পালিয়ে যাওয়ার আগে শেষ কয়েক ঘণ্টা কেমন ছিল শেখ হাসিনার?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০০ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০২৪
শেখ হাসিনা/ ছবি: সংগৃহীত

শেষ পর্যন্ত বলপ্রয়োগ করে হলেও ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভের চাপ এতটাই তীব্র ছিল যে তার ঢেউ আর তিনি সামলাতে পারেননি। প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা একজন নেতাকে এভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে সেটা অনেকে ধারণাই করতে পারেননি।

গত সোমবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পরই ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কোনো নেতা এভাবে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হননি।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্তই নিতে পেরেছেন। আর কয়েক ঘণ্টা দেরি হলেই তিনি হয়তো দেশ থেকে পালাতে পারতেন না। এমনকি তিনি হয়তো গণভবন থেকেও বের হতে পারতেন না। কারণ তিনি দেশ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গণভবনে সাধারণ মানুষের স্রোত দেখা যায়। সে সময় লাখ লাখ মানুষ গণভবনের ভেতরে প্রবেশ করে।

এর আগে রোববার সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাতে প্রায় ১০০ জন নিহত হন। অসংখ্য পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছিলেন। সেদিন বিকেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও উপদেষ্টা শেখ হাসিনাকে জানান যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিক্ষোভারীদের প্রতিরোধের মুখে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতারা পিছু হটেছে।

কিন্তু শেখ হাসিনা পরিস্থিতি মানতে নারাজ ছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন, ক্ষমতা প্রয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা তাকে ধারণা দেন যে, এটি আর সামাল দেওয়া যাবে না। তারপরই তিনি পদত্যাগ করার মানসিক প্রস্তুতি নেন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসিকে বলেন, রোববার থেকেই তার মা পদত্যাগের কথা চিন্তা করছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামরিক বাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, শেখ হাসিনা কখন পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন এবং কখন হেলিকপ্টারে উঠেছেন সেটি কেবল জানতেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট এবং সেনা সদরের কিছু ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা। পুরো বিষয়টি করা হয়েছিল বেশ গোপনে।

সেনাবাহিনী সূত্রে বিবিসি জানতে পেরেছে, সোমবার বেলা ১১টার মধ্যেই শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে গেছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের হেলিকপ্টারে তিনি ত্রিপুরার আগরতলায় পৌঁছান। এরপর ভারতের বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দিল্লি পৌঁছান।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, শেখ হাসিনা তার হাতে দুটি সিদ্ধান্ত রেখেছিলেন। দেশ ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারেও প্রস্তুতি ছিল এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলপ্রয়োগ করেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা চাননি যে, দেশজুড়ে আরও হতাহতের ঘটনা ঘটুক। রোববার দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষ এবং বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ের সৈনিক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। সে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন যে পরিস্থিতি ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

সোমবার সকাল থেকে গণভবনমুখী সবগুলো রাস্তায় অনেক দূর পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অবস্থান ছিল। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা যাতে নিরাপদে তেজগাঁও বিমানবন্দরে ঢুকতে পারেন সেজন্য এ ব্যবস্থা রাখা হয়।

অন্যদিকে বেলা ১১টার দিকে কিছু সময়ের জন্য দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার গতিবিধি সম্পর্কে যাতে কোনো খবরা-খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে ওঠার পর থেকেই ইন্টারনেট সংযোগ পুনরায় সচল করা হয়। এর আগে শেখ হাসিনা সকালে তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ প্রধানের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন।

শেখ হাসিনা এভাবে হুট করেই পালিয়ে যাওয়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কারফিউ বলবৎ রাখতে সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালাবেন না।

সেনাপ্রধান পরদিন সকালে শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে যান। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানান, দেশজুড়ে যে কারফিউ ডাকা হয়েছে তা বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী অপারগ। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে।

ওই ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি সেনাবাহিনীর আর সমর্থন ছিল না- বিষয়টি তখন একেবারেই পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যকার অনলাইন বৈঠকের বিশদ বিবরণ এবং শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া বার্তার বিষয়ে আগে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।