অভ্যুত্থানের পর প্রথমবার চীন যাচ্ছেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর প্রথমবারের মতো চীন সফরে যাচ্ছেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। চলতি সপ্তাহেই চীন সফরে গিয়ে একাধিক আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি অন্তত তিনটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গ্রেটার মেকং সাবরিজিয়ন অ্যান্ড আয়েয়াওয়াদি-চাও ফ্রায়া-মেকং ইকোনমিক কো-অপারেশন স্ট্র্যাটেজি’র (এসিএমইসিএস) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন মিন অং হ্লাইং। সেখানে ৬ ও ৭ নভেম্বর কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে করবেন তিনি।
ওই খবরে আরও বলা হয়েছে, চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অং হ্লাইং। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করবেন।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে জান্তা বিরোধীদের এক অপ্রত্যাশিত হামলায় পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে সামরিক বাহিনী। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা বন্ধ করে দিয়েছে চীন। এছাড়া বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত কিছু এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রফতানি স্থগিত করেছে বেইজিং।
মিয়ানমারে চীনের বেশকিছু কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো দেশটির মধ্যে দিয়ে যাওয়া প্রধান তেল ও গ্যাস পাইপলাইন। আরেকটি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির পরিকল্পনা। এছাড়া গাড়ি উৎপাদন ও বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাতু প্রতিবেশীর কাছ থেকে আমদানি করে থাকে বেইজিং।
বিশেষজ্ঞ ডেভিড ম্যাথেইসন বলেছেন, ‘অং হ্লাইং সেখানে গিয়ে চীনের সমর্থন পেলেও সাধারণ মানুষের কপালে ভালো কিছু জুটছে না। কেননা বেইজিং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, প্রস্তাবিত নির্বাচনের পরিকল্পনায় তাদের সমর্থন রয়েছে।’
আগামী বছর দেশে সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে জান্তা সরকার। এ উদ্দেশ্যে, গত মাসে দেশব্যাপী আদমশুমারি শুরু হয়। কিন্তু বিষয়টি তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে, কেননা দেশের বেশ বড় অংশের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই আর অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
চলতি বছরের আগস্টে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে অং হ্লাইংয়ের বৈঠক হয়। সেসময় মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, প্রস্তাবিত নির্বাচন ও আদমশুমারির জন্য প্রযুক্তিগত সবরকম সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং।
মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিডোতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর হতাশ হয়েছিলেন অনেকে। কেননা, বেইজিং তার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জান্তা সরকারের কর্মকাণ্ড প্রচ্ছন্নভাবে সমর্থন প্রকাশ করে। ফলে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আরও বড় একটি প্রতিবন্ধকতা উপস্থিত হতে যাচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে মিয়ানমার। বিশেষত চীনের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে, যেখানে জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে সামরিক বাহিনী। গত বছরের অক্টোবরে জান্তাবিরোধী যোদ্ধাদের তীব্র হামলার মুখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর এই হামলা চীনকে শঙ্কিত করে তুলেছে। এর ফলে মিয়ানমারের সাথে সীমান্তের কিছু অংশ বন্ধ ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে আমদানি বাতিল করেছে চীন।
মিয়ানমারে চীনের কৌশলগত অর্থনৈতিক বেশ কিছু স্বার্থ রয়েছে। যার মধ্যে আন্তঃদেশীয় প্রধান তেল ও গ্যাস পাইপলাইন ও বঙ্গোপসাগরে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরও রয়েছে চীনের।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ