শ্রীলঙ্কায় বামপন্থিদের বিস্ময়কর উত্থান যেভাবে হলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
দিশানায়েকের একটি নির্বাচনী সমাবেশে সমর্থকদের ভিড়। ফাইল ছবি: এএফপি

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন বামপন্থি নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরদিনই দেশ পরিচালনার ভার গ্রহণ করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে অনন্য এক রেকর্ডের মালিক হলেন দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে তিনিই প্রথম বামপন্থি নেতা, যিনি প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসলেন।

২০২২ সালে গণবিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালানোর দুই বছরেরও বেশি সময় পর ফের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেলো শ্রীলঙ্কা।

আরও পড়ুন>>

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন দিশানায়েকে। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। আর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে পেয়েছেন মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট।

ক্ষমতাচ্যুত রাজাপাকসে পরিবারের নবীন সদস্য হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন নামাল রাজাপাকসে। তবে লড়াইয়ে দাঁড়াতেই পারেননি তিনি। মাত্র ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন নামাল।

বামপন্থিদের অবিশ্বাস্য উত্থান

এবারের নির্বাচনে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের প্রার্থী ছিলেন জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) দলের প্রধান অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। এই জোট এর আগে কখনো শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলও ছিল না। দেশটির ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে এই জোটের আসন ছিল মাত্র তিনটি।

কিন্তু গণবিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেভিপির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ওই বিক্ষোভে সক্রিয় ভূমিকা ছিল দলটির। আন্দোলনের পর জেভিপি বৃহত্তর পরিবর্তনের ডাক দেয়। বিশেষ করে সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলটির অনড় অবস্থান জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে। দলের সঙ্গে বাড়তে দিশানায়েকের ব্যক্তিগত আবেদনও।

অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে।অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। ছবি: সংগৃহীত

একই সময়, রাজাপাকসেদের পতনের পর শ্রীলঙ্কার হাল ধরা প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের বিভিন্ন পদক্ষেপ সাধারণ মানুষকে রুষ্ট করে। তিনি মূলত অর্থনীতির চাকা সচল করতে গিয়ে বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নেন। আয়কর বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের ওপর করারোপ, ভর্তুকি কমানোর মতো সিদ্ধান্তগুলোর কারণে ভোটারদের কাছে অপ্রিয় বনে যান রনিল।

শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত কোনো কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ বিরোধী দলের ওপরও ভরসা রাখতে পারেনি সাধারণ মানুষ। আর রাজাপাকসে পরিবারের সদস্য নামালকে বিবেচনাতেই আনেননি বেশিরভাগ ভোটার। এ অবস্থায় চমক দেখায় মাক্সবাদী দল জেভিপি।

বামপন্থি দলটি একসময় সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে দুটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা। কিন্তু রাষ্ট্র এর চরম প্রতিশোধ নেয়। গণগ্রেফতার, নির্যাতন, অপহরণ ও গণহত্যায় দল সংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ নিহত হন। এর মধ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেবিরাসহ বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাও ছিলেন।

অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে জেভিপির পলিটব্যুরো সদস্য হন। দলও সহিংসতার পথ থেকে সরে আসে। শান্তির পথে বিপ্লব অর্জনের কথা ঘোষণা করে তারা ভোটে অংশ নিতে শুরু করে। যদিও বিগত সংসদে তাদের মাত্র তিনজন সংসদ সদস্য ছিলেন। কিন্তু এবার সবাইকে চমকে দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরকার গঠন করছে শ্রীলঙ্কার বামপন্থিরা।

বিশ্লেষকদের মতে, দিশানায়েকে সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে একটি বৃহত্তর জোট গড়ে তুলতে পেরেছেন। এটিই তাকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, নিউজওয়্যার
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।