সরে দাঁড়ালেন বাইডেন, কমলা হ্যারিসের নতুন যাত্রা
যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী নভেম্বরে। এতদিন পর্যন্ত এটা নিশ্চিত ছিল যে, পরবর্তী এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ডেমোক্র্যাট দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ানোর আকস্মিক ঘোষণা দেন জো বাইডেন। একই সঙ্গে নতুন প্রার্থী হিসেবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানান তিনি। সে কারণে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে নির্বাচনে লড়বেন কমলা হ্যারিস। ফলে নতুন এক যাত্রা শুরু হলো এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের।
তবে বাইডেন এবং একাধিক শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতার সমর্থন পেলেও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াইয়ে মনোনীত হননি কমলা হ্যারিস। এখন তার দলের কাছ থেকে এই মনোনয়ন অর্জন করার বিষয়টা যদি সহজ হয়েও যায় তারপরেও হ্যারিসের সামনে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ এখনও আসা বাকি। এই চ্যালেঞ্জ হলো নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করা।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপ বলছে, কমালা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন। ঠিক যে অবস্থানে জো বাইডেন নিজেকে দেখতে পেয়েছিলেন তার প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার মতো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার করার আগে। তবে ছবিটা বদলাতে পারে যদি আমরা দুই প্রার্থীর মধ্যে এই তুলনাকে অনুমিত অবস্থা থেকে বাস্তবের ময়দানে নিয়ে যাই।
এই বিষয়টা ঠিক যে গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রার্থী হিসাবে বাইডেনের ফিটনেস, নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা এবং তাকে নিয়ে ওঠা অন্যান্য প্রশ্নকে সামাল দিতে গিয়ে দলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তারপর এই নতুন অবস্থান (কমালা হ্যারিসের নাম প্রস্তাব) ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে নতুন শক্তি জুগিয়েছে।
দলের শীর্ষস্থানীয় সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সকলেই প্রায় মনোনয়নের বিষয়ে হ্যারিসের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন। প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসাবে মনে করা হয়। তিনিও এই তালিকায় রয়েছেন।
নভেম্বর মাসের নির্বাচনে যে একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যাবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের কাছে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ‘বিদ্বেষ’কে ‘পুঁজি’ হিসাবে ব্যবহার করা, প্রধান সুইং স্টেটগুলোতে মধ্যপন্থী ভোটারদের আকৃষ্ট করা এবং ডেমোক্র্যাটিক বেসকে শক্তিশালী করে তোলা।
মূলত ‘সুইং স্টেট’ বা ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট’ হলো এমন কয়েকটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য যেগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর জয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কমালা হ্যারিসের প্রচারণা শিবিরের তথ্য অনুযায়ী, জো বাইডেনের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভাইস প্রেসিডেন্ট নতুন অনুদান হিসেবে ৮ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছেন যা এবারের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর একদিনে সংগ্রহ করা অনুদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এর পাশাপাশি বাইডেন-হ্যারিসের তহবিল থেকে ‘উত্তরাধিকার সূত্রে’ পাওয়া প্রায় ১০ কোটি ডলার কমলা হ্যারিসকে তার আসন্ন নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটা মজবুত আর্থিক ভিত্তি দিয়েছে।
এখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি আনুষ্ঠানিকভাবে তার দলের মনোনয়ন পান তাহলে এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা তাদের প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে যে সবচেয়ে কার্যকর আক্রমণ চালিয়ে এসেছিল তার একটা মোক্ষম উত্তরও দিতে পারবেন। এবং সেটা হলো প্রার্থীর বয়স।
গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প তার প্রচারের সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন ‘দুর্বল’ এবং ‘সহজেই বিভ্রান্ত’ হয়ে পড়েন এমন অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন।
জুন মাসের শেষের দিকে একটি বিতর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সক্ষমতার ওপর এই আক্রমণ আরও তীব্র হয়। দলের অন্দরেও প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ৮১ বছরের জো বাইডেনের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। কমলা হ্যারিসের বয়স ৫৯ বছর। পূর্ণ উদ্যমী হয়ে তিনি প্রচারের ময়দানে নামবেন বলেই অনুমান করা যেতে পারে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প এতদিন যে বয়সের বিষয়কে সামনে রেখে বাইডেনকে আক্রমণ করে এসেছিলেন তার একটা মোক্ষম জবাব দিতে পারবেন।
শুধু তাই নয় এই বয়সের বিষয়টাকেই তিনি চাইলে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এছাড়া কমলা হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে সক্ষম হতে পারেন, যারা সাম্প্রতিক সময়ে বাইডেনের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন বলে জনমত জরিপে উঠে এসেছিল।
টিটিএন