বাঁধ ও ব্যারাজের মধ্যে পার্থক্য কী?

খান আরাফাত আলী
খান আরাফাত আলী খান আরাফাত আলী , সহ -সম্পাদক , আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ২৯ আগস্ট ২০২৪
কাপ্তাই বাঁধ (বামে) ও ফারাক্কা ব্যারাজ (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

বাঁধ ও ব্যারাজ হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো যা নদী এবং জলাশয়ের পানি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য নির্মিত হয়। যদিও উভয় কাঠামোর উদ্দেশ্য অনেকটা একই, যেমন- সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সংরক্ষণ; তবে এগুলোর গঠন, কার্যকারিতা এবং পরিবেশগত প্রভাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।

১. সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য 

-বাঁধ হলো একটি বৃহৎ কাঠামো, যা নদী বা প্রবাহের ওপর নির্মিত হয় এবং পানি আটকে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাঁধ নির্মাণের ফলে সাধারণত একটি জলাশয়, হ্রদ বা জলাধারও তৈরি হয়। বাঁধের প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পানি সংরক্ষণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচ। বাঁধ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করতে পারে, যা পার্শ্ববর্তী পরিবেশে বড় পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন>>

- ব্যারাজ হলো একটি নিম্ন স্তরের কাঠামো, যা নদীর ওপর নির্মিত হয়। সাধারণত সেচের জন্য খালে পানি প্রবাহিত করতে বা পানির স্তর নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ব্যারাজ তৈরি করা হয়। ব্যারাজ স্বাভাবিক অবস্থায় পানিকে তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেয় এবং ওপরের দিকে পানির স্তর নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যারাজের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সেচ, সুপেয় পানি সরবরাহ এবং নদীপথে নাব্য বজায় রাখা।

jagonews24চীনের থ্রি গর্জেস বাঁধ। ছবি: চায়না ডেইলি

২. গঠন ও নকশা

- বাঁধের আকার সাধারণত বিশাল হয়ে থাকে। এটি কংক্রিট, মাটি, পাথর বা এগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি হয়। বাঁধের নকশা এমনভাবে করা হয়, যাতে তা জলাশয়ে জমা হওয়া পানির বিশাল চাপ সহ্য করতে পারে। বাঁধের উচ্চতায় ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। কিছু বাঁধ কয়েকশ’ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে।

- ব্যারাজ তুলনামূলক কম উচ্চতা ও আকারের হয়। এটি একাধিক গেট বা স্লুইস নিয়ে গঠিত, যা পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য খোলা বা বন্ধ করা যেতে পারে।

৩. পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ

- বাঁধ নদীর প্রবাহকে সম্পূর্ণরূপে আটকে একটি জলাশয় তৈরি করে। এটি নদীর নিম্নভাগে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং নির্দিষ্ট সময়ে পানি নির্গমনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাঁধে জমা পানির সম্ভাব্য শক্তিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়।

- ব্যারাজ স্বাভাবিক অবস্থায় নদীর প্রবাহকে অবাধে চলতে দেয়। ব্যারাজের গেটগুলো এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যাতে ওপরের দিকে একটি নির্দিষ্ট পানির স্তর বজায় থাকে, যা সেচ বা সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য অপরিহার্য। ব্যারাজের পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধের তুলনায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে কম ব্যাহত করে।

প্রকাশম ব্যারেজভারতের প্রকাশম ব্যারেজ। ছবি: সংগৃহীত

৪. পরিবেশগত প্রভাব

- বাঁধ নির্মাণের ফলে পরিবেশের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে। এটি মানুষের স্থানচ্যুতি, বৃহৎ এলাকাজুড়ে জমি নিমজ্জিত হওয়া এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। নদীর প্রবাহে পরিবর্তনের ফলে মাছের প্রজনন, পলি প্রবাহ এবং সামগ্রিকভাবে নদীর স্বাস্থ্য প্রভাবিত হতে পারে। এছাড়াও, বাঁধের কারণে সৃষ্ট বড় জলাশয় বন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলকে নিমজ্জিত করতে পারে।

- ব্যারাজের পরিবেশগত প্রভাব বাঁধের তুলনায় কম। এটি যেহেতু স্বাভাবিক অবস্থায় পানির প্রবাহকে অবাধে চলতে দেয়, তাই সেটি বড় জলাশয় তৈরি করে না বা নদীর বাস্তুতন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে না। তারপরও, ব্যারাজ মাছের প্রজনন এবং পলি প্রবাহে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে, তবে বাঁধের তুলনায় এর মাত্রা কম।

৫. প্রয়োগ এবং উদাহরণ

- বাঁধ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন- জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, সেচ, পানি সরবরাহ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ। বিশ্বের কিছু বিখ্যাত বাঁধের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হুভার বাঁধ, চীনের থ্রি গর্জেস বাঁধ, মিশরের আসওয়ান উচ্চ বাঁধ ও বাংলাদেশের কাপ্তাই বাঁধ।

- ব্যারাজ প্রধানত সেচের জন্য পানি সরবরাহ করা, নদীপথে নাব্য বজায় রাখা এবং নির্দিষ্ট এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ব্যারাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজ, যা গঙ্গা নদী থেকে পানি সরিয়ে দেয় এবং নেদারল্যান্ডসের ডেল্টা ওয়ার্কস, যা সামুদ্রিক বন্যা থেকে রক্ষা করে।

সংক্ষেপে বাঁধ ও ব্যারাজের পার্থক্য-

  • বাঁধ হলো নদীর প্রবাহের সঙ্গে সমকোণে স্থাপিত প্রতিবন্ধক এবং পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল স্থাপনা। অন্যদিকে, ব্যারাজ হলো নদীর পানিকে একাধিক গেইট দিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবাহিত করা।
  • বাঁধগুলো সাধারণত ব্যারাজের চেয়ে অনেক বড় হয়। কারণ সেগুলো প্রচুর পরিমাণে পানি ধরে রাখার জন্য নকশা করা হয়েছে।
  • বাঁধগুলো সাধারণত দীর্ঘ, উঁচু, বাঁকা প্রাচীরের মতো আকৃতির হয়। অন্যদিকে, ব্যারাজ সাধারণত ছোট এবং আয়তাকার হযয়ে থাকে।
  • বাঁধগুলো পানির প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। বিপরীতে, ব্যারাজগুলো তাদের মধ্য দিয়ে কিছু পানি প্রবাহিত হতে দেয়।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে এআই’র সাহায্য নেওয়া হয়েছে)

কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।