সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস

রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর সত্য নয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৮ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
ফরাসি বিমান বাহিনীর ফাইটার জেট রাফাল

বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে অত্যাধুনিক ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমান ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে গার্ডিয়ান যে সংবাদ প্রকাশ করেছে তা সত্য নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

রোববার (২৭ অক্টোবর) প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস ফেসবুক পেজে জানানো হয়, প্রকাশিত ওই খবরটি সত্য নয় এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ধরনের কোনো চুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগত নয়।

দ্য সানডে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিষয়টি জানে এমন সূত্রে জানা গেছে, ফ্রান্স আশা করছে যে বাংলাদেশের নতুন সরকার বিমান বাহিনীকে আধুনিকীকরণের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চুক্তিটি চূড়ান্ত করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই চুক্তিকে গ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করায় আলোচনায় গতি এসেছে।

সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ২০১৭ সালের মার্চে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর (ডিজিডিপি) বিমানবাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও চারটির বিকল্পসহ আটটি নতুন মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফটের জন্য একটি দরপত্র জারি করে। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা উন্নত করা ও অ্যান্টি-সারফেস, মেরিটাইমসহ আক্রমণাত্মক কাউন্টার-এয়ার অপারেশন সক্ষমতা অর্জন করা।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ক্রয় চূড়ান্ত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। ফ্রান্সের রাফাল যুদ্ধবিমান ছাড়াও ইউরোপে তৈরি ইউরোফাইটার টাইফুনও এই ২৫০ কোটি ইউরোর চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

দ্য সানডে গার্ডিয়ানের দাবি, একটি বর্ণনায় উঠে এসেছে যে ভারতের কাছে যেহেতু রাফাল যুদ্ধবিমান রয়েছে, সেহেতু, ঢাকার উচিত রাফাল চুক্তি না করা। এই পরামর্শের সমর্থকরা বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো একই সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরশীলতা এড়াতে ঢাকার উচিত তার প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উৎস বৈচিত্র্যময় করা।

‘দ্বিতীয়ত, একই বিমান বেছে নেওয়াকে ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলের সঙ্গে খুব বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হতে পারে। তৃতীয়ত, যেহেতু ভারত এরই মধ্যে রাফাল জেট পরিচালনা করছে, তাই বাংলাদেশ এই বিমান নিলে যে খুব বেশি লাভবান হবে, তা নয়। কারণ ভারতের রাফালের সক্ষমতা ও সম্ভাব্য দুর্বলতা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকবে, যা ভবিষ্যতে যেকোনো সংঘর্ষ বা কূটনৈতিক স্থবিরতায় বাংলাদেশকে ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।’

দ্য সানডে গার্ডিয়ান এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য সামরিক বিমান ও ব্যবসায়িক জেটের ফরাসি নির্মাতা ড্যাসল্ট এভিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। খবরটি প্রেসে যাওয়া পর্যন্ত কেউই রিসিভ হয়নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ে পাঠানো অনুরূপ ইমেইলেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বিমানগুলো অবশ্যই নতুনভাবে তৈরি করতে হবে ও চুক্তি সই হওয়ার বছরের আগে এগুলোর নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি আরও লিখেছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ঢাকা সফর করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের পর ম্যাক্রোঁর এই সফরটি ছিল ৩৩ বছরের মধ্যে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রথম বাংলাদেশ সফর। তার ওই সফরের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল রাফাল যুদ্ধবিমানকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চাপ দেওয়া। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর পাননি তিনি।

এদিকে, এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস‌ ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত খবরটি সত্য নয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ধরনের কোনো চুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগত নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৯ সালে রাফাল ক্রয় চুক্তিটি ঢাকা ও প্যারিসের মধ্যে আলোচনার পর্যায়ে ছিল। করোনা মহামারির কারণে সেটি স্থবির হয়ে পড়ে। আলোচনা পুনরায় শুরুর জন্য বাংলাদেশ ফ্রান্সের কাছ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পায়নি।

এসএএইচ/এমইউ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।