তিন ঘণ্টার বৈঠকে অপমান, ৯ বছর পর সেই জাগুয়ারই কিনে নেন রতন টাটা
একটি জনপ্রিয় উক্তি রয়েছে, সাফল্যই শ্রেষ্ঠ প্রতিশোধ। রতন টাটার সঙ্গে এই উক্তিটি পুরোপুরি মিলে যায়। তার জীবনেও এমন মধুর প্রতিশোধের গল্প ছিল।
অটোমোবাইল সেক্টরে বিপ্লবী অবদানের জন্য পরিচিত ছিলেন রতন টাটা। ১৯৯০-এর দশকে তিনি তার স্বপ্নের প্রকল্প টাটা ইন্ডিকা চালু করেছিলেন। তবে এই প্রকল্প সফলতার মুখ দেখেনি। বিক্রি কম হওয়ায় টাটা গাড়ির সেক্টরটি বিক্রির বিষয়ে মনস্থির করেন রতন টাটা।
১৯৯৯ সালে টাটা গ্রুপ তাদের গাড়ির সেক্টরটি ফোর্ড মোটরসের কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েটে গিয়েছিলেন রতন টাটা ও তার কোম্পানির একটি প্রতিনিধিদল। ফোর্ডের চেয়ারম্যান বিল ফোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। তিন ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে টাটা অপমানিত হয়েছিলেন। কারণ ফোর্ড তাদের বলেছিলেন যে তারা গাড়ি সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং তাদের এই বিভাগ নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত ছিল না।
টাটা গ্রুপের একজন অভিজ্ঞ সদস্যের বরাত দিয়ে ফার্স্টপোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিল ফোর্ড তাদের বলেছিলেন যে, আপনারা কিছুই জানেন না, কেন আপনারা যাত্রীবাহী গাড়ির সেক্টরটি শুরু করলেন? তিনি আরও বলেন, টাটার গাড়ির সেক্টরটি কিনে নিয়ে তিনি তাদের উপকার করবেন।
এই অপমানের পর রতন টাটা সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি গাড়ির সেক্টরটি বিক্রি করবেন না এবং সে সময়ই তিনি ভারতে ফিরে আসেন। তিনি আগের চেয়ে আরও বেশি পরিশ্রম শুরু করেন এবং গাড়ির সেক্টরটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।
এরপর কেটে যায় ৯ বছর। ততদিনে পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে। ইস্পাত থেকে লবণ, তথ্য প্রযুক্তি থেকে শুরু করে প্রায় সর্বত্রই টাটা গোষ্ঠীর বিচরণ। এদিকে ভাগ্যের চাকা ঘুরে ফোর্ড কোম্পানির দেউলিয়া দশা। সে সময় ফোর্ড কোম্পানির ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন রতন টাটা। ২০০৮ সালে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ফোর্ড কোম্পানির আইকনিক জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার কিনে নেয় টাটা গ্রুপ।
যে বিল ফোর্ড বলেছিলেন যে, গাড়ি সম্পর্কে কিছু জানেন না রতন টাটা, তিনিই ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার কিনে বড় উপকার করলেন। বিল ফোর্ড ভেবেছিলেন, রতন টাটার হাতেও ব্যর্থ হবে জাগুয়ার। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই তা টাটা মোটরসের সবচেয়ে বিক্রিত গাড়িতে পরিণত হয়।
টিটিএন