তুরস্কের প্রতিরক্ষা সংস্থায় হামলা: নিহত ৫, আহত ২২
তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টার্কিশ অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজে (টুসাস) সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং ২২ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানী আঙ্কারার উত্তরে কাহরামানকাজান এলাকায় অবস্থিত টুসাসের সদর দপ্তরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ফুটেজে ঘটনাস্থলে ব্যাপক ধোঁয়া এবং আগুনের দৃশ্য দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জরুরি সেবা কর্মীরা। পরে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের এক পোস্টে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একটি হলুদ ট্যাক্সিতে তিনজন হামলাকারী স্থাপনার প্রবেশদ্বারে এসে নামে। এক বন্দুকধারী গুলি ছড়িতে ছুড়তে ভবনে প্রবেশ করেন। সেখানে নিরপত্তা বুথের একটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে নিরাপত্তাকর্মীরা আহত হন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন>>
- মোসাদের আর্থিক নেটওয়ার্কের প্রধান তুরস্কে গ্রেফতার
- ইসরায়েলকে থামাতে জাতিসংঘকে বলপ্রয়োগের আহ্বান এরদোয়ানের
- গাজা-লেবাননে গণহত্যা বন্ধ হওয়া উচিত: এরদোয়ান
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা ভবনের নকশার সঙ্গে পরিচিত ছিল এবং বিভিন্ন বহির্গমনে বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই সময় সংস্থাটির কর্মীরা কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন।
হামলার পেছনে কারা?
এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলার বুধবার রাতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। পাশাপাশি, তুরস্কের চরমপন্থী বামপন্থী সংগঠন ডিএইচপিকে-সি’কেও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।
পিকেকে গত চার দশক ধরে তুরস্কের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলা পিকেকে’র পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো প্রস্তুতি না থাকার ইঙ্গিত হতে পারে।
তুরস্ক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এই ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন। ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট তুরস্কের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকেও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনী এরই মধ্যে পিকেকে সদস্যদের লক্ষ্য করে সিরিয়া ও ইরাকে অভিযান চালাচ্ছে, যেখানে টুসাসের তৈরি ড্রোনগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। টুসাস তুরস্কের প্রতিরক্ষা, বিমান ও মহাকাশ শিল্পে অগ্রগামী একটি সংস্থা। এতে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী কাজ করেন।
অভিযান শেষে দুজন হামলাকারীকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েরলিকায়া। বর্তমানে পুরো এলাকাটি নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে এবং সেখানে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তুরস্কের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস হামলার বিষয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে।
সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/