এই অনুষ্ঠানের পরই নতুন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে যান তার চার বছরব্যাপী মেয়াদ শুরু করার জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে ১৯৫১ সালের আগ পর্যন্ত অবশ্য দেশটিতে দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনের মাধ্যমে একই ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি আরও যে নির্বাচন হচ্ছে
৫ নভেম্বরের নির্বাচনে সবার নজর যে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের দিকে থাকবে সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ওই নির্বাচনের মাধ্যমে মার্কিন ভোটাররা তাদের আইনসভার নতুন সদস্যদেরকেও বেছে নেবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভাকে বলে কংগ্রেস, যা মূলত দু’কক্ষবিশিষ্ট। এর নিম্নকক্ষকে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদ এবং উচ্চকক্ষকে সিনেট বলা হয়। কংগ্রেসের এই দুই ধরনের সদস্যের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হন দুই বছরের জন্য। এবারের নির্বাচনে মার্কিন নিম্নকক্ষের ৪৩৫টি আসনের সবগুলোতেই ভোট হবে।

অন্যদিকে সিনেট সদস্যদের মেয়াদ হয়ে থাকে ছয় বছর। তবে প্রতি দুই বছর পরপর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে এই নির্বাচনে সিনেটের ৩৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানা যাচ্ছে। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে এখন রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। অন্যদিকে সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে এবারও তারা উচ্চকক্ষে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার পাশাপাশি প্রতিনিধি পরিষদেরও নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছে।

মুসলিমদের ভোট যাবে কার পক্ষে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিম আমেরিকানরা এবার কোন পক্ষ নেবেন- এ প্রশ্নটি বেশ কয়েকদিন ধরে বেশ জোরালোভাবেই আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে, গাজা যুদ্ধ ও অন্যদিকে, লেবাননে সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতের কারণে এবারের নির্বাচনে মুসলিমরা কাকে বেছে নেবেন, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

 

যদিও সংখ্যার বিচারে মুসলমানরা মার্কিন জনসংখ্যার খুব বেশি নয়। মাত্র এক শতাংশ। কিন্তু মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার মতো তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোতে মুসলিমদের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। আর এই বছরের মুসলিম ভোটের ক্ষেত্রে মূল ইস্যু হলো- গাজা যুদ্ধ।

গাজার নির্মম ভয়ংকর যুদ্ধে বাইডেন-কমলা প্রশাসনের ভূমিকায় আমেরিকান মুসলমানরা হতাশ। ফিলিস্তিনিদের অমানবিক দুর্দশার জন্য ডেমোক্র্যাটদের প্রতি তাদের ঘৃণা রয়েছে।

অন্যদিকে, তারা ভোলেননি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা। ৯/১১ পরবর্তী সময়ে রিপাবলিকানদের ইসলামফোবিয়া অব্যাহত রাখার কথাও তাদের ভোলার কথা নয়।

নির্বাচনী জরিপ বলছে, প্রায় ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিক ভোট দেবেন কমলা হ্যারিসকে, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য মোটেই ভালো সংবাদ নয়। আমেরিকান মুসলিমদের মধ্যে ২০১৬ সালে ৬৫ শতাংশ হিলারি ক্লিনটনকে ও ২০২০ সালে ৮০ শতাংশ জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন। বারাক ওবামার ক্ষেত্রে এই অনুপাত ছিল ২০০৮ সালে ৮০ শতাংশ ও ২০১২ সালে ৯২ শতাংশ।

অনেকে মনে করছেন, কমলা হ্যারিসকে প্রত্যাখ্যানকারী মুসলিম আমেরিকানরা ট্রাম্পকে ভোট দিতে পারেন। বেছে নিতে পারেন তৃতীয় কোনো প্রার্থীকে অথবা ভোট দেওয়া থেকে পুরোপুরি বিরতও থাকতে পারেন। তবে মুসলিম আমেরিকানরা মনে করেন যে নির্বাচন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে ফেলা গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যানের শামিল।

নির্বাচনের ব্যালট পেপারে বাংলা ভাষা
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ব্যালট পেপারে ইংরেজির পাশাপাশি চারটি বিদেশি ভাষার অন্যতম হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বাংলা। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, নিউইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে বাংলাও। এশীয়-ভারতীয় ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলাই প্রথম ছাপা হলো নিউইয়র্কের ব্যালট পেপারে।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থা বোর্ড অব ইলেকশন্সের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য শাখার নির্বাহী পরিচালক মাইকেল জে রায়ান সোমবার (৫ নভেম্বর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

নিউইয়র্কের প্রধান শহর নিউইয়র্ক সিটিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে রায়ান বলেন, অভিবাসী ভোটারদের সুবিধার জন্য ব্যালট পেপারে ইংরেজির পাশাপাশি ৪টি ভাষা অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড অব ইলেকশন্স নিউইয়র্ক শাখা। এই ভাষাগুলো হলো চীনা, স্প্যানিশ, কোরিয়ান ও বাংলা।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যটি অধিবাসী অধ্যুষিত। দেশটির মোট অভিবাসীদের একটি বড় অংশ থাকেন নিউইয়র্ক সিটিসহ এই রাজ্যের বিভিন্ন শহরে।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গোটা নিউইয়র্কে লোকজন দুই শতাধিক ভাষায় কথা বলেন। এসবের মধ্যে হিন্দি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, তামিলসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষাও রয়েছে। কিন্তু সেসবের মধ্যে ভারতীয় ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে একমাত্র বাংলাকে।

নিউ ইয়র্কে বাংলাভাষী বহু মানুষের বাস। যাদের সিংহভাগ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রদেশে এক লাখেরও বেশি বাংলাভাষী মানুষ বসবাস করেন। নিউ ইয়র্কে বাঙালিদের বসবাস মূলত ব্রুকলিন, কুইনস ও ব্রঙ্কসে। ব্রুকলিনের কেনসিংটন এলাকার একাংশকে স্থানীয়েরা ‘ছোট বাংলাদেশ’ বলে ডেকে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রে যত বাঙালি বসবাস করেন, তাদের ৪০ শতাংশেরই বাস নিউইয়র্কে। সামগ্রিক ভাবে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন লাখেরও বাংলাদেশী। এই পরিস্থিতিতে মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশি ভোটারদের সুবিধার্থেই ব্যালটে বাংলা ভাষা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিউইয়র্ক প্রশাসন।

টিটিএন/এমএমএআর/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।