গুজরাটের শহরকে নিজেদের বলে দাবি পাকিস্তানের, ভারতে বিতর্কের ঝড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:০৬ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
জুনাগড় শহরের প্রবেশদ্বার। ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ আলোচনায় উঠে এসেছে গুজরাটের জুনাগড়। কারণ, শহরটিকে নিজেদের অংশ বলে বহু পুরোনো দাবিকে আবারও খুঁচিয়ে তুলেছে ইসলামাবাদ। ওই অঞ্চলে ভারতের ‘অবৈধ দখলদারি’র নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ দাবি করেন, ১৯৪৮ সাল থেকে জুনাগড় ‘দখল’ করে রেখেছে ভারত।

এ বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান সব সময়ই স্পষ্ট বলেও দাবি করেছেন মুমতাজ। গত সপ্তাহে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, দেশভাগের সময়ে জুনাগড় পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। পরে অবৈধভাবে তা দখল করে ভারত। গোটা বিষয়টিকে ঐতিহাসিক এবং আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে পাকিস্তান। জুনাগড় পাকিস্তানের একটি অংশ এবং এই অংশ অবৈধভাবে দখল করে জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ভারত।

আরও পড়ুন>>

মুমতাজ দাবি করেছেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সর্বদা জুনাগড়ের বিষয়টি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মঞ্চে উত্থাপিত হয়ে আসছে। এ বিষয়ে ইসলামাবাদ একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, জুনাগড়কে ভারতের ‘অবৈধভাবে অধিকৃত’ জম্মু-কাশ্মীরের মতো একটি অমীমাংসিত এজেন্ডা হিসেবে বিবেচনা করে পাকিস্তান।

জুনাগড় নিয়ে পাকিস্তানের এমন দাবি নতুন নয়। ২০২০ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত বেশ কিছু অঞ্চলকে নিজেদের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছিল পাকিস্তান। সে দেশের মন্ত্রিসভা তাতে অনুমোদনও দিয়েছিল।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার তথ্যমতে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং লাদাখের কিছু অংশ ওই মানচিত্রে রাখা হয়েছিল। একই সঙ্গে, গুজরাটের জুনাগড় ও মানবগড় শহর এবং স্যার ক্রিক অঞ্চলও পাকিস্তানের অংশ বলে দাবি করা হয়েছিল।

২০২০ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদালোপের বর্ষপূর্তির ঠিক একদিন আগে এই নতুন মানচিত্র উন্মোচন করে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, এই মানচিত্র প্রত্যেক পাকিস্তানি নাগরিক এবং কাশ্মীরের মানুষের আশার প্রতীক।

আরও পড়ুন>>

চার বছর আগে পাকিস্তান ওই রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশের পর ভারত সেটিকে ‘অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছিল। জুনাগড়কে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করাকেও পাকিস্তানের ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ পোষণ বলে উল্লেখ করেছিল নয়াদিল্লি।

অন্যদিকে, ইসলামাবাদের দাবি ছিল, জুনাগড়ের শেষ নবাব মোহম্মদ জাহাঙ্গীর খান চাইতেন, শহরটি যেন পাকিস্তানেরই অংশ হয়। করাচিতে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে জাহাঙ্গীর নাকি বলেছিলেন, জুনাগড় পাকিস্তানের অংশ।

তিনি বলেছিলেন, ১৯৪৭ সালে আমার দাদা পাকিস্তানের অংশ হতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে এর জন্য তাকে রাজত্ব হারাতে হয়েছিল। আমরা এখনো আমাদের রাজ্যের (জুনাগড়) জন্য লড়াই করছি। বিষয়টি জাতিসংঘে বিচারাধীন।

আনন্দবাজারের তথ্যমতে, জাহাঙ্গীরের দাদা নবাব মোহম্মদ মহব্বত খান (তৃতীয়) চেয়েছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু প্রজারা। তখন অশান্তি ঠেকাতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নির্দেশে জুনাগড়ের কাছে পৌঁছায় ভারতীয় সেনা।

এরপর সপরিবারে করাচি চলে যান মহব্বত খান। আর ১৯৪৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় জুনাগড়কে।

এই শহরটিকে পাকিস্তানের অংশ দেখিয়ে বছর চারেক আগে মানচিত্র প্রকাশ করেছিলেন ইমরান খান। সরকার বদলের পর আবারও বিষয়টি চাঙ্গা হয়েছে। শাহবাজ শরীফের সরকারও দাবি করেছে, ভারত জুনাগড়কে ‘অবৈধভাবে’ দখল করে রেখেছে, এটি পাকিস্তানেরই অংশ।

সূত্র: দ্য ন্যাশন, আনন্দবাজার পত্রিকা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।