মার্কিন বিধি-নিষেধের শঙ্কা, চিপ কোম্পানির শেয়ারের পতন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩০ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত

চীনের সেমিকন্ডাক্টর সরঞ্জাম রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধ আরও কঠোর হতে পারে এমন খবরে বিশ্বব্যাপী চিপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের পতন শুরু হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের কারণে তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় চিপ কোম্পানি টিএসএমসির শেয়ারের দাম কমতে শুরু করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষার জন্য দেশটির উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থ দেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি কোম্পানি নাসডাকের সূচক বুধবার শেষের দিকে ২ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। ইউরোপ এবং এশিয়াতেও চিপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমতে দেখা গেছে। টেকনালাইসিস রিসার্চের প্রধান বিশ্লেষক বব ও’ডোনেল বলেছেন, নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, আমি মনে করি আমরা যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিধিনিষেধ বাড়াতে দেখব। যদিও তারা এটাকে কতদূর নেবে এটাই বড় প্রশ্ন।

বৃহস্পতিবার এশিয়ায় তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় চিপ কোম্পানি টিএসএমসির শেয়ারের প্রায় তিন শতাংশ লেনদেন কমেছে। অপরদিকে সেমিকন্ডাক্টর সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক টোকিও ইলেক্ট্রনের লেনদেন কমেছে প্রায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। বুধবার নিউইয়র্কে এনভিডিয়ার লেনদেন কমেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং এএমডির শেয়ারের লেনদেন ১০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এছাড়া ইউরোপে এএসএমএল-এর লেনদেন কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ।

তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড টিএসএমসি। এটি চুক্তিভিত্তিতে বিশ্বের অনেক কোম্পানির জন্য চিপ তৈরি করে। অ্যাপল ও এনভিডিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিপ সরবরাহকারী কোম্পানি টিএসএমসি। বুধবার সকালে তাদের শেয়ারের দাম কমেছে প্রায় ২ শতাংশ।

১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি এখন শীর্ষদের তালিকায় থেকে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজ করছে। বিশ্বের বৃহত্তম চুক্তিভিত্তিক চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং চীনে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সর্বোচ্চ সম্প্রসারণ নীতি চালিয়ে যাচ্ছে।

বুধবার ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনের পরই বিভিন্ন দেশে চিপ কোম্পানির শেয়ারের পতন শুরু হয়। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, মার্কিন সরকার চীনের সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও এএসএমএল এবং টোকিও ইলেক্ট্রনের মতো সংস্থাগুলো দেশটিকে উন্নত চিপ প্রযুক্তি সরবরাহ করতে থাকে। তবে এ বিষয়ে ওই দুই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বাইডেন প্রশাসন এর আগে উন্নত চিপ প্রযুক্তিতে চীনের হস্তক্ষেপে সীমাবদ্ধতা আনার পদক্ষেপ নেয়। গত অক্টোবরে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত উন্নত সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত চিপ উত্পাদন করে থাকে তাইওয়ান।

মেমরি চিপ প্রযুক্তি কোম্পানি নিউমোন্ডার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কো মেজগার বলেন, বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু এ ধরনের মন্তব্যের পরেও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক প্রবণতা স্পষ্টতই বেড়েই চলেছে।

ব্লুমবার্গ বিজনেস উইককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, আমি তাইওয়ানের মানুষদের ভালো করে জানি। তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। তারা আমাদের চিপ ব্যবসার ১০০ শতাংশই নিয়ে গেছেন। আমি মনে করি, তাইওয়ানের উচিত প্রতিরক্ষার জন্য আমাদের অর্থ দেওয়া। আপনারা জানেন, একটি বিমা কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কোনো পার্থক্য নেই। তাইওয়ান আমাদের কিছুই দেয় না।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত ২৫ জুনের ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে গত মঙ্গলবার। আধুনিক চিপ তৈরিতে টিএসএমসি বেশ এগিয়ে রয়েছে। তাদের তৈরি চিপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে স্মার্টফোন ও যুদ্ধবিমানেও ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তাইওয়ানকে ঘিরে কোনো সংঘাত হলে তা বিশ্ব অর্থনীতিকে বেকায়দায় ফেলবে।

তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমর্থক হলো যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র সরবরাহকারীও। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই। অপরদিকে তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে চীন। অন্যদিকে এই দাবি অস্বীকার করে আসছে তাইওয়ান। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।